রবিবার, ২৭ এপ্রিল, ২০২৫

সবার জন্য বিনামূল্যে প্রাথমিক চিকিৎসা সেবা নিশ্চিতের সুপারিশ করতে যাচ্ছে স্বাস্থ্যখাত সংস্কার কমিশন

টিএনসি ডেস্ক

প্রকাশিত: : এপ্রিল ৭, ২০২৫, ০৬:২৯ পিএম

দেশের যেকোনো হাসপাতালে অস্বচ্ছল ২০ শতাংশ রোগী যেন বিনামূল্যে চিকিৎসা সেবা পান এবং বেসরকারি হাসপাতালগুলোতে দরিদ্র রোগীদের জন্য ১০ শতাংশ শয্যা বরাদ্দ রাখা হচ্ছে কিনা, তা কঠোরভাবে তদারকি করতে বলা হবে সুপারিশে।

সবার জন্য বিনামূল্যে প্রাথমিক চিকিৎসা সেবা নিশ্চিতের সুপারিশ করতে যাচ্ছে স্বাস্থ্যখাত সংস্কার কমিশন

সবার জন্য বিনামূল্যে প্রাথমিক চিকিৎসা সেবা ও ওষুধ নিশ্চিত, রেফারাল ব্যবস্থা চালু, অপ্রয়োজনীয় পরীক্ষা ও ওষুধ ব্যবহারে নিয়ন্ত্রণ আরোপসহ একাধিক গুরুত্বপূর্ণ প্রস্তাব দিতে যাচ্ছে স্বাস্থ্যখাত সংস্কার কমিশন। কমিশনের সদস্যরা জানিয়েছেন, দেশের যেকোনো হাসপাতালে অস্বচ্ছল ২০ শতাংশ রোগী যেন বিনামূল্যে চিকিৎসা সেবা পান এবং বেসরকারি হাসপাতালে দরিদ্র রোগীদের জন্য ১০ শতাংশ শয্যা বরাদ্দ রাখা হচ্ছে কিনা, তা কঠোরভাবে তদারকির সুপারিশ থাকবে।

কমিশনের প্রস্তাবে আরও থাকছে বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীদের জন্য নির্দিষ্ট বেতন-ভাতা চালু এবং প্রশিক্ষণকালীন অনারারি চিকিৎসকদের উপযুক্ত ভাতা প্রদানের সুপারিশ। প্রতিটি রোগীর জন্য ইউনিক আইডি চালু ও ই-প্রেসক্রিপশন ব্যবস্থার কথাও বলা হবে। বাংলাদেশ ডায়াবেটিক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ডা. একে আজাদ খানের নেতৃত্বে ১২ সদস্যের স্বাস্থ্যখাত সংস্কার কমিশন গঠিত হয় ২০২৩ সালের ১৭ নভেম্বর। চলতি বছরের ২৭ মার্চ কমিশনের মেয়াদ বাড়িয়ে ৩০ এপ্রিল পর্যন্ত নির্ধারণ করা হয়েছে। ডা. আজাদ খান জানিয়েছেন, ঈদের পর কমিশন চূড়ান্ত প্রতিবেদন জমা দেবে।

