রবিবার, ১৩ জুলাই, ২০২৫

ত্রাণ নিতে গিয়ে মে থেকে প্রায় ৮০০ ফিলিস্তিনি নিহত

টিএনসি ডেস্ক

প্রকাশিত: : জুলাই ১৩, ২০২৫, ১২:০৯ এএম

ত্রাণ নিতে গিয়ে মে থেকে প্রায় ৮০০ ফিলিস্তিনি নিহত

ইসরায়েলের তিন মাসের অবরোধ শিথিল করে গত ২০ মে গাজায় পুনরায় ত্রাণ প্রবেশের অনুমতি দিলেও, এই মানবিক সহায়তা এখন ফিলিস্তিনিদের জন্য মৃত্যুর ফাঁদে পরিণত হয়েছে। জাতিসংঘের মানবাধিকার দপ্তরের সাম্প্রতিক এক প্রতিবেদনে জানা গেছে, মে মাসের শেষ থেকে ৭ জুলাই পর্যন্ত ত্রাণ নিতে গিয়ে প্রাণ হারিয়েছেন অন্তত ৭৯৮ জন ফিলিস্তিনি।

জেনেভায় এক ব্রিফিংয়ে জাতিসংঘের মুখপাত্র রাভিনা শামদাসানি জানান, নিহতদের মধ্যে ৬১৫ জন প্রাণ হারিয়েছেন গাজা হিউম্যানিটারিয়ান ফাউন্ডেশন (জিএইচএফ)-এর আশপাশে এবং ১৮৩ জন নিহত হয়েছেন ত্রাণকেন্দ্রে যাওয়ার পথে।

ইসরায়েলি প্রস্তাবে গঠিত ও মার্কিন সমর্থনে পরিচালিত জিএইচএফের অধীনে বর্তমানে মাত্র চারটি ত্রাণকেন্দ্র চালু রয়েছে, যেখানে মার্কিন ভাড়াটে সৈন্যরা নিরাপত্তা নিশ্চিত করছে। অথচ জাতিসংঘ পরিচালিত পূর্ববর্তী ত্রাণ ব্যবস্থায় ছিল প্রায় ৪০০টি বেসামরিক বিতরণ কেন্দ্র। জিএইচএফ শুরু থেকেই নিরপেক্ষতা লঙ্ঘন এবং যুদ্ধাপরাধে সহযোগিতার অভিযোগে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থাগুলোর তীব্র সমালোচনার মুখে রয়েছে।

জিএইচএফ এসব অভিযোগ অস্বীকার করে দাবি করেছে, তাদের পরিচালিত কোনো সহায়তাকেন্দ্রে প্রাণহানি ঘটেনি। বরং জাতিসংঘের ত্রাণকেন্দ্রগুলোতে বেশি প্রাণহানি হয়েছে বলে তারা পাল্টা দাবি জানিয়েছে। তবে ফিলিস্তিনিরা জানান, জিএইচএফ পরিচালিত কেন্দ্রগুলোর আশেপাশেই প্রতিনিয়ত গুলির ঘটনা ঘটছে। খাবার পেতে হলে দীর্ঘ পথ পাড়ি দিয়ে নির্দিষ্ট রুটে চলতে হয়, যা আরও বিপজ্জনক হয়ে উঠেছে।

এমএসএফ (ডাক্তারি সহায়তা সংস্থা) জানিয়েছে, গাজায় অপুষ্টির হার ভয়াবহ মাত্রায় বেড়েছে। গাজা শহরের তাদের একটি ক্লিনিকে গত দুই মাসে অপুষ্টিতে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বেড়েছে চার গুণ।

শুক্রবার (১১ জুলাই) রাফাহ শহরে খাদ্যের জন্য জড়ো হওয়া মানুষের ওপর ইসরায়েলি বাহিনীর গুলিতে অন্তত ১০ জন নিহত ও ৬০ জনের বেশি আহত হয়েছেন। একই দিনে ইসরায়েলি বিমান হামলায় উত্তর গাজায় নিহত হয়েছেন আরও ১৫ জন। হামলা হয়েছে একটি স্কুলেও, যেটি আশ্রয়কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছিল।

রাফাহর নাসের হাসপাতালের শিশু বিভাগের প্রধান ডা. আহমাদ আল-ফাররা জানান, হাসপাতালে আহতদের ভিড় এতটাই ছিল যে করিডোর পর্যন্ত রোগীতে ভরে গিয়েছিল, এমনকি বাইরেও অস্থায়ী চিকিৎসাকেন্দ্র খোলার প্রয়োজন পড়ে।

এদিকে, ইসরায়েলি সেনাদের অভিযান, গোলাবর্ষণ ও কাঁদানে গ্যাসের কারণে হাসপাতাল ও আশপাশের এলাকাগুলোতে চরম আতঙ্ক বিরাজ করছে। একজন ফিলিস্তিনি জানিয়েছেন, সেনারা পার্শ্ববর্তী কবরস্থান খুঁড়ে লাশও তুলে নিয়েছে।

চিকিৎসকদের আশঙ্কা, হাসপাতালে মাত্র ৪৮ ঘণ্টার মতো জ্বালানি মজুদ রয়েছে। প্রচণ্ড গরমে শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা বন্ধ রাখতে হয়েছে বিদ্যুৎ বাঁচাতে।

এদিকে যুদ্ধবিরতির আলোচনা চললেও গাজার মানুষের মধ্যে হতাশা বাড়ছে। ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহুর ওয়াশিংটন সফর ও প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের মন্তব্যে যুদ্ধবিরতির সম্ভাবনা কিছুটা দেখা দিলেও কাতার জানিয়েছে, এখনও বড় ধরনের প্রতিবন্ধকতা রয়ে গেছে।

ইসরায়েল গাজার দক্ষিণে একটি ‘মানবিক শহর’ তৈরির প্রস্তাব দিলেও আন্তর্জাতিক মহল এটিকে ফিলিস্তিনিদের জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুতির পূর্বাভাস হিসেবে দেখছে। ইউএনআরডব্লিউ’র মুখপাত্র জুলিয়েট তুমা বলেন, “এই পরিকল্পনা গাজার সংকট আরও বাড়াবে।”

তবে বাস্তুচ্যুত মা নহলা আবু কুরশিনের মতো অনেকেই জানেন না, তারা কবে আবার ঘরে ফিরতে পারবেন—“এই মৃত্যু, এই ক্ষুধা, এই ঘরছাড়া জীবনের শেষ হবে কবে?”

Link copied!