রবিবার, ১৪ ডিসেম্বর, ২০২৫

শীত সংস্কৃতির অবিচ্ছেদ্য অংশ ওয়াজ-মাহফিল: শব্দের ব্যবহারে স্থানভেদ কাম্য

আবদুর রাজ্জাক আল মাসুম

প্রকাশিত: : ডিসেম্বর ১৩, ২০২৫, ০২:০৮ পিএম

শীত সংস্কৃতির অবিচ্ছেদ্য অংশ ওয়াজ-মাহফিল: শব্দের ব্যবহারে স্থানভেদ কাম্য

শীত ওয়াজের মওসুম। পাড়া-গাঁয়ে উৎসবের আমেজ চলে আসে এ সময়ে। গ্রাম-গঞ্জে এমনও মাহফিল আছে বিশ বছর কি তিরিশ বছর ধরে চলে আসছে। তিন দিন, সপ্তাহ, দশ দিন, পক্ষ কিংবা মাসব্যাপী চলে এসব আয়োজন। ‘ঐতিহ্যবাহী তাফসিরুল কুরআন মাহফিল’ শিরোনামে দেশের আনাচে-কানাচে হাজার-হাজার বাৎসরিক ওয়াজ হয়।
আশেপাশের গ্রাম থেকে জ্যাকেট, মাফলার, কানটুপি সমেত লোক আসে। প্যান্ডেলে জবুথবু হয়ে বসে শীতের প্রকোপ কমায়। অনেক মাহফিলে থাকে মহিলাদের প্যান্ডেল। নাহয় সে মাঠের আশেপাশের বাড়িঘরে মহিলাদের সমাগম ঘটে। বিবাহিত মেয়েরা বাচ্চাকাচ্চাসহ বাপের বাড়িতে চলে আসে। কোনো-কোনো বাড়িতে দূর-দূরান্ত থেকে আগত মহিলাদের জন্য এক তরকারির ভাত কিংবা চা-র এন্তেজাম করে রাখে। গমগম করে ওয়াজের মাঠ আর চারপাশের বাড়িঘর। 
ওয়াজকে ঘিরে মেলা বা বাজারের মতোন জায়গাও তৈরী হয়। বুট, বাদাম, চটপটির সাথে ভুট্টা ভাজা বা ডিম-আলু ভাজার ছোটছোট দোকান বসে। মাহফিল বড় হলে, বেশিদিন ও জনপ্রিয় বক্তার আগমন হলে, টুপি, তজবি, আতর শিশি থেকে শুরু করে পাঞ্জাবি-কটি পর্যন্ত বিক্রি হতে দেখা যায়।
সব মিলিয়ে ওয়াজ-মাহফিল আমাদের শীতকালীন সংস্কৃতির অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে আছে। 
তবে স্থানভেদে এর প্রভাব ও দৃষ্টিভঙ্গির পার্থক্য আছে। গ্রাম কিংবা মফস্বলে রক্ত সম্পর্কীয় এক গোষ্ঠীর মানুষ সকলে এক হয়ে বাস করে। তাদের আচার-আচরণ, ভাষা-রুচি ও চিন্তা একই রকম থাকে। সম্মিলিত সে আয়োজন তাই সবার অংশগ্রহণে উৎসবমুখর পরিবেশে পালিত হয়।
কিন্তু শহর বা নগরের দৃশ্য তেমন না। সেখানে নানা মত-পথ, পেশা - সংস্কৃতির মানুষ একটা ভাসমান বন্দোবস্তে একসাথে বাস করে। এর ফলে পারস্পরিক দেখভালের দায়িত্ব পালনে বিশেষ সতর্কতা জারি রাখতে হয়। এই প্রেক্ষাপটে শহর-নগর অঞ্চলে ওয়াজ-মাহফিলের মাইকের আওয়াজ সংশ্লিষ্ট মাঠে সীমাবদ্ধ রাখাই শ্রেয়। শহর জীবনে যন্ত্রের ব্যবহার তুলনামূলক বেশি। কলকব্জা, মোটর যান, নির্মাণ যন্ত্র; সব মিলিয়ে শহরে উৎপাদিত শব্দ সহ্যসীমাকে অতিক্রম করে যায়। রাতের বেলা অত্যাচারিত পরিবেশের কিছুটা স্বস্তি পাওয়ার সময়। বাংলাদেশে জনপ্রিয় দুইজন ব্যক্তি শায়খ আহমদুল্লাহ ও মাওলানা মিজানুর রহমান আজহারী, মাহফিলে মাইকের ব্যবহার নিয়ে যথেষ্ট সাবধানী; বহুবার প্যান্ডেলের বাইরে মাইক না দিতে বলেছেন।
তবে শুধু ওয়াজ-মাহফিলের কথা বললে সংকীর্ণতায় আক্রান্ত হবে কথা। রাজনৈতিক সভা-সমাবেশ, বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও আয়োজনের প্রচারণা মাইকিং, কনসার্ট, সাউন্ড বক্স ইত্যাদির ক্ষেত্রেও সচেতনতা সৃষ্টি না হলে শব্দ দূষণ সংক্রান্ত আপদ থেকে নিস্তার পাওয়া যাবে না

Link copied!