মঙ্গলবার, ০২ ডিসেম্বর, ২০২৫

দেশে প্রতি ৮ শিশুর একজন অপুষ্টিতে ভুগছে

টিএনসি ডেস্ক

প্রকাশিত: : ডিসেম্বর ২, ২০২৫, ০৫:০১ পিএম

দেশে প্রায় ছয় কোটি শিশুর মধ্যে অপুষ্টি, সহিংসতা, শিশুশ্রম, শিক্ষাবঞ্চনা ও দক্ষতার ঘাটতিসহ নানামুখী সংকট বাড়ছে—এমন চিত্র তুলে ধরে শিশু অধিকার সুরক্ষায় রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে নীতি সংস্কার ও বিনিয়োগ বাড়ানোর আহ্বান জানিয়েছে ইউনিসেফ।

দেশে প্রতি ৮ শিশুর একজন অপুষ্টিতে ভুগছে

দেশে মোট শিশু প্রায় ছয় কোটি। এর মধ্যে প্রতি আটজনে একজন অপুষ্টিতে ভুগছে, যা প্রায় ১২ দশমিক ৯ শতাংশ। ২০১৯ সালে এ হার ছিল ৯ দশমিক ৮ শতাংশ। ১-১৪ বছর বয়সী ৮৬ শতাংশ শিশু ঘরে সহিংস শাসনের শিকার হয়। ৫-১৭ বছর বয়সী ৯ দশমিক ২ শতাংশ শিশু শিশুশ্রমের সঙ্গে যুক্ত, যা ২০১৯ সালের ছিল ৬ দশমিক ৮ শতাংশ। স্কুলগামী শিশুর সংখ্যা এখনো শতভাগ নিশ্চিত করা যায়নি। ৬ দশমিক ৭ শতাংশ শিশু স্কুলের বাইরে। এছাড়া দক্ষতায়ও পিছিয়ে শিশুরা। তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণীতে পড়ুয়া শিশুদের মধ্যে মৌলিক দক্ষতা নেই ৭১ দশমিক ৪ শতাংশে। গাণিতিক দক্ষতা নেই ৭৮ দশমিক ৮ শতাংশের।

গতকাল রাজধানীতে আয়োজিত শিশুর অধিকার রক্ষায় রাজনৈতিক দলগুলোর ইশতেহার স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে এসব তথ্য জানায় জাতিসংঘের শিশুবিষয়ক সংস্থা ইউনিসেফ।

ইউনিসেফ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের শিশুদের শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও শ্রম নিয়ে গবেষণা করেছে। দেশে শিশুদের অধিকার নিশ্চিত করতে নানা পদক্ষেপের প্রয়োজন রয়েছে বলে মনে করে সংস্থাটি। সেটি নিশ্চিত করতে পারে রাজনৈতিক দলগুলো। আগামী নির্বাচনে যে দল ক্ষমতায় আসবে তাদেরই দায়িত্ব নিতে হবে। নির্বাচনের ইশতেহারে থাকতে হবে শিশু অধিকারে বিনিয়োগ ও নীতি সংস্কার।

ইউনিসেফের আয়োজনে এ অনুষ্ঠানে নিজেদের অঙ্গীকার তুলে ধরেছেন বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী, এবি পার্টি, এনসিপি, গণঅধিকার পরিষদ, জাতীয় পার্টি, খেলাফত মজলিস, নাগরিক ঐক্য ও গণসংহতি আন্দোলনসহ রাজনৈতিক দলগুলো। পরে ইউনিসেফের ১০ দফায় স্বাক্ষর করেন এসব রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধিরা।

