প্রকাশিত: : জুলাই ৫, ২০২৫, ০২:৪৭ এএম
ইসরায়েল ও যুক্তরাষ্ট্র-সমর্থিত গাজা হিউম্যানিটারিয়ান ফাউন্ডেশনের (জিএইচএফ) ত্রাণ বিতরণ কার্যক্রম ঘিরে নতুন করে বিতর্কের সৃষ্টি হয়েছে। সংস্থাটির সাবেক এক নিরাপত্তা ঠিকাদার দাবি করেছেন, জিএইচএফ`র প্রহরীরা একাধিকবার নিরস্ত্র ও নিরীহ ফিলিস্তিনিদের ওপর মেশিনগান ও অন্যান্য আগ্নেয়াস্ত্র দিয়ে গুলি চালিয়েছেন।
বিবিসিকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই ঠিকাদার জানান, তিনি নিজ চোখে এমন বহু ঘটনা দেখেছেন যেখানে নারী, শিশু ও বৃদ্ধ ফিলিস্তিনিদের ওপরও গুলি চালানো হয়েছে। এমন এক ঘটনায় ধীরগতিতে চলার কারণে প্রহরীরা ওয়াচটাওয়ার থেকে সরাসরি গুলি চালান একটি নিরস্ত্র দলটির ওপর।
তিনি আরও বলেন, একটি ঘটনায় একজন ঠিকাদার স্বয়ংক্রিয় অস্ত্র দিয়ে জনতার ভিড়ে ১৫ থেকে ২০টি গুলি চালান। এতে এক ফিলিস্তিনি মাটিতে লুটিয়ে পড়েন। পাশে থাকা আরেক ঠিকাদার তখন বলে ওঠেন, “দারুন, মনে হয় তুমি একজনকে নিশানা করেছো।” এরপর তারা হাসাহাসি শুরু করেন।
ঘটনার বিষয়ে জিএইচএফ’র কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তারা সব অভিযোগ "পুরোপুরি মিথ্যা" বলে প্রত্যাখ্যান করে। প্রতিষ্ঠানটি দাবি করে, ত্রাণকেন্দ্রে কখনো কোনো বেসামরিক নাগরিককে গুলি করা হয়নি এবং অভিযোগকারী ব্যক্তি একজন "অসন্তুষ্ট সাবেক কর্মী", যাকে অসদাচরণের জন্য বরখাস্ত করা হয়েছিল।
তবে অভিযোগকারী তার বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ অস্বীকার করে জানান, তিনি সম্মানজনকভাবে পদত্যাগ করেছেন এবং প্রমাণস্বরূপ নথিও দেখিয়েছেন।
তিনি দাবি করেন, গাজায় জিএইচএফ`র ত্রাণ কার্যক্রমে ন্যূনতম নিয়ন্ত্রণ নেই এবং বহু নিরাপত্তা কর্মী ‘গুলি করো, পরে প্রশ্ন করো’ ধরনের মনোভাব নিয়ে কাজ করেন। কেন্দ্রগুলোতে সিসিটিভি ক্যামেরা থাকলেও অনেক ঘটনার কোনো তদন্ত হয় না বলে অভিযোগ তার।
জিএইচএফ’র বিতরণব্যবস্থা শুরু থেকেই সমালোচিত হয়ে আসছে। কারণ, যুদ্ধক্ষেত্রের মধ্য দিয়ে হেঁটে অল্প কয়েকটি কেন্দ্রে যেতে বাধ্য করা হচ্ছে মানুষদের। জাতিসংঘ এবং স্থানীয় চিকিৎসকদের বরাতে জানা যায়, জিএইচএফ’র কার্যক্রম শুরুর পর থেকে ত্রাণ নিতে যাওয়া অন্তত ৪০০ ফিলিস্তিনিকে হত্যা করেছে ইসরায়েলি বাহিনী।
তবে ইসরায়েল ও জিএইচএফ দাবি করে, এই বিতরণব্যবস্থার মাধ্যমে হামাসকে ত্রাণ পাওয়া থেকে বিরত রাখা সম্ভব হয়েছে। তাদের ভাষ্য, অন্যান্য সংস্থাগুলোর ব্যর্থতার মধ্যে জিএইচএফ পাঁচ সপ্তাহে ৫ কোটি ২০ লাখ খাবারের প্যাকেট বিতরণ করেছে।
এদিকে অক্সফাম ও সেভ দ্য চিলড্রেনসহ ১৭০টিরও বেশি আন্তর্জাতিক সংস্থা একযোগে জিএইচএফ’র বিতরণ কার্যক্রম বন্ধের দাবি জানিয়েছে। তারা বলছে, গাজার ত্রাণ গ্রহীতাদের উপর নিয়মিত গুলি চালাচ্ছে ইসরায়েলি সেনারা ও সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলো।
উল্লেখ্য, ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর হামাসের ইসরায়েলে হামলার পর থেকে ইসরায়েল গাজায় সামরিক অভিযান শুরু করে। গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্যমতে, এ পর্যন্ত সেখানে ৫৭ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন।