রবিবার, ২৭ এপ্রিল, ২০২৫

পহেলগামের ঘটনায় প্রমাণ ছাড়াই পাকিস্তানের দিকে আঙুল ভারতের, পাল্টা জবাব ভাবছে ইসলামাবাদ

টিএনসি ডেস্ক

প্রকাশিত: : এপ্রিল ২৪, ২০২৫, ০৪:৪১ পিএম

পহেলগামের ঘটনায় প্রমাণ ছাড়াই পাকিস্তানের দিকে আঙুল ভারতের, পাল্টা জবাব ভাবছে ইসলামাবাদ

কাশ্মীরের পহেলগামে পর্যটকদের ওপর ভয়াবহ সন্ত্রাসী হামলায় ২৬ জন নিহত হওয়ার ঘটনায় ভারতের কড়া প্রতিক্রিয়ার জবাব দিতে আজ (বৃহস্পতিবার) বৈঠকে বসছে পাকিস্তানের জাতীয় নিরাপত্তা কমিটি (এনএসসি)। ভারতের একের পর এক কঠোর পদক্ষেপের প্রেক্ষিতে পাকিস্তান কৌশল নির্ধারণে এই উচ্চপর্যায়ের বৈঠক আহ্বান করেছে।

পহেলগামে ২২ এপ্রিলের ওই হামলায় ২৫ জন ভারতীয় ও একজন নেপালি পর্যটক নিহত হন। ভারত হামলার জন্য সরাসরি পাকিস্তানকে ‘আন্তঃসীমান্ত সন্ত্রাসে’ সমর্থনের অভিযোগে অভিযুক্ত করলেও ইসলামাবাদ এ অভিযোগ নাকচ করে বলেছে, ঘটনাটির সঙ্গে তাদের কোনো সম্পৃক্ততা নেই।

পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফের আহ্বানে এনএসসি বৈঠকের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। উপ-প্রধানমন্ত্রী ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইসহাক দার এক্স (সাবেক টুইটার)-এ বিষয়টি নিশ্চিত করেন। তিনি বলেন, "ভারতের প্রতিক্রিয়া অপরিণত ও তড়িঘড়ি। এখনো কোনো প্রমাণ ছাড়াই ইসলামাবাদের দিকে আঙুল তোলা হয়েছে।"

হামলার পরপরই ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির নেতৃত্বে জাতীয় নিরাপত্তা বিষয়ক মন্ত্রিসভা কমিটি (সিসিএস) বৈঠকে বসে এবং একাধিক কড়া সিদ্ধান্ত নেয়। এর মধ্যে সবচেয়ে তাৎপর্যপূর্ণ হলো ১৯৬০ সালের বিশ্বব্যাংকের মধ্যস্থতায় স্বাক্ষরিত সিন্ধু পানি চুক্তি সাময়িকভাবে স্থগিত করা। ভারত জানিয়েছে, "এই চুক্তি আর কার্যকর থাকবে না যতক্ষণ না পাকিস্তান আন্তঃসীমান্ত সন্ত্রাসের সমর্থন স্থায়ীভাবে বন্ধ করে।"

এছাড়াও বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে পাঞ্জাবের আটারি সীমান্ত চেকপোস্ট। পাকিস্তানি নাগরিকদের ভারতে প্রবেশ নিষিদ্ধ করা হয়েছে এবং যারা বর্তমানে রয়েছেন তাদের ১ মে’র মধ্যে দেশ ত্যাগের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। সার্ক ভিসা ছাড়পত্রও বাতিল করা হয়েছে।

দিল্লিতে পাকিস্তান হাইকমিশনের প্রতিরক্ষা সংযুক্তি ও উপদেষ্টাদের ‍‍`পার্সোনা নন গ্রাটা‍‍` ঘোষণা করে ভারত ছাড়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। ইসলামাবাদেও ভারতের সামরিক উপদেষ্টাদের প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি দুই দেশের হাইকমিশনে কর্মীসংখ্যা ৫৫ থেকে কমিয়ে ৩০-এ নামিয়ে আনার সিদ্ধান্ত হয়েছে।

পাকিস্তানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে জানায়, “আমরা অনন্তনাগ জেলার এই মর্মান্তিক হামলায় নিহতদের পরিবারের প্রতি গভীর শোক ও সমবেদনা জানাই। পাকিস্তান এই ঘটনার সঙ্গে জড়িত নয়।”

বিশ্লেষকদের মতে, ২০১৯ সালের পুলওয়ামা-বালাকোট সঙ্কটের পর ভারত-পাকিস্তান সম্পর্ক ফের এক বিপজ্জনক মোড়ে পৌঁছেছে। বিশেষ করে সিন্ধু পানি চুক্তি স্থগিত হলে দুই দেশের মধ্যে দীর্ঘমেয়াদি জলসম্পদ বিরোধে উত্তেজনা আরও বাড়তে পারে।

ভারতের প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিংহ বলেন, "যারা হামলা চালিয়েছে এবং যারা এটির পরিকল্পনায় জড়িত, তারা শিগগিরই আমাদের জবাব স্পষ্টভাবে শুনবে।" তিনি বলেন, “প্রয়োজনীয় ও উপযুক্ত যা কিছু, ভারত সব করবে।”

হামলার পর পহেলগামের কাছে তাংমার্গ এলাকায় ভারতীয় বাহিনীর সঙ্গে সন্দেহভাজন জঙ্গিদের বন্দুকযুদ্ধ চলছিল। অন্যদিকে, বারামুল্লায় ভারতীয় সেনাবাহিনী দু’জনকে গুলি করে হত্যা করেছে, যারা সীমান্ত দিয়ে অনুপ্রবেশের চেষ্টা করছিল বলে দাবি করা হয়েছে।

পহেলগামের হামলার নিন্দায় বিশ্ব নেতারাও একযোগে ভারতের পাশে দাঁড়িয়েছেন। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট, জাতিসংঘ মহাসচিব, চীন, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স, জার্মানি, ইসরায়েল ও সংযুক্ত আরব আমিরাতের পক্ষ থেকে গভীর দুঃখ প্রকাশ ও সমর্থনের বার্তা দেওয়া হয়েছে।

Link copied!