প্রকাশিত: : মে ১, ২০২৫, ০৬:৪১ পিএম
শ্রীলংকায় চা শ্রমিকের দৈনিক মজুরি সাড়ে পাঁচশ টাকার মতো। চা উৎপাদনকারী দেশ কেনিয়া ও ভারতে তা যথাক্রমে ৪৮৩ ও ২৫৬ টাকা। অন্যদিকে বাংলাদেশে প্রতিজন শ্রমিক দৈনিক ৮ ঘণ্টা কাজের বিনিময়ে পান ১৭৯ টাকা।
বাংলাদেশে চা শ্রমিকদের দৈনিক মজুরি বিশ্বের অন্যান্য চা উৎপাদনকারী দেশগুলোর তুলনায় অনেক কম। শ্রীলংকায় চা শ্রমিকদের দৈনিক মজুরি প্রায় সাড়ে পাঁচশ টাকা, কেনিয়া ও ভারতে তা যথাক্রমে ৪৮৩ ও ২৫৬ টাকা। তবে, বাংলাদেশে প্রতিজন চা শ্রমিক দৈনিক ৮ ঘণ্টা কাজের বিনিময়ে মাত্র ১৭৯ টাকা মজুরি পান।
২০১৫ সালে বাংলাদেশে চা শ্রমিকদের মজুরি ছিল ৮৫ টাকা, যা আন্দোলনের মাধ্যমে পরবর্তীতে ১০২, ১২০ এবং ২০২২ সালে ১৭০ টাকায় উন্নীত করা হয়। বর্তমানে, প্রতি বছর ৫ শতাংশ হারে মজুরি বৃদ্ধি হচ্ছে এবং এই বছর শ্রমিকরা দৈনিক ১৭৮ টাকা ৫০ পয়সা পাচ্ছেন। তবে, এই পরিমাণ মজুরি দেশীয় পরিস্থিতির তুলনায় খুবই নগণ্য বলে অভিযোগ করেছে শ্রমিক নেতারা।
বাংলাদেশ চা শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক নিপেন পাল বলেন, “চা শ্রমিকদের মজুরি মানবিক প্রয়োজনের তুলনায় অতি নগণ্য।” তিনি অভিযোগ করেন, চায়ের দাম কম থাকায় মালিকরা শ্রমিকদের মজুরি বাড়াতে পারছেন না, তবে শ্রমিকরা কঠোর পরিশ্রম করলেও উৎপাদন খরচ কমাতে তাদের কোনো ভূমিকা থাকে না।
বাংলাদেশের চা উৎপাদন খরচ বাড়ানোর অন্যতম কারণ হলো উৎপাদনে পিছিয়ে থাকা। চা গবেষণা কেন্দ্রের মাধ্যমে নতুন চা জাত উদ্ভাবনে অগ্রগতি হয়নি, যার ফলে দেশে চায়ের উৎপাদন বিশ্বমানের থেকে অনেক কম। এতে উৎপাদন খরচ দ্বিগুণ হয়ে যাচ্ছে, এবং শ্রমিকদের ওপর এর প্রভাব পড়ছে।
চা খাতের উন্নয়নে বাংলাদেশ চা গবেষণা ইনস্টিটিউট (বিটিআরআই) কাজ করছে, তবে প্রতিযোগী দেশগুলোর তুলনায় বাংলাদেশের চায়ের উৎপাদন অনেক কম, যার ফলে চা শ্রমিকরা লাভজনক মজুরি পাচ্ছেন না। চা সংসদের সভাপতি কামরান তানভীরুর রহমান বলেন, “নিলামে চায়ের দাম কম হওয়ায় মালিকরা লোকসান দিয়ে চা বিক্রি করছেন, যার প্রভাব পড়ছে শ্রমিকদের বেতন ও সুবিধায়।”
এছাড়া, বর্তমানে দেশে প্রায় ১ লাখ ৪০ হাজার চা শ্রমিক রয়েছে এবং চা খাতে উন্নয়নের জন্য সরকার কঠোর শুল্কারোপ ও গবেষণায় কাজ করছে। তবে উৎপাদন খরচ কমানোর জন্য কার্যকরী উদ্যোগের অভাব রয়েছে, যার ফলে শ্রমিকরা এখনও তাদের ন্যায্য মজুরি ও সুবিধা থেকে বঞ্চিত।