প্রকাশিত: : জুন ১৯, ২০২৫, ০১:০৩ পিএম
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ইরানে হামলার পরিকল্পনায় ব্যক্তিগতভাবে অনুমোদন দিয়েছেন, তবে এখনো চূড়ান্ত নির্দেশ জারি করেননি। মঙ্গলবার হোয়াইট হাউসের সিচুয়েশন রুমে একটি বৈঠকে তিনি এই পরিকল্পনায় সম্মতি জানান বলে জানা গেছে। তবে ট্রাম্প ইঙ্গিত দিয়েছেন, তেহরান যদি পারমাণবিক কর্মসূচি থেকে সরে না আসে, তাহলে পরিস্থিতি বদলাতে পারে।
বুধবার সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে ট্রাম্প বলেন, ‘আমি কী করব, তা নিয়ে কিছু ধারণা আছে, তবে এখনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিইনি। আমি শেষ মুহূর্তে সিদ্ধান্ত নিতে পছন্দ করি।’
ট্রাম্প আশাবাদী যে, ইসরায়েলের চলমান ছয় দিনের হামলায় যুক্ত হওয়ার হুমকি দিয়ে তিনি ইরানকে নিজেদের অবস্থান বদলাতে বাধ্য করতে পারবেন। যদিও তিনি এখনো নিশ্চিত করেননি যে যুক্তরাষ্ট্র সরাসরি সামরিক অভিযানে অংশ নেবে কি না।
হোয়াইট হাউসের একজন জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা জানিয়েছেন, ইরানে হামলার একাধিক বিকল্প এখনো আলোচনায় রয়েছে। মার্কিন প্রশাসন ইসরায়েলের ‘অপারেশন রাইজিং লায়ন’ অভিযান পর্যবেক্ষণ করছে। গত সপ্তাহ থেকে ইসরায়েল ইরানের সামরিক স্থাপনা ও পারমাণবিক অবকাঠামো লক্ষ্য করে হামলা চালাচ্ছে। মঙ্গলবার পর্যন্ত তারা ১,১০০টিরও বেশি লক্ষ্যবস্তুতে হামলা চালানোর দাবি করেছে।
পেন্টাগনের কর্মকর্তারা জানান, মার্কিন প্রশাসন হামলার বিভিন্ন পরিকল্পনা পর্যালোচনা করছে, তবে প্রেসিডেন্ট এখনো কোনো চূড়ান্ত নির্দেশ দেননি। বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্র কেবল ইসরায়েলকে ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরোধে সহায়তা দিচ্ছে।
এদিকে নিউইয়র্কসহ যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে ইসরায়েলের হামলার বিরুদ্ধে এবং যুক্তরাষ্ট্রকে এ সংঘাতে না জড়ানোর দাবিতে বিক্ষোভ অনুষ্ঠিত হয়েছে। ইরানিয়ান-আমেরিকানদের মধ্যেও উদ্বেগ বাড়ছে—যুক্তরাষ্ট্র আসলেই ইরান-ইসরায়েল সংঘাতে সম্পৃক্ত হবে কি না।
ট্রাম্প কূটনৈতিক সমাধানের পথ খোলা রাখলেও বুধবার বলেন, ‘আমি এটা (ইরানে যৌথ হামলা) করতেও পারি, না-ও করতে পারি।’ একই সঙ্গে ইরানের ‘নিঃশর্ত আত্মসমর্পণ’-এর দাবি আবারও জানান।
ইরান স্পষ্ট জানিয়েছে, তারা কোনো ধরনের চাপের মুখে আলোচনা করবে না এবং আক্রমণ হলে কঠোর জবাব দেবে। জাতিসংঘে ইরানের মিশন থেকে জানানো হয়, ‘চাপের মুখে কোনো শান্তি নয়, আর একজন ব্যর্থ যুদ্ধবাজের সঙ্গে আলোচনাও নয়।’ স্পষ্টতই ট্রাম্পকেই ইঙ্গিত করা হয়েছে।
মার্কিন সামরিক বাহিনী ইতোমধ্যে ইউরোপ ও মধ্যপ্রাচ্যে বিমান ট্যাংকার, যুদ্ধজাহাজ, এয়ারক্রাফট ক্যারিয়ার ব্যাটল গ্রুপ ও এফ-২২ যুদ্ধবিমান মোতায়েন করেছে। মার্কিন প্রতিরক্ষামন্ত্রী পিট হেগসেথ জানান, প্রতিক্রিয়া হিসেবে ইরান ফোরদোর মতো স্থাপনায় হামলা হলে মধ্যপ্রাচ্যে যুক্তরাষ্ট্রের ঘাঁটিগুলো ঝুঁকিতে পড়বে। তাই প্রতিরক্ষা প্রস্তুতি আরও জোরদার করা হচ্ছে।
সেনেটের এক কমিটিতে হেগসেথ বলেন, ইরানে হামলার বিষয়ে সিদ্ধান্ত প্রেসিডেন্ট পর্যায়ে হবে এবং তিনি এ নিয়ে প্রকাশ্যে কিছু বলতে পারবেন না। তবে যেকোনো পরিস্থিতিতে সর্বোচ্চ সুরক্ষা নিশ্চিত করতে সব সামরিক সক্ষমতা প্রস্তুত রাখা হচ্ছে।
এদিকে রাশিয়া যুক্তরাষ্ট্রকে সতর্ক করে বলেছে, ইরানের বিরুদ্ধে কোনো সামরিক পদক্ষেপ না নিতে। রুশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই লাভরভ ও ওমানের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর এক ফোনালাপে এই বিষয়ে দ্রুত শান্তিপূর্ণ সমাধানের আহ্বান জানানো হয়েছে।