প্রকাশিত: : জুলাই ৯, ২০২৫, ০১:০৮ এএম
চলতি বছরের প্রথম ছয় মাসেই দেশে ৪৮১ জন নারী ও কন্যাশিশু ধর্ষণের শিকার হয়েছেন বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ। গত বছর ধর্ষণের মোট ঘটনা ছিল ৫১৬টি। মাত্র ছয় মাসেই প্রায় সমানসংখ্যক ধর্ষণের খবর প্রকাশিত হওয়ায় নারী নির্যাতনের ভয়াবহ চিত্র স্পষ্ট হয়েছে।
আজ মঙ্গলবার রাজধানীর সেগুনবাগিচায় মহিলা পরিষদের কার্যালয়ে আয়োজিত ‘নারী ও কন্যার প্রতি সহিংসতার চিত্র: নারী সাংবাদিকদের ভাবনা’ শীর্ষক মতবিনিময় সভায় ১৫টি জাতীয় দৈনিকের সংবাদ বিশ্লেষণ করে এ তথ্য প্রকাশ করা হয়।
প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী, ২০২৪ সালের জানুয়ারি থেকে জুন পর্যন্ত ধর্ষণের শিকার ৪৮১ জনের মধ্যে ৩৪৫ জনই শিশু। একই সময় ধর্ষণের পর হত্যা করা হয়েছে ১৭ জনকে এবং ১০৬ জন দলবদ্ধ ধর্ষণের শিকার হয়েছেন। এছাড়া ৩২০ জন নারী ও কন্যাশিশু হত্যার শিকার হয়েছেন, যৌন নিপীড়নের ঘটনা ৫১টি এবং উত্ত্যক্ত হওয়ার ঘটনা ৩৪টি।
২০২৩ সালে নারী ও কন্যাশিশু হত্যার খবর ছিল ৫২৮টি, যৌন নিপীড়ন ১৮১টি এবং উত্ত্যক্তের ঘটনা ৪৩টি। পাশাপাশি আত্মহত্যা, রহস্যজনক মৃত্যু, সাইবার ক্রাইম, যৌতুকজনিত নির্যাতন ও হত্যার মতো সহিংসতার ঘটনাও উল্লেখযোগ্য ছিল।
সভায় দুইটি গবেষণা প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন মহিলা পরিষদের গণমাধ্যম উপপরিষদের সদস্য মুনিমা সুলতানা এবং প্রশিক্ষণ ও গবেষণা কর্মকর্তা আফরুজা আরমান। প্রতিবেদনে নারীর প্রতি সহিংসতার বহুমাত্রিক রূপ এবং সাংবাদিকদের করণীয় বিষয়ে সুপারিশ দেওয়া হয়। নারীর কণ্ঠকে গুরুত্ব দিয়ে সংবাদ তৈরির পাশাপাশি আইনি সহায়তায় সহযোগিতা এবং সহিংসতা মোকাবেলায় বিজয়ের গল্প তুলে ধরার ওপর জোর দেওয়া হয়।
সভায় সভাপতির বক্তব্যে মহিলা পরিষদের সভাপতি ফওজিয়া মোসলেম বলেন, “আইনের মাধ্যমে বিচার পাওয়ার পথ কঠিন করে দেওয়া হচ্ছে। নারীদের প্রতি ঘৃণা ও বৈষম্যের সংস্কৃতি আরও উসকে দেওয়া হচ্ছে।” তিনি জানান, যৌতুকের কারণে নির্যাতনের মামলায় এখন বাধ্যতামূলক মধ্যস্থতার বিধান নারীর পক্ষে বড় বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে।
সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক মালেকা বানু বলেন, “সংবাদমাধ্যমে যে সহিংসতার চিত্র উঠে আসে, বাস্তবে তা আরও ভয়াবহ।” যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সীমা মোসলেম বলেন, “অনেক সময় সহিংসতার ঘটনাগুলো রাজনীতির চাদরে ঢাকা পড়ে যায়।”
সভায় বিভিন্ন গণমাধ্যমের নারী সাংবাদিকরা বলেন, নারীরা বাসে, রাস্তায় এবং অনলাইনেও নির্যাতনের শিকার হচ্ছেন। সংবাদমাধ্যমে নীতিনির্ধারণী পর্যায়ে নারীর সংখ্যা কম এবং নারী-সংক্রান্ত খবর তুলনামূলক কম গুরুত্ব পাচ্ছে। এছাড়া নারী সাংবাদিকদের কাজের পরিবেশও দিন দিন সংকুচিত হচ্ছে।
সভায় নারী নির্যাতনের বিরুদ্ধে সামাজিক আন্দোলন গড়ে তোলার আহ্বান জানানো হয় এবং গণমাধ্যমকে এ বিষয়ে আরও সক্রিয় ভূমিকা রাখার আহ্বান জানানো হয়।