প্রকাশিত: : জুন ১২, ২০২৫, ০৭:২০ পিএম
বিদেশে সম্পদ পাচারে অভিযুক্ত ধনকুবেরদের সঙ্গে `আর্থিক নিষ্পত্তি`তে রাজি হওয়ার ইঙ্গিত দিয়েছে বাংলাদেশ। নোবেলজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকারের সম্পদ পুনরুদ্ধার প্রচেষ্টার নেতৃত্বদানকারী বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুর ফিন্যান্সিয়াল টাইমসকে (এফটি) এ কথা বলেছেন।
যুক্তরাজ্যের এই সংবাদমাধ্যমকে আহসান এইচ মনসুর বলেন, কম গুরুতর অভিযোগের ক্ষেত্রে `নিষ্পত্তি` একটি সম্ভাব্য বিকল্প হতে পারে।
তিনি আরও বলেন, ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকারঘনিষ্ঠ ব্যবসায়ী ও রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বদের কাছ থেকে অর্থ উদ্ধারে ভবিষ্যতে আন্তর্জাতিক মামলা পরিচালনার জন্য ১০০ মিলিয়ন ডলার পর্যন্ত সংগ্রহ করার লক্ষ্য রয়েছে তার।
গত বছরের আগস্টে ছাত্র-নেতৃত্বাধীন অভ্যুত্থানে শেখ হাসিনা ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর দায়িত্ব নেওয়া অন্তর্বর্তী সরকার বলেছে, হাসিনা প্রশাসনের ঘনিষ্ঠরা দেশ থেকে বিলিয়ন বিলিয়ন ডলারের সম্পদ পাচার করেছেন।
চলতি সপ্তাহে অন্যান্য সরকারি নেতা ও কর্মকর্তাদের সঙ্গে যুক্তরাজ্য সফরের আগে ঢাকায় এক সাক্ষাৎকারে আহসান মনসুর বলেন, অভিযুক্ত ব্যক্তিদের কার্যক্রমের ধরন অনুযায়ী বাংলাদেশ ব্যাংক পদক্ষেপ গ্রহণ করবে।
তিনি বলেন, `যদি লঙ্ঘনের ধরন তুলনামূলক হালকা হয়...আমরা দেওয়ানি মামলা করব, এবং আর্থিক নিষ্পত্তিও সেই প্রক্রিয়ার অংশ হবে।` তবে কাদের বিরুদ্ধে এই ধরনের পদক্ষেপ নেওয়া হতে পারে, সে বিষয়ে তিনি কিছু জানাননি।
ড. ইউনূসের নেতৃত্বাধীন প্রশাসন ইতিমধ্যে শেখ হাসিনাসহ পূর্বে রাজনৈতিকভাবে প্রভাবশালী পরিবারগুলোর বিরুদ্ধে ১১টি অগ্রাধিকারমূলক তদন্ত শুরু করেছে।
অন্তর্বর্তী সরকার দেশের অভ্যন্তরে কিছু ব্যাংক অ্যাকাউন্ট জব্দ করেছে এবং বিদেশি আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোর সঙ্গে মিলে হাসিনার ১৫ বছরের শাসনামলে দেশের বাইরে `পাচার হওয়া` অর্থ ফিরিয়ে আনার প্রচেষ্টা চালাচ্ছে।
এ সপ্তাহে লন্ডন সফরে ড. ইউনূস যুক্তরাজ্য কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে আরও `আরও উদ্যমী সহায়তা` চেয়েছেন এসব অর্থ অনুসন্ধান ও পুনরুদ্ধারের ক্ষেত্রে।
প্রধান উপদেষ্টা এফটিকে বলেন, `এটা চুরির টাকা।` তিনি আরও অলেন, এই অর্থ অনুসন্ধানে সহায়তার বিষয়ে যুক্তরাজ্যের উচিত `আইনি ও...নৈতিকভাবে` বাধ্যবাধকতা অনুভব করা।
সরকারের গঠিত কমিশনের প্রস্তুত করা ডিসেম্বরে প্রকাশিত অর্থনৈতিক শ্বেতপত্র অনুযায়ী, শেখ হাসিনার শাসনামলে দেশ থেকে প্রায় ২৩৪ বিলিয়ন ডলার পাচার হয়েছে।
সাবেক আইএমএফ কর্মকর্তা আহসা মনসুর ও সরকারের অন্য নেতাদের অভিযোগ, হাসিনার সহযোগীরা বিভিন্ন ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ দখল করে ভুয়া ঋণ গ্রহণ কিংবা সরকারি অবকাঠামো প্রকল্প থেকে অর্থ আত্মসাতের মাধ্যমে এই অর্থ পাচার করেছেন।
তবে গত মাসে সব ধরনের কার্যক্রম নিষিদ্ধ হওয়া আওয়ামী লীগের সমর্থকেরা বলছেন, দুর্নীতির বিরুদ্ধে তাদের বিরুদ্ধে এসব অভিযোগ ও ব্যবস্থা গ্রহণ `রাজনৈতিক প্রতিশোধমূলক` কাজ।
ড. ইউনূস গত সপ্তাহে জানান, আগামী বছরের এপ্রিলে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।
আহসান মনসুর বলেন, তারা ইতিমধ্যে কয়েকটি লিটিগেশন ফান্ডিং প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যোগাযোগ করেছেন এবং বাংলাদেশে এসে সহায়তা করতে তাদের আমন্ত্রণ জানিয়েছেন।
লিটিগেশন ফান্ডিং প্রতিষ্ঠানগুলো আইনজীবী ও আদালতের খরচসহ দেওয়ানি মামলার যাবতীয় ব্যয় বহন করে। বিনিময়ে নিষ্পত্তির অর্থ থেকে একটি অংশ বা নির্ধারিত অর্থ পেয়ে থাকে, যদি মামলায় সাফল্য আসে।
গভর্নর বলেন, `আমরা লিটিগেশন ফান্ডিংয়ের দিকে নজর দিয়েছি এবং বেশ ইতিবাচক সাড়া পাচ্ছি। আমরা চাই, যতটা সম্ভব এই ফান্ডের মাধ্যমেই অর্থায়ন হোক।`
সিডনিভিত্তিক লিটিগেশন ফান্ডিং প্রতিষ্ঠান অমনি ব্রিজওয়ে জানিয়েছে, চলতি বছরের প্রথমার্ধে তাদের প্রতিনিধিরা ঢাকায় এসে মনসুরসহ ১৬টির বেশি ব্যাংকের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের সঙ্গে `একাধিক বৈঠক` করেছে।
প্রতিষ্ঠানটির এনফোর্সমেন্ট ম্যানেজিং ডিরেক্টর উইগার ভিয়েলিঙ্গা বলেন, `বিদেশে অবৈধভাবে পাচার হওয়া অর্থ পুনরুদ্ধারে আমরা ব্যাংকিং খাতকে সহায়তা করতে বিশেষ আগ্রহ প্রকাশ করেছি।`