প্রকাশিত: : মে ১৪, ২০২৫, ০২:৫১ পিএম
সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান ট্রাম্পকে জানান, তিনি যুক্তরাষ্ট্রে ৬০০ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করবেন।
যুক্তরাষ্ট্র ও সৌদি আরবের মধ্যে ১৪২ বিলিয়ন ডলারের এক ঐতিহাসিক প্রতিরক্ষা চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে, যা মার্কিন ইতিহাসে এ ধরণের সবচেয়ে বড় চুক্তি বলে দাবি করেছে হোয়াইট হাউস। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের চারদিনের উপসাগরীয় সফরের সূচনালগ্নেই এই চুক্তিটি সম্পাদিত হয়। হোয়াইট হাউস একে ট্রাম্পের "লেনদেনকেন্দ্রিক পররাষ্ট্রনীতির" একটি সফল দৃষ্টান্ত হিসেবে তুলে ধরেছে।
এই সফরে ট্রাম্প প্রথমবারের মতো সিরিয়ার নতুন নেতা আহমেদ আল-শারারের সঙ্গে সাক্ষাৎ করবেন বলে জানানো হয়েছে। শারার একজন সাবেক বিদ্রোহী নেতা, যাঁর নেতৃত্বে আসাদ সরকার ২০২৪ সালে ক্ষমতাচ্যুত হয়। ২০০০ সালের পর এই প্রথম কোনো মার্কিন প্রেসিডেন্ট ও সিরিয়ার নেতার সরাসরি সাক্ষাৎ হতে যাচ্ছে।
রিয়াদে আয়োজিত এক বিনিয়োগ সম্মেলনে ট্রাম্প ঘোষণা দেন যে তিনি সিরিয়ার ওপর আরোপিত মার্কিন নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়ার পরিকল্পনা করছেন। তিনি জানান, এই সিদ্ধান্ত তিনি সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান ও তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রেচেপ তাইয়্যেপ এরদোয়ানের সঙ্গে আলোচনার পর নিয়েছেন। সিরিয়ার নতুন প্রশাসন ট্রাম্পকে তেল, অবকাঠামো, ও দামেস্কে একটি ‘ট্রাম্প টাওয়ার’ নির্মাণের সুযোগ দিয়ে তাঁকে প্রলুব্ধ করেছে বলে জানা গেছে।
যদিও নিষেধাজ্ঞা তোলার বিষয়টি এখনো পুরোপুরি চূড়ান্ত নয়, দামেস্কে এই খবরে উদযাপন শুরু হয়েছে। সিরীয় লেখক রাদওয়ান জিয়াদেহ একে ‘অবিশ্বাস্য’ বলে মন্তব্য করেছেন এবং ট্রাম্প টাওয়ারের একটি কাল্পনিক ছবি শেয়ার করেছেন।
ট্রাম্পের এই সফরের মূল লক্ষ্য ছিল বড় বাণিজ্য ও বিনিয়োগ চুক্তি অর্জন। যুবরাজ সালমান জানিয়েছেন, সৌদি আরব যুক্তরাষ্ট্রে প্রায় ৬০০ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করবে, যার মধ্যে রয়েছে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা খাতে ২০ বিলিয়ন ডলার, গ্যাস ও শক্তি সরঞ্জামে ১৪.২ বিলিয়ন এবং বোয়িং বিমান কেনায় প্রায় ৫ বিলিয়ন ডলার। যদিও হোয়াইট হাউসের প্রকাশিত সংখ্যাগুলো ৬০০ বিলিয়নের সমান হয়নি এবং অনেক চুক্তি বাইডেন প্রশাসনের সময় থেকেই আলোচনায় ছিল।
