প্রকাশিত: : জুলাই ৮, ২০২৫, ০১:২৫ এএম
ভারতে আবারও নতুন করে ধর্ম ও জ্যোতিষশাস্ত্রের প্রতি আগ্রহ দেখাচ্ছে তরুণ প্রজন্ম, বিশেষ করে জেনারেশন জেড বা জেন-জি। একসময় যেগুলো কুসংস্কার বলে উড়িয়ে দেওয়া হতো, এখন সেগুলো তাঁদের জীবনের অংশ হয়ে উঠেছে। এই প্রবণতার ফলে ভারতের ধর্মীয় ও আধ্যাত্মিক অর্থনীতি রীতিমতো বিস্ফোরণ ঘটিয়েছে - যার বর্তমান বাজারমূল্য প্রায় ৭ লাখ কোটি টাকা।
গুরুগাঁওয়ের সংখ্যাতত্ত্বভিত্তিক জ্যোতিষ প্রতিষ্ঠান ‘নুম্রো ভানির’ জ্যোতিষী সিদ্ধার্থ এস কুমার জানাচ্ছেন, তিনি প্রতি মাসে ১০০-র বেশি ক্লায়েন্ট পরামর্শ দেন, যাঁদের বড় অংশের বয়স ২৪ থেকে ৩৫ বছরের মধ্যে। সবচেয়ে কম বয়সী ক্লায়েন্ট মাত্র আট বছর! বেশিরভাগই প্রেম, আত্মপরিচয় কিংবা মানসিক বিভ্রান্তি নিয়ে আসেন তাঁর কাছে।
তরুণদের মধ্যে আত্ম-অনুসন্ধান ও মানসিক স্থিতির খোঁজে ধর্ম-জ্যোতিষে ঝোঁক বাড়ছে। কেউ জানতে চান জীবনের উদ্দেশ্য, কেউ আবার আবেগের টানাপোড়েনের কারণ বুঝতে চান। বাস্তবতা থেকে সাময়িক মুক্তি কিংবা অভ্যন্তরীণ বিশৃঙ্খলার ব্যাখ্যা খোঁজার এই প্রবণতায় সহায়তা করছে প্রযুক্তি, এআই ও সোশ্যাল মিডিয়া।
নুম্রো ভানির ২০২৪ সালের এক সমীক্ষা বলছে, ৫১ শতাংশ তরুণ প্রতিদিন জ্যোতিষীয় অন্তর্দৃষ্টি খোঁজেন, ৮৮ শতাংশ অন্তত সপ্তাহে একবার রাশিফল পড়েন এবং ৭৫ শতাংশ প্রেমঘটিত বিষয়ে জ্যোতিষশাস্ত্রের ওপর নির্ভর করেন।
এআই-ভিত্তিক অ্যাপ ‘অ্যাস্ট্রো টক’ ও ‘অ্যাস্ট্রো ভেদ’-এর মতো প্ল্যাটফর্ম এখন ডিজিটাল রাশিফল ও ম্যাচ-মেকিং পরিষেবা দিচ্ছে। অনলাইন জ্যোতিষশাস্ত্রের বাজার ২০২৫ সালের মধ্যে ৬২০০ কোটি রুপির বেশি ছাড়িয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। কোভিড-১৯ পরবর্তী সময় এই প্রবণতাকে আরও জোরদার করেছে।
তরুণদের উপস্থিতি কেবল ডিজিটালেই নয়, বাস্তব অনুষ্ঠানেও বাড়ছে। সদ্য সমাপ্ত কুম্ভমেলায় অংশ নিয়েছেন ৪০ কোটির বেশি মানুষ, যার বড় অংশই তরুণ। ধর্ম এখন কেবল মন্দিরে যাওয়া নয় - ভার্চুয়াল পূজা, অনলাইন তীর্থযাত্রা ও ডিজিটাল জ্যোতিষের অংশও হয়ে উঠেছে।
জেন-জিরা ধর্ম ও আধ্যাত্মিকতা নিয়ে খোলাখুলি কথা বলছে। ধূপকাঠি, রত্নপাথর, জ্যোতিষীয় রুটিন - সবই তাঁদের পরিচয়ের অংশ হয়ে উঠেছে। অনেকেই কর্মফল বা গ্রহ-নক্ষত্রের অবস্থান অনুযায়ী সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন।
অ্যাস্ট্রো শিওর এআই-এর সিইও ভানিয়া মিশ্র বলেন, এই ধারাটি ফিরেই আসছে না, এটি এখন নতুন প্রজন্মের ফোমো। ভবিষ্যতে হয়তো মানুষ জিজ্ঞেস করবে না ‘সপ্তাহান্তে কোথায় ঘুরতে গিয়েছিলে?’, বরং বলবে - ‘তোমার গ্রহের অবস্থা ঠিক করেছ তো?’
ইনস্টাগ্রামে আধ্যাত্মিক গুরু প্রেমানন্দ গোবিন্দ শরণ ও অনিরুদ্ধাচার্য মহারাজের (ওরফে পুকি বাবা) মতো প্রভাবশালীরা লক্ষ লক্ষ তরুণ অনুসারীদের ধর্ম ও আধ্যাত্মিকতায় আকৃষ্ট করছেন। সেলিব্রিটি দম্পতি বিরাট কোহলি ও আনুশকা শর্মাও তাঁদের বিশ্বাসের কথা খোলাখুলি বলছেন, যা এই প্রবণতাকে আরও জনপ্রিয় করছে।
জ্যোতিষী সিদ্ধার্থ বলছেন, জেন-জি ধর্মকে নতুন আঙ্গিকে দেখছে - ‘ট্র্যাডিশন মাইনাস ডগমা’। তাঁরা প্রাচীন বিজ্ঞানকে ডিজিটাল মাধ্যমে নতুন করে জীবন্ত করে তুলছেন। এমনকি পশ্চিমের দেশগুলোর মধ্যেও এখন ভারতীয় জ্যোতিষশাস্ত্রের প্রতি আগ্রহ বাড়ছে।
একসময় কুসংস্কার বলে যেটিকে অবজ্ঞা করা হতো, আজ তা হয়ে উঠেছে জেন-জির Self-care রুটিনের গুরুত্বপূর্ণ অংশ।