মঙ্গলবার, ০১ জুলাই, ২০২৫

খাবার নিতে আসা ফিলিস্তিনিদের ওপর গুলির নির্দেশ দিয়েছিল ইসরায়েলি সেনারা

টিএনসি ডেস্ক

প্রকাশিত: : জুন ২৮, ২০২৫, ০৪:৩৮ পিএম

খাবার নিতে আসা ফিলিস্তিনিদের ওপর গুলির নির্দেশ দিয়েছিল ইসরায়েলি সেনারা

ছবি: PBS News

গাজায় খাদ্য সহায়তার আশায় জড়ো হওয়া নিরস্ত্র ফিলিস্তিনিদের ওপর ইচ্ছাকৃতভাবে গুলি চালিয়েছে ইসরায়েলি সেনারা, এবং এই গুলির নির্দেশ এসেছিল উচ্চপর্যায়ের সামরিক কমান্ডারদের কাছ থেকে-এমনই বিস্ফোরক তথ্য প্রকাশ করেছে ইসরায়েলের শীর্ষস্থানীয় পত্রিকা হারেৎজ।

শুক্রবার (২৭ জুন) প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়, এই ঘটনায় সম্ভাব্য যুদ্ধাপরাধ তদন্ত শুরু করেছে ইসরায়েল। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক ইসরায়েলি সেনা পত্রিকাটিকে জানিয়েছেন, তারা এমন মানুষদের লক্ষ্য করে গুলি চালিয়েছেন, যারা কোনো ধরনের হুমকি সৃষ্টি করছিল না।

এক সেনা জানান, “আমরা ট্যাংক থেকে মেশিনগান চালিয়েছি, গ্রেনেড ছুঁড়েছি। একবার কুয়াশার মধ্যে কিছু বেসামরিক নাগরিক সামনে আসলে তাদের ওপরও গুলি চালানো হয়।” আরেকজন বলেন, “আমাদের অবস্থান থেকে প্রতিদিন ১ থেকে ৫ জন মারা যেত। জায়গাটা যেন একটা হত্যাযজ্ঞের মাঠ ছিল।”

গাজা সরকারের তথ্য অনুযায়ী, ইসরায়েল ও যুক্তরাষ্ট্র সমর্থিত সংস্থা জিএইচএফ পরিচালিত খাদ্য বিতরণ কেন্দ্রে সহায়তার অপেক্ষায় থাকা অবস্থায় এখন পর্যন্ত অন্তত ৫৪৯ জন ফিলিস্তিনি নিহত এবং ৪ হাজার ৬৬ জন আহত হয়েছেন।

ইসরায়েলি সেনাবাহিনী এক বিবৃতিতে অবশ্য এই অভিযোগ অস্বীকার করে বলেছে, "আইন বা সামরিক নির্দেশ লঙ্ঘনের অভিযোগ পেলে তা পূর্ণাঙ্গ তদন্তের আওতায় আনা হবে।" তবে প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু এবং প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইসরায়েল কাটজ এই প্রতিবেদনকে সেনাবাহিনীকে “দুষ্ট-রক্তচোষা” হিসেবে চিত্রিত করার অপচেষ্টা বলে দাবি করেছেন।

তারা বলেন, “আইডিএফ এমন এক শত্রুর বিরুদ্ধে লড়ছে, যারা বেসামরিকদের আড়ালে লুকিয়ে থাকে। সেনাদের নিরীহ মানুষদের ক্ষতি না করার ব্যাপারে স্পষ্ট নির্দেশনা দেওয়া আছে।”

তবে হারেৎজ আরও জানায়, মিলিটারি অ্যাডভোকেট জেনারেল ইতোমধ্যে সেনাবাহিনীর ফ্যাক্ট-ফাইন্ডিং অ্যাসেসমেন্ট মেকানিজমকে এই ঘটনার তদন্তের নির্দেশ দিয়েছে।

প্রতিবেদনের অন্যতম লেখক নির হাসন আল জাজিরা-কে বলেন, সেনারা অনেক সময় নিরস্ত্র জনতার ওপর গুলি চালিয়ে তাদের সরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করে। “যদি চাওয়া হয় জনতা চলে যাক, তাহলে তাদের গুলি করো-even if they’re unarmed,” বলেন তিনি।

গাজা প্রশাসন এক বিবৃতিতে বলেছে, “এই রিপোর্টে যে তথ্য উঠে এসেছে-সরাসরি সামরিক নির্দেশ, ভারী অস্ত্রের ব্যবহার, এবং খাদ্যের আশায় আসা মানুষদের হত্যা-তা ইসরায়েলের ‘মানবিক ত্রাণের আড়ালে গণহত্যা’র প্রমাণ বহন করে।”

এদিকে জর্ডান থেকে আল জাজিরার প্রতিবেদক হামদা সালহুত বলেন, “গাজায় সহায়তা কেন্দ্রগুলো এখন যেন মৃত্যুকূপে পরিণত হয়েছে। মানুষকে এখন বেছে নিতে হচ্ছে-ক্ষুধায় মরবে, না কি খাদ্যের খোঁজে গিয়ে গুলিতে মরবে।”

Link copied!