চুক্তির আওতায় যুক্তরাষ্ট্র সৌদি আরবকে বিমান, মহাকাশ, ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা ও সীমান্ত নিরাপত্তা খাতে উন্নত সরঞ্জাম ও সেবা দেবে। ট্রাম্পের রিয়াদ সফরকে ঘিরে রাজকীয় অভ্যর্থনা জানানো হয়, সৌদি F-15 জেট বিমান তাঁর এয়ারফোর্স ওয়ানকে এস্কর্ট করে। পরে সৌদি রাজপ্রাসাদে এক উচ্চপর্যায়ের বৈঠকে এলন মাস্ক, স্যাম অল্টম্যানসহ বিভিন্ন প্রযুক্তি ও বিনিয়োগ কোম্পানির প্রধানরা উপস্থিত ছিলেন।
ট্রাম্প রসিকতা করে বলেন, সৌদির বিনিয়োগ "এক ট্রিলিয়ন ডলার হওয়া উচিত।" এই সফর মার্কিন পররাষ্ট্রনীতির এক নতুন অধ্যায় উন্মোচন করেছে, যেখানে আন্তর্জাতিক আইনের চেয়ে বাণিজ্য ও নিরাপত্তার স্বার্থকে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। সমালোচকেরা বলছেন, এতে ট্রাম্প ও তাঁর ঘনিষ্ঠ ব্যবসায়ীদের প্রভাব বাড়ছে।
সফরের সবচেয়ে বিতর্কিত অংশ হচ্ছে কাতার সরকারের উপহার দেওয়া বিলাসবহুল বোয়িং ৭৪৭-৮ বিমান, যা সাময়িকভাবে প্রেসিডেন্ট প্লেন হিসেবে ব্যবহৃত হবে এবং পরে ট্রাম্প প্রেসিডেনশিয়াল লাইব্রেরিতে সংরক্ষিত থাকবে। ডেমোক্র্যাটরা একে “আকাশে ভাসমান প্রাসাদ” আখ্যা দিয়ে সমালোচনা করেছেন, যার জবাবে ট্রাম্প তাঁদের “ওয়ার্ল্ড ক্লাস লুজার” বলে কটাক্ষ করেন।
যখন সৌদি যুবরাজের সঙ্গে হাস্যোজ্জ্বল ট্রাম্প আলোচনা করছিলেন, তখন অনেকের মনে পড়ে যায় সাংবাদিক জামাল খাশোগি হত্যাকাণ্ডে সালমানের সংশ্লিষ্টতার কথা।
ট্রাম্প বলেন, সৌদি আরব যদি ইসরায়েলের সঙ্গে আব্রাহাম চুক্তিতে যুক্ত হয়, তা হলে সেটি হবে মধ্যপ্রাচ্যের ইতিহাসে এক বিশেষ দিন। তবে গাজার যুদ্ধের কারণে এই প্রক্রিয়া বিলম্বিত হয়েছে।
পরবর্তী পর্যায়ে ট্রাম্প সংযুক্ত আরব আমিরাত ও কাতার সফরে যাবেন। বিশ্লেষকরা মনে করছেন, সিরিয়ার ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়ার নীতিগত পরিবর্তনের পেছনে এই অঞ্চল থেকে আসা বড় বিনিয়োগের ভূমিকা রয়েছে।
শারার পক্ষ থেকে ট্রাম্পকে সিরিয়ায় ‘ট্রাম্প টাওয়ার’, গোলান হাইটস সংলগ্ন নিরস্ত্রীকরণ এলাকা, ইসরায়েলকে স্বীকৃতি এবং খনিজ সম্পদের মুনাফা ভাগাভাগির প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। তবে ট্রাম্পের ইসরায়েল সফর বাতিল করা হয়েছে নেতানিয়াহুর গাজা যুদ্ধনীতি নিয়ে অসন্তোষের কারণে।
এই সফরের প্রাক্কালে হামাস একটি মার্কিন জিম্মিকে মুক্তি দেয়, যা বিশ্লেষকদের মতে নেতানিয়াহুর ওপর যুদ্ধ বন্ধে চাপ সৃষ্টির কৌশল। তবে নেতানিয়াহু স্পষ্ট করে দিয়েছেন, “যুদ্ধ এখনই থামবে না।”