শুক্রবার, ০৯ মে, ২০২৫

পাঁচ বছরে কৃষিজমি কমেছে ২ শতাংশ, চালের উৎপাদন বেড়েছে মাত্র ২%

টিএনসি ডেস্ক

প্রকাশিত: : মে ৫, ২০২৫, ০৪:০৫ পিএম

দেশে জনসংখ্যার অনুপাতে বাড়ছে না খাদ্যশস্যের উৎপাদন। কৃষিজমি হ্রাস, উচ্চফলনশীল জাত উদ্ভাবন ও সম্প্রসারণের অভাব, কৃষি উপকরণের মূল্যবৃদ্ধি এবং সে অনুপাতে কৃষক আয় করতে না পারাসহ নানা কারণ কৃষি উৎপাদনে প্রভাব ফেলছে।

পাঁচ বছরে কৃষিজমি কমেছে ২ শতাংশ, চালের উৎপাদন বেড়েছে মাত্র ২%

দেশজুড়ে কৃষিজমির পরিমাণ ধীরে ধীরে কমে আসছে, আর তার প্রভাব পড়ছে খাদ্যশস্য উৎপাদনেও। গত পাঁচ বছরে কৃষিজমি কমেছে প্রায় ২ শতাংশ, অথচ একই সময়ে চালের উৎপাদন বেড়েছে মাত্র ২ শতাংশ—যা জনসংখ্যা বৃদ্ধির হারের তুলনায় খুবই অপ্রতুল। কৃষি উৎপাদনের এই ধীরগতির পেছনে রয়েছে একাধিক কারণ: যেমন, উচ্চফলনশীল জাতের অভাব, কৃষি উপকরণের মূল্যবৃদ্ধি, জমির অপরিকল্পিত ব্যবহার এবং কৃষকদের ন্যায্যমূল্য না পাওয়া।

যুক্তরাষ্ট্রের কৃষি বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, দেশে ধানের আবাদি জমি ২০১৪-১৫ অর্থবছরের ১ কোটি ১৭ লাখ হেক্টর থেকে কমে ২০২৪-২৫ সালে দাঁড়িয়েছে ১ কোটি ১৪ লাখ হেক্টরে। অন্যদিকে, হেক্টরপ্রতি ফলন মাত্র ৪ শতাংশ বেড়েছে, আর চাল উৎপাদনের হার মাত্র ২ শতাংশ বেড়ে দাঁড়িয়েছে প্রায় ৩ কোটি ৯০ লাখ টনে। এই প্রবৃদ্ধি বার্ষিক জনসংখ্যা বৃদ্ধির হারের নিচে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দেশের দুই-তিন ফসলি জমি যথেচ্ছভাবে আবাসন, রাস্তা, কলকারখানা এমনকি সরকারি প্রকল্পে ব্যবহৃত হচ্ছে, যদিও আইনে কৃষিজমির শ্রেণি পরিবর্তনের জন্য জেলা প্রশাসকের অনুমোদন বাধ্যতামূলক। বাস্তবে এসব আইনের প্রয়োগ প্রায় নেই বললেই চলে। ফলে দিনাজপুরসহ দেশের অনেক এলাকায় আবাদি জমি নষ্ট হয়ে যাচ্ছে।

উৎপাদন ব্যয় বাড়লেও কৃষক ন্যায্য মূল্য না পাওয়ায় কৃষিতে উৎসাহ হারাচ্ছেন। ফুলকপি, আলুর মতো ফসলে কৃষকের লোকসান হচ্ছে, কারণ বাজারদর উৎপাদন খরচের নিচে নেমে গেছে। কৃষি বিপণন আইন থাকলেও বাস্তবে তার কার্যকারিতা নেই বলে অভিযোগ রয়েছে। বিপণন ব্যবস্থার দুর্বলতায় কৃষকের লাভ কমে যাচ্ছে, ফলে তারা কৃষিকাজ থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছে।

জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবও স্পষ্ট হচ্ছে, বিশেষ করে দক্ষিণাঞ্চলে লবণাক্ততা বাড়ায় সেখানে ফসল উৎপাদন কমছে। মাটি উর্বরতা হারাচ্ছে, এবং এতে ভবিষ্যতে খাদ্যনিরাপত্তা হুমকির মুখে পড়তে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন পরিবেশবিদরা।

সরকার অবশ্য নানা উদ্যোগের কথা বলছে—যেমন ছোট পরিসরে সংরক্ষণাগার স্থাপন, শাকসবজির জন্য হিমাগার তৈরি এবং আলু রপ্তানির পরিকল্পনা। তবে কৃষি উৎপাদনে কাঙ্ক্ষিত গতি ফিরিয়ে আনতে হলে কেবল প্রকল্প নয়, দরকার বাস্তবসম্মত নীতি প্রয়োগ এবং মাঠপর্যায়ে বাস্তবায়ন।

Link copied!