অনুষ্ঠানে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আব্দুল মঈন খান বলেন, ‘‌শিশুরা কোনো রাজনৈতিক দলের নয়, তারা রাজনীতির ঊর্ধ্বে। তাই আমি আজ ছয় কোটি শিশুর পক্ষে কথা বলছি। শিশু অধিকার রক্ষায় ১৯৯৯ সালে বিশ্ব যখন কনভেনশন করে তারও ১০ বছর আগে অর্থাৎ ১৯৮৯ সালে আমরা মহিলা ও শিশু মন্ত্রণালয় করেছি। কিন্তু সীমিত সম্পদের কারণে শিশুদের জন্য আলাদাভাবে আমরা বেশি কিছু করতে পারিনি। সেটা আমাদের করতে হবে।’ জামায়াতে ইসলামীর ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সেক্রেটারি শফিকুল ইসলাম মাসুদ বলেন, ‘‌আপনারা শিশুর শিক্ষা ও স্বাস্থ্যে বাজেটের ১০ থেকে ১৫ শতাংশ রাখার কথা বলছেন। সেটা আমরা আগে থেকে শুরু করেছি। প্রান্তিক পর্যায়ে স্কুল করা, প্রতিবন্ধীদের জন্য শিক্ষার ব্যবস্থা করা—এগুলো করছি।’

এনসিপি নেত্রী তাসনিম জারা বলেন, ‘‌সামাজিক সমস্যা ও দুর্নীতির পাশাপাশি রাজনৈতিক সহিংসতাও শিশুদের জীবনে গভীর প্রভাব ফেলে। সব রাজনৈতিক দল শিশু অধিকার বাস্তবায়নের প্রতিশ্রুতি দিচ্ছে। কিন্তু তা বাজেট ও কার্যকর পদক্ষেপের মাধ্যমে বাস্তবে রূপ দিতে হবে। শিশুশ্রম, বাল্যবিবাহ, দুর্বল শিক্ষা ব্যবস্থা—এসব বন্ধ করে মানসম্পন্ন শিক্ষা, দক্ষতা এবং জলবায়ু-সহনশীল স্কুল-হাসপাতাল নিশ্চিত করতে হবে।’

অনুষ্ঠানে বাংলাদেশে ইউনিসেফের প্রতিনিধি রানা ফ্লাওয়ার্স বলেন, ‘আজকের শিশু অধিকার ইশতাহারে স্বাক্ষর করাটা কথাকে কাজে রূপান্তর ও কাজের মধ্য দিয়ে আশাবাদ ছড়িয়ে দেয়ার একটি প্রতিশ্রুতি। ইশতাহারে শিশুদের জন্য সুস্পষ্ট ও অর্জন করার মতো পরিবর্তনের পথ দেখানো হয়েছে, যা মানবসম্পদ উন্নয়নে সহায়তা করবে এবং আগামী দিনে একটি আরো শক্তিশালী বাংলাদেশ গড়ে তুলবে।’

অনুষ্ঠানে ইউনিসেফের ১০টি প্রস্তাব তুলে ধরা হয়। তার মধ্যে অন্যতম—শিশুদের জন্য মানসম্মত ও সমন্বিত স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করা; শিশুদের জন্য নিরাপদ পরিবেশ নিশ্চিত করা; সব শিশুর জন্য নয় বছর মেয়াদি অবৈতনিক, মানসম্মত ও বাধ্যতামূলক সর্বজনীন শিক্ষা নিশ্চিত করা; শূন্য থেকে ছয় বছর বয়সী দারিদ্র্যের ঝুঁকিতে থাকা সব শিশুর জন্য শিশু অনুদান চালু করে দারিদ্র্য নিরসনে পদক্ষেপ নেয়া; জলবায়ু পরিবর্তনজনিত দুর্যোগে ক্ষতিগ্রস্ত ও বাস্তুচ্যুত শিশুদের সুরক্ষা নিশ্চিত করা; বিশেষ করে স্বাস্থ্য ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পানি পরিশোধন, প্রয়োজনীয় অবকাঠামো উন্নয়ন ও সব শিশুর জন্য নিরাপদ পয়োনিষ্কাশন সেবা নিশ্চিত করা; প্রতিটি শিশুর ভবিষ্যৎ সুরক্ষিত করা, প্রতিটি শিশুর জন্মনিবন্ধন নিশ্চিত করা।

Link copied!