প্রকাশিত: : জুন ২৩, ২০২৫, ০৩:১৩ পিএম
বাংলাদেশের নবায়নযোগ্য জ্বালানি খাতে এক নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হলো। দেশের ইস্ট কোস্ট গ্রুপের সহযোগী প্রতিষ্ঠান রেডিয়েন্ট অ্যালায়েন্স প্রথমবারের মতো যুক্তরাষ্ট্রে সৌর পিভি মডিউল রপ্তানি করেছে। ২০২৫ সালের ১৯ জুন ক্লিনগ্রিড ইনকরপোরেশন নামের যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক একটি প্রতিষ্ঠানের কাছে এই প্রথম চালানটি পাঠানো হয়।
চার বছরের রপ্তানি চুক্তির আওতায় ২০২৮ সাল পর্যন্ত রেডিয়েন্ট অ্যালায়েন্স মোট ৬৪.৬০ মেগাওয়াট সোলার মডিউল সরবরাহ করবে, যার বাজারমূল্য প্রায় ২১৫ কোটি টাকা। শুধু ২০২৫ সালেই সরবরাহ করা হবে ১২.৪০ মেগাওয়াট প্যানেল।
রেডিয়েন্টের সাভারের আশুলিয়ায় অবস্থিত আধুনিক, সম্পূর্ণ স্বয়ংক্রিয় কারখানায় ১০০ ও ২০০ ওয়াটের সোলার প্যানেল উৎপাদিত হচ্ছে। বছরে ৬০০ মেগাওয়াট উৎপাদন সক্ষমতাসম্পন্ন এই কারখানাটিকে দেশের অন্যতম উচ্চমানের প্ল্যান্ট হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে।
প্রতিষ্ঠানটির প্রধান নির্বাহী মাসুদুর রহিম বলেন, "এটা শুধু রেডিয়েন্টের নয়, পুরো বাংলাদেশের জন্য গর্বের একটি মুহূর্ত। আমরা প্রমাণ করছি যে ‘মেইড ইন বাংলাদেশ’ পণ্যও এখন আন্তর্জাতিক ক্লিনটেক বাজারে প্রতিযোগিতা করতে পারে।"
শিল্পসংশ্লিষ্টরা মনে করছেন, এই রপ্তানির মাধ্যমে বাংলাদেশ সোলার প্যানেল উৎপাদনে একটি নতুন সম্ভাবনাময় দেশ হিসেবে আত্মপ্রকাশ করছে। বর্তমানে বিশ্ববাজারে চীন, ভারত ও ভিয়েতনাম এই খাতের নেতৃত্ব দিচ্ছে। ইতোমধ্যে ২০২৬ সালের জন্য আরও ৩০০ মেগাওয়াট মডিউল সরবরাহের বিষয়ে আলোচনা চলছে।
রেডিয়েন্ট জানায়, এর আগে তারা প্রায় এক দশক ধরে দেশের বাজারে সোলার হোম সিস্টেমের জন্য পণ্য সরবরাহ করত। আন্তর্জাতিক বাজারে প্রবেশের লক্ষ্যে সম্প্রতি নতুন একটি উৎপাদন লাইন চালু করা হয়েছে। এখন ৫০ থেকে ৭০০ ওয়াট পর্যন্ত বিভিন্ন ক্ষমতার মডিউল তৈরি করছে প্রতিষ্ঠানটি। এর পেছনে প্রায় ২ কোটি ডলার বিনিয়োগ করা হয়েছে।
বাংলাদেশ সোলার মডিউল প্রস্তুতকারক সমিতির (এসএমএমএবি) সাধারণ সম্পাদক গোলাম বাকী মাসুদ বলেন, "এই রপ্তানি প্রমাণ করে যে বাংলাদেশ এখন আন্তর্জাতিক মানের নবায়নযোগ্য জ্বালানি পণ্য তৈরি করতে সক্ষম।"
তিনি জানান, যুক্তরাষ্ট্রে চীনা প্যানেলের ওপর অ্যান্টি-ডাম্পিং শুল্কের কারণে বাংলাদেশের সামনে একটি নতুন সুযোগ তৈরি হয়েছে।
এসএমএমএবি সভাপতি মুনাওয়ার মিসবাহ মঈন বলেন, "রেডিয়েন্টের এই রপ্তানি দেশের অন্যান্য উদ্যোক্তাদের জন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করবে। তবে স্থানীয় শিল্পকে টিকিয়ে রাখতে সরকারি নীতিগত সহায়তা অত্যন্ত জরুরি।"
তিনি বলেন, বিদেশি নিম্নমানের সোলার প্যানেল কম দামে বাজার দখল করায় দেশীয় পণ্য টিকতে পারছে না। মান নিয়ন্ত্রণ না থাকায় এর প্রযুক্তিগত ও নিরাপত্তা মানও প্রশ্নবিদ্ধ।
তিনি সরকারের কাছে আহ্বান জানান, সরকারি প্রকল্পগুলোতে স্থানীয় পণ্য ব্যবহারের জন্য একটি বাধ্যতামূলক কোটার ব্যবস্থা চালু করা হোক।