প্রকাশিত: : জুলাই ১০, ২০২৫, ০১:১৭ এএম
ইউক্রেন যুদ্ধ শুরুর পর গত তিন বছরে রাশিয়া প্রায় ৫০ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের দেশি-বিদেশি সম্পদ দখল করেছে, যা দেশটির অর্থনীতিতে বড় ধরনের পরিবর্তনের ইঙ্গিত দিচ্ছে। গবেষকেরা এই প্রবণতাকে ‘ফোর্ট্রেস রাশিয়া’ মডেলের উত্থান হিসেবে দেখছেন, যেখানে যুদ্ধকালীন পরিস্থিতিকে কেন্দ্র করে রাষ্ট্রের নিয়ন্ত্রণ বেড়েছে এবং ব্যবসায়িক স্বাধীনতা কমেছে।
গবেষণা সংস্থা এবং মস্কোভিত্তিক আইন ফার্ম এনএসপির বরাত দিয়ে জানানো হয়েছে, ইউক্রেন আক্রমণের পর হাজারেরও বেশি পশ্চিমা প্রতিষ্ঠান রাশিয়ায় তাদের কার্যক্রম গুটিয়ে নেয়। ম্যাকডোনাল্ডস, মার্সিডিজ বেঞ্জসহ অনেক কোম্পানি তাদের শাখা রুশ ব্যবস্থাপকের হাতে তুলে দেয় বা বিনিময় ছাড়াই রেখে যায়।
প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন একাধিক আদেশে এই সম্পদ দখলের বৈধতা দিয়েছেন। এর ফলে জার্মানির ইউনিপার ও ডেনমার্কের কার্লসবার্গের মতো প্রতিষ্ঠান ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। শুধু বিদেশি নয়, দেশীয় অনেক বড় কোম্পানির ওপরও রাষ্ট্র মালিকানা দাবি করেছে। কেউ দুর্নীতির অভিযোগে, কেউ কৌশলগত কারণে বা ব্যবস্থাপনার দুর্বলতার অজুহাতে সম্পদ হারিয়েছে।
উদাহরণ হিসেবে রয়েছে উজুরালজোলোটো নামে একটি স্বর্ণখনি কোম্পানি, যার প্রধান বিনিয়োগকারী কনস্তানতিন স্ত্রুকভ বর্তমানে সরকারের নজরে।
রাশিয়ার অর্থনৈতিক ইতিহাস বলছে, ১৯৯১ সালে সোভিয়েত ইউনিয়ন ভাঙার পর দেশটি মুক্তবাজার অর্থনীতির দিকে এগোতে চেয়েছিল। তবে ৯০ দশকের দুর্নীতি ও অর্থনৈতিক বিশৃঙ্খলা সে প্রচেষ্টা ব্যাহত করে। পুতিন ২০০০-এর দশকে কিছু সংস্কার এনেছিলেন এবং অর্থনীতির আকার বাড়িয়েছিলেন। কিন্তু ২০১৪ সালে ক্রিমিয়া দখলের পর আরোপিত নিষেধাজ্ঞা রাশিয়ার অর্থনীতিকে বড় ধাক্কা দেয়।
২০২৪ সালে রাশিয়ার জিডিপি দাঁড়িয়েছে ২.২ ট্রিলিয়ন ডলার, যা ইউরোপীয় ইউনিয়ন, চীন কিংবা যুক্তরাষ্ট্রের তুলনায় অনেক ছোট।
পুতিন দাবি করছেন, পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞার কারণে রাশিয়া এখন নিজস্ব শিল্প খাত গড়ে তুলছে এবং ‘পুরনো বিশ্বায়ন মডেলের’ পরিবর্তে নতুন উন্নয়ন মডেলের পথে হাঁটছে। তবে বিশ্লেষকেরা বলছেন, এই মডেল রাষ্ট্রীয় নিয়ন্ত্রণ বাড়াচ্ছে এবং বেসরকারি বিনিয়োগকারীদের মধ্যে অনিশ্চয়তা তৈরি করছে।