রবিবার, ২৭ এপ্রিল, ২০২৫

সড়কে মৃত্যুর ৩০ শতাংশই মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায়, বেপরোয়া গতি মূল কারণ

টিএনসি ডেস্ক

প্রকাশিত: : এপ্রিল ৬, ২০২৫, ০৩:৫৩ পিএম

সড়কে মৃত্যুর ৩০ শতাংশই মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায়, বেপরোয়া গতি মূল কারণ

শুক্রবার রাতে ঢাকার পল্লবীর কালশী ফ্লাইওভারে এক মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় দুই যুবক নিহত হন। পুলিশের ভাষ্যমতে, দুটি যানই দ্রুতগতিতে চলছিল এবং বেপরোয়া গাড়ি চালানোর কারণেই এই মর্মান্তিক দুর্ঘটনা ঘটে।

রোড সেফটি ফাউন্ডেশন ও বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ) বলছে, ঈদ ভ্রমণের কারণে গত দুই সপ্তাহে সড়ক দুর্ঘটনা বেড়ে গেছে। দেশে ঘটে যাওয়া সড়ক দুর্ঘটনার প্রায় ৩০ শতাংশই ঘটে মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায়।

যাত্রী কল্যাণ সমিতির তথ্য অনুযায়ী, ২৪ মার্চ থেকে ৪ এপ্রিল পর্যন্ত সময়ে সারাদেশে ২১৫টি সড়ক দুর্ঘটনায় অন্তত ২৩৯ জন নিহত ও ৫১৬ জন আহত হয়েছে। যদিও সংগঠনটি বলছে, তাদের পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদন এখনো প্রস্তুত নয়, তবে মোটরসাইকেল দুর্ঘটনার হার গত বছরের মতোই হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

গত বছরের ঈদুল ফিতরের সময় ১৫ দিনে ৩৯৯টি দুর্ঘটনায় ৪০৭ জন নিহত হন, যার মধ্যে ১৯৮টি ছিল মোটরসাইকেল দুর্ঘটনা। এসব দুর্ঘটনায় নিহত হয় ১৬৫ জন, যা মোট দুর্ঘটনার ৪৯.৬২ শতাংশ এবং মোট প্রাণহানির ৪০.৫৪ শতাংশ।

বিআরটিএর হিসাবেও দেখা গেছে, ২০২৪ সালের জানুয়ারিতে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত ৪০৪ জনের মধ্যে ১৩৭ জন বা ৩৩.৯ শতাংশ ছিলেন মোটরসাইকেল দুর্ঘটনার শিকার। ফেব্রুয়ারি থেকে ডিসেম্বর পর্যন্তও এই হার গড়ে ৩০ শতাংশের আশেপাশে ঘোরাফেরা করেছে। চলতি বছরের জানুয়ারিতে এই হার বেড়ে ৪৩.৩ শতাংশে পৌঁছেছে।

রোড সেফটি ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক সাইদুর রহমান বলেন, দেশে মোটরসাইকেল দুর্ঘটনার ৫৮ শতাংশই ঘটে অতিরিক্ত গতির কারণে। এ জন্য কিছুটা দায়ী মোটরসাইকেল কোম্পানিগুলোর বিজ্ঞাপনও, যেখানে বাইক চালকদের বেপরোয়া চালনায় উৎসাহ দেওয়া হয়। এছাড়া দেশের মোট যানবাহনের ৭১ শতাংশই মোটরসাইকেল, যেগুলোর বড় অংশ চালায় অপ্রাপ্তবয়স্ক কিংবা লাইসেন্সবিহীন কিশোররা। হেলমেট ব্যবহারের ক্ষেত্রেও অনিয়ম দেখা যায়, এমনকি শহরে ব্যবহৃত হেলমেটগুলোর মানও খুব নিম্নমানের।

তিনি বলেন, পুলিশের সামনে দিয়েও এসব কিশোর চালক নিম্নমানের হেলমেট নিয়ে যাতায়াত করছে, অথচ পুলিশ কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছে না। হেলমেটের মান, গতি নিয়ন্ত্রণ, বাইকে অতিরিক্ত যাত্রী বহন—এসব বিষয়ে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হলে দুর্ঘটনা অনেকটাই কমে যেত।

অতিরিক্ত পুলিশ মহাপরিদর্শক (হাইওয়ে পুলিশ) মো. দেলোয়ার হোসেন মিঞা জানান, পুলিশ তাদের দায়িত্ব পালনে মাঠে রয়েছে। গুরুত্বপূর্ণ সড়কগুলোর প্রবেশমুখে হেলমেট ব্যবহারে সচেতনতা বাড়ানো এবং নিয়ন্ত্রিত গতিতে চালনার জন্য নিয়মিত মাইকিং করা হচ্ছে। লাইসেন্সবিহীন ও হেলমেট ছাড়া বাইক চালকদের বিরুদ্ধে মামলা ও গাড়ি জব্দ করা হচ্ছে। তবে তিনি মনে করেন, এই সমস্যার একমাত্র সমাধান পুলিশ করতে পারবে না—এর জন্য পরিবার, সমাজ ও ব্যক্তি পর্যায়েও সচেতনতা তৈরি করতে হবে।

এদিকে ঈদের ছুটিতে রাজধানীর বিভিন্ন হাসপাতালে সড়ক দুর্ঘটনায় আহত রোগীর সংখ্যা বেড়ে গেছে। ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ও নিটোরে (পঙ্গু হাসপাতাল) বেশি সংখ্যক রোগী চিকিৎসা নিচ্ছেন, যাদের মধ্যে অধিকাংশই মোটরসাইকেল ও অটোরিকশা দুর্ঘটনার শিকার।

নিটোর হাসপাতাল সূত্র জানায়, ৩০ মার্চ থেকে ২ এপ্রিল পর্যন্ত সড়ক দুর্ঘটনায় আহত হয়ে মোট ৪১২ জন রোগী সেখানে চিকিৎসা নিয়েছেন। এর মধ্যে ১৪১ জন মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় আহত।

এদিকে কালশী ফ্লাইওভারে দুর্ঘটনায় নিহত হন ঢাকার মাটিকাটার বাসিন্দা নবম শ্রেণির ছাত্র মো. তোফাজ্জল (১৬) এবং চাঁদপুরের বাসিন্দা মো. রিয়াদ হোসেন (১৮)। রাত সাড়ে ১০টার দিকে ঘটে যাওয়া এই দুর্ঘটনার পর দুজনকে ঢাকা মেডিকেলে নেওয়া হলে সেখানে তারা মারা যান।

পল্লবী থানার ওসি মো. নজরুল ইসলাম জানান, অনলাইন গেম ‘ফ্রি ফায়ার’-এর মাধ্যমে তাদের মধ্যে বন্ধুত্ব হয়েছিল। ঈদের ছুটিতে রিয়াদ ঢাকায় তোফাজ্জলের সঙ্গে দেখা করতে আসে। দুর্ঘটনায় জড়িত গাড়িটি জব্দ করা হয়েছে এবং চালককে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

Link copied!