প্রকাশিত: : এপ্রিল ২৬, ২০২৫, ০৩:৪৯ পিএম
যানজট নিয়ন্ত্রণ ও সড়কে শৃঙ্খলা ফেরাতে এ উদ্যোগ। দেশীয় প্রযুক্তিতে সংকেতবাতিগুলো তৈরি করছে বুয়েট।
যানজট নিয়ন্ত্রণ ও সড়কে শৃঙ্খলা ফেরাতে ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের ২২টি মোড়ে নতুন ট্রাফিক সিগন্যাল বসানো হচ্ছে। দেশীয় প্রযুক্তিতে তৈরি এসব ট্রাফিক লাইট নির্মাণ করছে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট)। পুরো প্রকল্পে ব্যয় হচ্ছে প্রায় ১৮ কোটি টাকা।
বুয়েটের বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, এটি স্বল্পমেয়াদি একটি উদ্যোগ। ঢাকার নির্দিষ্ট একটি করিডরে নতুন এসব সিগন্যাল বসানো হচ্ছে, যাতে যান চলাচলে শৃঙ্খলা আসে। নির্ধারিত করিডরের মধ্যে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) ১৪টি এবং ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) ৮টি মোড় অন্তর্ভুক্ত।
গত বছরের ১৬ সেপ্টেম্বর অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে বুয়েটের অধ্যাপক মোয়াজ্জেম হোসেন ও অধ্যাপক মো. হাদিউজ্জামানের বৈঠকে ঢাকার যানজট নিরসনে স্বল্প, মধ্যম ও দীর্ঘমেয়াদি বেশ কিছু প্রস্তাবনা উঠে আসে। এর ধারাবাহিকতায় গত ১৬ অক্টোবর বুয়েটে আয়োজিত `ঢাকা শহরের ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা` শীর্ষক এক সভায় ট্রাফিক লাইট বসানোর সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়।
ডিএনসিসির ট্রাফিক ইঞ্জিনিয়ারিং সার্কেলের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী খন্দকার মাহবুব আলম প্রথম আলোকে বলেন, “সরকারের উচ্চপর্যায়ের নির্দেশনার ভিত্তিতে বুয়েটের মাধ্যমে ট্রাফিক লাইট স্থাপনের কাজ চলছে। আশা করছি, এই উদ্যোগ যানজট নিরসনে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখবে।”
প্রাথমিকভাবে দুই সিটির চারটি মোড়ে ট্রাফিক সিগন্যাল বসানো হচ্ছে। এগুলো হলো—ঢাকা উত্তরের কারওয়ান বাজার ও ফার্মগেট এবং দক্ষিণের বাংলামোটর ও হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টাল মোড়। এর মধ্যে ফার্মগেট, কারওয়ান বাজার ও ইন্টারকন্টিনেন্টালে সিগন্যাল স্থাপনের কাজ প্রায় শেষ। ফার্মগেট মোড়ে পরীক্ষামূলকভাবে ট্রাফিক লাইট চালু করা হয়েছে। বাংলামোটর মোড়ে কিছু কাজ এখনো বাকি। মে মাসের মাঝামাঝি এসব সিগন্যাল চালু করার পরিকল্পনা রয়েছে।
স্বয়ংক্রিয় ও আধা-স্বয়ংক্রিয় নিয়ন্ত্রণ
বুয়েটের তথ্য অনুযায়ী, ট্রাফিক লাইট ও কন্ট্রোলার দেশীয় বাজার থেকে সংগৃহীত উপকরণ দিয়ে তৈরি হচ্ছে। এগুলো পরিচালিত হবে আধা-স্বয়ংক্রিয় পদ্ধতিতে। স্বাভাবিক অবস্থায় নির্দিষ্ট সময় পর পর স্বয়ংক্রিয়ভাবে সিগন্যাল পরিবর্তন হবে। তবে যানবাহনের চাপের ভিত্তিতে প্রয়োজনে অপারেটর ম্যানুয়ালি সংকেত নিয়ন্ত্রণ করতে পারবেন।
সিগন্যাল চালুর পর ট্রাফিক পুলিশ সদস্যরা আর হাতের ইশারায় যান চলাচল নিয়ন্ত্রণ করবেন না। যানবাহন চালকদের সংকেত মেনে চলতে হবে। পুলিশের দায়িত্ব হবে কেবল সিগন্যাল অমান্যকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া।
সফলতা নিয়ে সংশয়
নতুন ট্রাফিক লাইটের কার্যকারিতা নিয়ে কিছু প্রকৌশলী সন্দেহ প্রকাশ করেছেন। তারা বলছেন, বুয়েটের উদ্যোগ ব্যয় সাশ্রয়ী হলেও ব্যবহৃত প্রযুক্তি কিছুটা পুরোনো—রিলে পদ্ধতির—যাতে যান্ত্রিক ত্রুটির ঝুঁকি বেশি।
পরিবহন বিশেষজ্ঞ এবং বুয়েটের অধ্যাপক মো. হাদিউজ্জামান মনে করেন, ট্রাফিক লাইট একা যানজটের সমাধান নয়। এটি কার্যকর করতে ছয়টি পূর্বশর্ত বাস্তবায়নের প্রয়োজন রয়েছে, যা প্রধান উপদেষ্টার কাছে সুপারিশ আকারে দেওয়া হয়েছে।
সেগুলো হলো—মূল সড়কে ধীরগতির যান নিষিদ্ধ করা, মোড়ের ৫০-১০০ মিটারের মধ্যে পার্কিং বা থামা নিষিদ্ধ করা, পুলিশের কার্যক্রম আগের নিয়মে ফিরিয়ে আনা, নির্দিষ্ট স্থান ছাড়া যাত্রী ওঠানামা বন্ধ করা এবং ভ্রাম্যমাণ ট্রাফিক পর্যবেক্ষক দল গঠন করা।
অধ্যাপক হাদিউজ্জামান বলেন, “ঢাকার সড়কে ধারণক্ষমতার তুলনায় ৫-৬ গুণ বেশি যান চলে। তাই গণপরিবহনব্যবস্থাকে মেরুদণ্ড হিসেবে দাঁড় করাতে হবে। তখনই ট্রাফিক লাইট প্রকল্প কার্যকর হবে এবং সড়কে শৃঙ্খলা আসবে।”