রবিবার, ২৭ এপ্রিল, ২০২৫

ধ্বসে পড়েছে চিকিৎসা ব্যবস্থা, সেবা দিতে গিয়ে স্বাস্থ্যকর্মীদের হিমশিম

টিএনসি ডেস্ক

প্রকাশিত: : এপ্রিল ১, ২০২৫, ০৩:৪৫ পিএম

ভয়াবহ ভূমিকম্পে ধসে পড়েছে মিয়ানমারের অগণিত আবাসিক ভবন, হাসপাতাল, সেতু, ধর্মীয় উপাসনালয়সহ নানা স্থাপনা। বিশেষ করে হাসপাতাল ও সড়ক ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় ভেঙে পড়েছে চিকিৎসা ব্যবস্থা, সময়মতো পৌঁছতে পারছে না প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম।

ধ্বসে পড়েছে চিকিৎসা ব্যবস্থা, সেবা দিতে গিয়ে স্বাস্থ্যকর্মীদের হিমশিম

ভূমিকম্পে মায়ানমারের মেন্ডেলে শহরের ধ্বসে পড়া ভবন। ছবি: এপি

ভয়াবহ ভূমিকম্পে মিয়ানমারের হাসপাতাল, সেতু, আবাসিক ভবনসহ বিভিন্ন অবকাঠামো ধসে পড়েছে। বিশেষ করে হাসপাতাল ও সড়ক ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় দেশটির চিকিৎসা ব্যবস্থা ভেঙে পড়েছে। প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম সময়মতো পৌঁছাতে পারছে না, আহতদের চিকিৎসা ব্যাহত হচ্ছে।

দেশটির জান্তা সরকারের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, এ পর্যন্ত ভূমিকম্পে প্রাণহানি হয়েছে ২ হাজার ৫৬ জনের। আহত হয়েছেন প্রায় ৩ হাজার ৯০০ জন। এখনো ৩০০ জনের কোনো খোঁজ পাওয়া যায়নি।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) জানিয়েছে, ভূমিকম্পে মিয়ানমারের তিনটি হাসপাতাল পুরোপুরি ধ্বংস হয়ে গেছে এবং ২২টি আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ফলে দেশটির মধ্য ও উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের হাসপাতালগুলো আহতদের সামলাতে হিমশিম খাচ্ছে।

আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমের প্রতিবেদন অনুযায়ী, যুদ্ধবিধ্বস্ত মিয়ানমার আগে থেকেই চিকিৎসা সরঞ্জামের সংকটে ভুগছিল। ভূমিকম্পের পর সেই সংকট আরও তীব্র হয়েছে। পর্যাপ্ত বেড, রক্ত, ওষুধ ও চিকিৎসাসামগ্রী না থাকায় চিকিৎসা কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে।

জাতিসংঘ জানিয়েছে, ভূমিকম্পে গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামো ধ্বংস হওয়ায় দেশটির চিকিৎসা ও ত্রাণ কার্যক্রম চালিয়ে যাওয়া কঠিন হয়ে পড়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় প্রয়োজনীয় ত্রাণসামগ্রী পৌঁছানো সম্ভব হচ্ছে না। তবে এরই মধ্যে চিকিৎসা সরঞ্জাম নিয়ে ১৭টি ট্রাক মিয়ানমারে পৌঁছেছে। ভূমিকম্পে ক্ষতিগ্রস্তদের উদ্ধারে ১২টিরও বেশি বিদেশি উদ্ধারকারী দল কাজ করছে।

ভূমিকম্পের আঘাতের পর পার হয়েছে ৩৬ ঘণ্টারও বেশি সময়। সাধারণত দুর্যোগে আটকা পড়া মানুষের ক্ষেত্রে প্রথম ৩৬ ঘণ্টাকে ‍‍`গোল্ডেন রেসকিউ উইন্ডো‍‍` হিসেবে ধরা হয়। এ সময়ের মধ্যে উদ্ধার করা না গেলে খাদ্য ও পানির অভাবে তাদের বেঁচে থাকার সম্ভাবনা কমতে থাকে। তার ওপর মিয়ানমারে এখন প্রচণ্ড গরম। এর ফলে ধ্বংসস্তূপের নিচে আটকা পড়াদের মরদেহ পচতে শুরু করেছে।

