শুক্রবার, ০৯ মে, ২০২৫

এপ্রিলে ঢাকার পুঁজিবাজার হারিয়েছে ১৭ হাজার কোটি টাকা

টিএনসি ডেস্ক

প্রকাশিত: : মে ৫, ২০২৫, ০৪:০৩ পিএম

এপ্রিলে ঢাকার পুঁজিবাজার হারিয়েছে ১৭ হাজার কোটি টাকা

এপ্রিল মাসটি দেশের পুঁজিবাজারের জন্য ছিল এক বিষণ্ন অধ্যায়। ঈদের পর লেনদেন শুরু হলেও বাজারে নেমে আসে টানা দরপতনের ধাক্কা। মাসজুড়ে ডিএসইর প্রধান সূচক ৩০২ পয়েন্ট কমে গিয়ে দাঁড়ায় ৪৯১৭ পয়েন্টে, এবং বিনিয়োগকারীদের পুঁজি থেকে হারিয়ে যায় প্রায় ১৭ হাজার কোটি টাকা। পুরো মাসে ১৮টি কার্যদিবসের মধ্যে ১৫ দিনই সূচক ছিল নিম্নমুখী।

শুধু প্রধান সূচক নয়, শরীয়াভিত্তিক ডিএসইএস সূচক কমেছে ৭৪ পয়েন্ট এবং বাছাইকৃত ভালো কোম্পানিগুলোর সূচক ডিএস-৩০ কমেছে ৯২ পয়েন্ট। এই দরপতনের ফলে বাজারে বিনিয়োগকারীদের আস্থা অনেকটাই টলে গেছে। এক মাসে ১১ হাজার ৪২৯ জন বিনিয়োগকারী তাদের বিও অ্যাকাউন্টে শূন্য ব্যালেন্স দেখিয়েছেন, এবং মোট শূন্য ব্যালেন্সের অ্যাকাউন্টের সংখ্যা ছাড়িয়ে গেছে ৩ লাখ ৮০ হাজার। কার্যকর বিও অ্যাকাউন্টের সংখ্যা কমেছে ১০ হাজারের বেশি।

বিনিয়োগকারীরা অভিযোগ করছেন, দীর্ঘদিন ধরে ভালো কোম্পানির শেয়ারের দামও অস্বাভাবিকভাবে কমে যাচ্ছে। তারেক হোসেন নামের একজন অভিজ্ঞ বিনিয়োগকারী বলেন, কমিশনের আগের বক্তব্য ছিল ভালো শেয়ারে বিনিয়োগ নিরাপদ, কিন্তু বাস্তবতা এখন ভিন্ন। তিনি প্রশ্ন তোলেন, কিভাবে ১০০ টাকার শেয়ার ৩০-৪০ টাকায় নেমে আসে, যার কোনো সন্তোষজনক ব্যাখ্যা মেলে না।

অন্যদিকে, মার্জিন ঋণের কারণে আরও বড় ধাক্কা খেয়েছে বাজার। অনেকেই এই ঋণে শেয়ার কিনে ফোর্স সেলের মাধ্যমে ক্ষতির মুখে পড়েছেন। পুঁজিবাজার সংস্কারের টাস্কফোর্স এক সদস্য জানিয়েছেন, মার্জিন ঋণে সুনির্দিষ্ট নীতিমালা না থাকায় এটি বাজারের জন্য বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে। টাস্কফোর্স সুপারিশ করেছে, মার্জিন ঋণের সীমা নির্ধারণ করে সর্বোচ্চ ১০ কোটি এবং সর্বনিম্ন ১০ লাখ টাকা করার পাশাপাশি যাদের বাজারে বিনিয়োগ নেই, তাদের ঋণ না দেওয়ার জন্য।

তাদের আরেক সুপারিশ হলো লক-ইন শেয়ার, উদ্যোক্তা শেয়ার, প্লেসমেন্ট, এবং অতালিকাভুক্ত বন্ড বা ফান্ডে এই ঋণের অর্থ ব্যবহার না করা।

এদিকে আইসিবির চেয়ারম্যান আবু আহমেদ বলেন, আন্তর্জাতিক মানের বড় কোম্পানিগুলোকে পুঁজিবাজারে আনতে পারলে বিনিয়োগকারীদের আস্থা ফিরবে। তবে বিএসইসি সূত্রে জানা গেছে, চলতি বছর বড় কোনো আইপিও বাজারে আসার সম্ভাবনা নেই, ফলে বাজার ঘুরে দাঁড়ানোর পথ আপাতত অনিশ্চিতই রয়ে গেছে।

এই দুরবস্থার মধ্যে বিএসইসির অভ্যন্তরীণ অস্থিরতা, ২১ কর্মকর্তার বহিষ্কার, এবং নেতৃত্বের সংকট বাজারে নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

Link copied!