প্রকাশিত: : জুন ২৮, ২০২৫, ০৬:২৯ পিএম
গাজায় ইসরায়েলি আগ্রাসনে এখন পর্যন্ত সরাসরি ও পরোক্ষভাবে প্রায় ১ লাখ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন, যা উপত্যকার মোট জনসংখ্যার প্রায় ৪ শতাংশ। শুক্রবার (২৭ জুন) ইসরায়েলের প্রভাবশালী সংবাদমাধ্যম হারেৎজ এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে।
এটি হামাস-নিয়ন্ত্রিত গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের প্রকাশিত মৃতের সংখ্যার তুলনায় অনেক বেশি। মন্ত্রণালয়টি জানিয়েছে, ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর থেকে শুরু হওয়া ইসরায়েলি হামলায় ৫৬ হাজার ৩০০ জনের বেশি নিহত হয়েছেন।
হারেৎজ জানায়, নিহতদের মধ্যে শুধু বোমা বা গুলিতে প্রাণ হারানো নয়, বরং অনাহার, চিকিৎসার অভাব, ঠান্ডাজনিত রোগসহ বিভিন্ন পরোক্ষ কারণেও বহু মানুষ মারা গেছেন। যুদ্ধের কারণে গাজার স্বাস্থ্য ব্যবস্থা কার্যত ভেঙে পড়েছে।
পত্রিকাটি আরও জানিয়েছে, গাজার মৃত্যুর সংখ্যা নিয়ে ইসরায়েলি সরকারি মুখপাত্র ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের প্রভাবশালীরা সন্দেহ প্রকাশ করলেও আন্তর্জাতিক বিশেষজ্ঞরা বলছেন, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সংখ্যা বাস্তবতার চেয়ে বরং রক্ষণশীল হতে পারে।
প্রতিবেদনে ইউনিভার্সিটি অব লন্ডনের হোলোওয়ে কলেজের অর্থনীতিবিদ এবং সংঘাতে মৃত্যুর বিষয়ে আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত গবেষক অধ্যাপক মাইকেল স্পাগাটের একটি গবেষণার কথা উল্লেখ করা হয়েছে। এতে গাজার প্রায় ২ হাজার পরিবারের ওপর জরিপ চালিয়ে দেখা গেছে, ২০২৫ সালের জানুয়ারি পর্যন্ত গাজায় প্রায় ৭৫ হাজার ২০০ জন সহিংসতায় নিহত হয়েছেন, যাঁদের বেশির ভাগই ইসরায়েলি হামলায় প্রাণ হারান।
জরিপে উঠে এসেছে, নিহতদের ৫৬ শতাংশ নারী ও শিশু (১৮ বছরের নিচে)। এ হার বিশ্বের সাম্প্রতিক যেকোনো সংঘাতের তুলনায় দ্বিগুণেরও বেশি। উদাহরণস্বরূপ, কসোভোতে নারীবাদ ও শিশুহত্যার হার ছিল ২০ শতাংশ, উত্তর ইথিওপিয়ায় ৯ শতাংশ, সিরিয়ায় ২০ শতাংশ ও সুদানে ২৩ শতাংশ।
অধ্যাপক স্পাগাট বলেন, “আমার ধারণা, গাজার মোট জনসংখ্যার অন্তত ৪ শতাংশ ইতিমধ্যে নিহত হয়েছে। একুশ শতকের অন্য কোনো সংঘাতে এমন মৃত্যুহার দেখা যায়নি।” তিনি গাজা যুদ্ধকে ‘একবিংশ শতাব্দীর অন্যতম ভয়াবহ ও রক্তক্ষয়ী সংঘাত’ হিসেবে উল্লেখ করেন।
২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে ইসরায়েল গাজায় যে সামরিক অভিযান চালিয়ে যাচ্ছে, তা আন্তর্জাতিক মহলের নিন্দা ও যুদ্ধবিরতির আহ্বান সত্ত্বেও অব্যাহত রয়েছে।
উল্লেখ্য, গত বছরের নভেম্বরে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত (আইসিসি) গাজায় যুদ্ধাপরাধ ও মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু এবং তৎকালীন প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইয়োভ গ্যালান্টের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করে।
এ ছাড়া গাজায় ইসরায়েলের হামলাকে ‘গণহত্যা’ হিসেবে চিহ্নিত করে আন্তর্জাতিক বিচার আদালতেও (আইসিজে) একটি মামলা চলমান রয়েছে।