উদ্ধারকারীরা এ দুর্বিষহ অভিজ্ঞতার সম্মুখীন হচ্ছেন। এক উদ্ধারকর্মী জানিয়েছেন, মরদেহ বহনের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যাগের অভাব রয়েছে। তারা উদ্ধার অভিযান শুরু করতেই পচন ধরা মরদেহের সন্ধান পেয়েছেন এবং আরও অনেক মরদেহ পাওয়ার আশঙ্কা করছেন।

রয়টার্স জানিয়েছে, ভূমিকম্পের কেন্দ্রস্থলের কাছে মান্দালয় শহরে ভারী যন্ত্রপাতির অভাবে উদ্ধারকারীরা খালি হাতে ধ্বংসস্তূপ সরিয়ে জীবিতদের উদ্ধারের চেষ্টা করছেন। রাস্তা ও সেতু ধসে পড়ায় উদ্ধারকাজ ব্যাহত হচ্ছে। বৈদ্যুতিক সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে, মোবাইল নেটওয়ার্কও সীমিত রয়েছে। প্রচণ্ড গরমের কারণে মরদেহ দ্রুত পচে যাচ্ছে।

আবহাওয়া পূর্বাভাস অনুযায়ী, আগামী কয়েক দিনে তাপমাত্রা ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াস ছাড়িয়ে যেতে পারে। এতে উদ্ধারকাজ আরও কঠিন হয়ে উঠবে।

ডব্লিউএইচও জানিয়েছে, হতাহতের প্রকৃত সংখ্যা এখনো নির্ধারণ করা যায়নি এবং তা আরও বাড়তে পারে। ভূমিকম্পে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকাগুলোর হাসপাতালগুলো কার্যত অচল হয়ে পড়েছে। অস্ত্রোপচার, রক্ত সঞ্চালন, চেতনানাশক, প্রয়োজনীয় ওষুধ এবং মানসিক স্বাস্থ্য সহায়তার জরুরি প্রয়োজন। ইতোমধ্যে দুর্যোগ মোকাবেলায় ৮ মিলিয়ন ডলার সহায়তার জন্য আবেদন জানিয়েছে ডব্লিউএইচও।

মিয়ানমারের রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যম জানিয়েছে, শুক্রবারের ভূমিকম্পের পর আজ সোমবার থেকে এক সপ্তাহের জন্য শোক ঘোষণা করা হয়েছে। ৬ এপ্রিল পর্যন্ত চলবে এই শোক কর্মসূচি, এ সময়ে জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত থাকবে।

২০২১ সালে জান্তা অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ক্ষমতা দখলের পর থেকে দেশটি ভয়াবহ গৃহযুদ্ধের মধ্যে রয়েছে। এর মধ্যেই শতাব্দীর সবচেয়ে বড় ভূমিকম্পের আঘাতে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে মিয়ানমার।

যুদ্ধের কারণে গৃহহীন মানুষের সংখ্যা আগেই বেড়েছিল, এবার ভূমিকম্পের ধ্বংসযজ্ঞে তাদের দুর্ভোগ আরও বেড়েছে। উদ্ধার ও ত্রাণ কার্যক্রমও জটিল হয়ে পড়েছে।

এক বিদ্রোহী গোষ্ঠী জানিয়েছে, ভূমিকম্পের পরও মিয়ানমারের ক্ষমতাসীন সামরিক বাহিনী বিভিন্ন গ্রামে বিমান হামলা চালিয়ে যাচ্ছে। সিঙ্গাপুরের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ত্রাণ প্রচেষ্টা সহজ করতে অবিলম্বে যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানিয়েছেন।

Link copied!