সোমবার, ২৮ এপ্রিল, ২০২৫

দেশে কর্মক্ষম জনগোষ্ঠীর প্রবৃদ্ধির গড় হার ১.৫%, কর্মসংস্থানে ০.২ শতাংশ

টিএনসি ডেস্ক

প্রকাশিত: : এপ্রিল ২, ২০২৫, ০৫:১৮ পিএম

যেকোনো দেশে কর্মক্ষম জনগোষ্ঠী হিসেবে ধরা হয় ১৫ থেকে ৬৪ বছর বয়সীদের। এক দশকেরও বেশি সময় ধরে বাংলাদেশে কর্মক্ষম জনগোষ্ঠীর সংখ্যা যেভাবে বেড়েছে, নতুন কর্মসংস্থান বেড়েছে তার তুলনায় একেবারেই সামান্য।

দেশে কর্মক্ষম জনগোষ্ঠীর প্রবৃদ্ধির গড় হার ১.৫%, কর্মসংস্থানে ০.২ শতাংশ

বাংলাদেশে কর্মক্ষম জনগোষ্ঠীর সংখ্যা দ্রুত বাড়লেও কর্মসংস্থানের হার সে তুলনায় খুবই কম। আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার (আইএলও) পরিসংখ্যানের ভিত্তিতে বিশ্বব্যাংকের এক পর্যালোচনায় উঠে এসেছে, ২০১৩ থেকে ২০২২ সালের মধ্যে দেশে কর্মক্ষম জনগোষ্ঠীর সংখ্যা বছরে গড়ে ১.৫ শতাংশ হারে বৃদ্ধি পেয়েছে, কিন্তু নতুন কর্মসংস্থানের প্রবৃদ্ধি ছিল মাত্র ০.২ শতাংশ।

বিশ্লেষকদের মতে, দেশে প্রতিবছর বিপুলসংখ্যক তরুণ কর্মক্ষম হয়ে উঠলেও তাদের জন্য যথেষ্ট কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি করা সম্ভব হয়নি। এমনকি সবচেয়ে উৎপাদনশীল প্রতিষ্ঠানগুলোও নতুন কর্মসংস্থান বৃদ্ধিতে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখতে পারেনি। এর ফলে কর্মক্ষম জনগোষ্ঠীর তুলনায় কর্মসংস্থানের সুযোগ সীমিত হয়ে পড়েছে, এবং কর্মহীনতার হার বেড়েছে।

বিশ্বব্যাংকের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০১৮ থেকে ২০২৪ সালের মধ্যে বাংলাদেশের প্রকৃত জিডিপি প্রবৃদ্ধির হার ৬.৪ শতাংশ, যা বৈশ্বিক গড়ের চেয়ে বেশি। একইসঙ্গে দারিদ্র্যের হার ২০২২ সালে ৫ শতাংশে নেমে এসেছে। তবে এসব অর্থনৈতিক উন্নতির সুফল কর্মসংস্থানে তেমনভাবে প্রতিফলিত হয়নি।

বিশ্লেষকদের মতে, দেশে শোভন কর্মসংস্থানের অভাব একটি বড় সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। কর্মসংস্থান সৃষ্টি হলেও বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই তা অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতে, যেখানে মজুরি কম এবং কাজের নিরাপত্তা অনিশ্চিত। প্রাতিষ্ঠানিক বা আনুষ্ঠানিক খাতে কর্মসংস্থানের সুযোগ বাড়ছে না, যা অর্থনীতির কাঠামোগত সমস্যার কারণে হচ্ছে।

তরুণদের জন্য কর্মসংস্থানের সুযোগও সংকুচিত হয়েছে। ২০১৩ থেকে ২০২২ সালের মধ্যে ১৫ থেকে ২৪ বছর বয়সী তরুণদের কর্মসংস্থানের সুযোগ ৩.৪ শতাংশ হারে কমেছে, ফলে দেশে তরুণ বেকারত্বের হার ১০ শতাংশ থেকে বেড়ে ১৬ শতাংশে পৌঁছেছে।

বিশ্লেষকরা বলছেন, পেশা নির্বাচনের সামাজিক অগ্রাধিকার পরিবর্তনও তরুণ বেকারত্ব বৃদ্ধির একটি কারণ। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে পড়াশোনা শেষ করা অনেক শিক্ষার্থী কৃষি বা কারখানার মতো নিম্ন আয়ের কাজে যেতে চান না। ফলে শ্রমবাজারে উচ্চশিক্ষিতদের জন্য উপযুক্ত কাজের অভাব এবং শ্রমশক্তির চাহিদার মধ্যে একটি বড় ফাঁক রয়ে গেছে।

বাংলাদেশের অর্থনৈতিক কাঠামোয় বড় পরিবর্তন এলেও তার প্রতিফলন শ্রমবাজারে দেখা যাচ্ছে না। শিল্প খাতের আয় ও অবদানের দিক থেকে ফ্রন্টিয়ার ফার্মগুলোর আধিপত্য বাড়লেও তারা মানসম্মত কর্মসংস্থান তৈরি করতে পারছে না। এসব প্রতিষ্ঠান দেশের মোট পণ্য ও সেবা বিক্রির প্রায় তিন-চতুর্থাংশ নিয়ন্ত্রণ করলেও, মোট প্রাতিষ্ঠানিক কর্মসংস্থানে তাদের অবদান মাত্র ১৫ শতাংশ।

বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, কর্মসংস্থানের সংকট নিরসনে শিক্ষাব্যবস্থায় পরিবর্তন এবং দক্ষতা উন্নয়নের ওপর গুরুত্ব দিতে হবে। একইসঙ্গে, কৃষি ও শিল্প খাতে নতুন বিনিয়োগ এবং নীতি সহায়তা প্রদান করে নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টি করা জরুরি।

Link copied!