কমিশনের সদস্য ডা. আবু মোহাম্মদ জাকির হোসেন জানান, তারা হাসপাতালগুলোতে পর্যাপ্ত ওষুধ মজুত এবং ভর্তি রোগীদের জন্য বিনামূল্যে চিকিৎসা সেবা নিশ্চিত করার সুপারিশ করবেন। তিনি বলেন, গ্রামীণ এলাকায় প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবার অবকাঠামো থাকলেও নগর এলাকায় তা যথেষ্ট নয়। এ কারণে নগরে নতুন অবকাঠামো গড়ে তোলা ও প্রয়োজনে বেসরকারি খাতকে চুক্তিভিত্তিক যুক্ত করার পরামর্শ থাকবে। ইউনিয়ন পর্যায়ের স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্রগুলোকে প্রাথমিক চিকিৎসা কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তুলতে প্রতিটি কেন্দ্রে দুইজন এমবিবিএস চিকিৎসক, একজন মিডওয়াইফ, একজন ল্যাব টেকনিশিয়ান, একজন সহকারী কর্মী ও একজন প্রহরী নিয়োজিত রাখার প্রস্তাব করা হবে।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা হলো এমন একটি ব্যবস্থা, যা ব্যক্তির স্বাস্থ্য সচেতনতা, রোগ প্রতিরোধ, চিকিৎসা, পুনর্বাসন ও প্রশমনসেবা নিশ্চিত করে এবং রোগীর চাহিদা ও পছন্দের প্রতি শ্রদ্ধাশীল থাকে। গত মাসে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) এক জরিপে দেখা গেছে, ৯১.১ শতাংশ মানুষ চান প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবাকে যেন সংবিধানে বাধ্যতামূলক অধিকার হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। সে পরিপ্রেক্ষিতে সরকার যেন সকল নাগরিকের জন্য বাধ্যতামূলকভাবে প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করে—এমন সাংবিধানিক বিধান অন্তর্ভুক্তির সুপারিশও থাকবে।

কমিশন অপরিহার্য ওষুধের তালিকা সম্প্রসারণ, চিকিৎসকদের জন্য ‘বাংলাদেশ হেলথ সার্ভিস কমিশন’ গঠন এবং বেসরকারি হাসপাতালের ব্যবস্থাপনায় বোর্ড গঠনের প্রস্তাবও দেবে। বিশেষজ্ঞদের মতে, প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা বিকেন্দ্রীকরণ টারশিয়ারি হাসপাতালের ওপর চাপ কমাবে এবং একটি কার্যকর রেফারাল ব্যবস্থা গড়ে তুলবে। কমিশনের সদস্য অধ্যাপক ডা. সায়েদ মো. আকরাম হোসেন বলেন, জেনারেল প্র্যাকটিশনার (জিপি) পদ্ধতি চালু করা হবে, যেখানে রোগীদের প্রাথমিক চিকিৎসার পর প্রয়োজন অনুযায়ী রেফার করা হবে। এমবিবিএস চিকিৎসকেরাই জিপি হিসেবে তিন বছরের প্রশিক্ষণ শেষে এই দায়িত্ব পালন করবেন।

তিনি আরও জানান, স্থানীয় জিপি চিকিৎসকের রেফারেন্স ছাড়া কোনো রোগী বাড়তি চিকিৎসা নিতে পারবেন না—এমন ব্যবস্থা চালুর সুপারিশ থাকবে। পাশাপাশি, শহরাঞ্চলে জনসংখ্যা বিবেচনায় পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রের আদলে প্রাথমিক চিকিৎসা কেন্দ্র স্থাপনের কথাও বলা হবে।

প্রস্তাবনায় প্রত্যেক জেলায় একজন অতিরিক্ত সিভিল সার্জন ও দুইজন ডেপুটি সিভিল সার্জন নিয়োগ এবং উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ও সিভিল সার্জনকে প্রেসক্রিপশন মনিটরিংয়ের দায়িত্ব দেওয়ার কথাও থাকবে।

বিচার বিভাগের আদলে চিকিৎসকদের জন্য একটি স্বাধীন ‍‍`হেলথ সার্ভিস কমিশন‍‍` গঠনের সুপারিশ করা হবে, যার সব পর্যায়ের দায়িত্বে চিকিৎসক থাকবেন এবং মহাপরিচালক হবেন সচিব পদমর্যাদার। ডা. জাকির হোসেন বলেন, এই কমিশনের অধীনে চিকিৎসকদের চাকরির নিরাপত্তা ও বর্তমান সুবিধা বহাল রাখার পাশাপাশি তা আরও বাড়ানোর সুযোগ থাকবে। দুর্গম অঞ্চলে কর্মরতদের বাড়তি সুবিধা এবং গবেষক ও শিক্ষকদের জন্য বাড়তি বেতন নিশ্চিত করার কথাও থাকছে কমিশনের সুপারিশে।

Link copied!