বুধবার, ০৯ জুলাই, ২০২৫

বৈশ্বিক গড় আয়ুর চেয়ে বেশি দিন বাঁচছেন বাংলাদেশিরা

টিএনসি ডেস্ক

প্রকাশিত: : জুলাই ৯, ২০২৫, ১২:৩৯ এএম

বৈশ্বিক গড় আয়ুর চেয়ে বেশি দিন বাঁচছেন বাংলাদেশিরা

বাংলাদেশের মানুষের গড় আয়ু এখন বৈশ্বিক গড়ের চেয়ে বেশি—এই তথ্য উঠে এসেছে জাতিসংঘ জনসংখ্যা তহবিল (ইউএনএফপিএ) প্রকাশিত বিশ্ব জনসংখ্যা পরিস্থিতি ২০২৫ শীর্ষক প্রতিবেদনে।

প্রতিবেদন অনুযায়ী, বর্তমানে বাংলাদেশে পুরুষদের গড় আয়ু ৭৪ বছর এবং নারীদের ৭৭ বছর, যেখানে বৈশ্বিক গড় যথাক্রমে ৭১ ও ৭৬ বছর। এই তথ্য আনুষ্ঠানিকভাবে প্রকাশ করা হয় মঙ্গলবার, রাজধানীর গুলশানে জাতিসংঘ ভবনে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে।

প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, ২০২৫ সালে বাংলাদেশের মোট জনসংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১৭ কোটি ৫৭ লাখে। এর মধ্যে অর্ধেক নারী এবং দুই-তৃতীয়াংশ (প্রায় ১১ কোটি ৫০ লাখ) কর্মক্ষম জনগোষ্ঠী (১৫–৬৪ বছর)। এ ছাড়া দেশের ১৯% কিশোর-কিশোরী (প্রায় ৩ কোটি ৩০ লাখ) এবং ১০–২৪ বছর বয়সী তরুণ-তরুণীর সংখ্যা ৫ কোটি, যা দেশের জন্য একটি বড় ডেমোগ্রাফিক সুবিধা সৃষ্টি করছে।

তবে প্রতিবেদনে সতর্ক করা হয়েছে, দেশের ৭ শতাংশ মানুষ (প্রায় ১ কোটি ২০ লাখ) এখন ৬৫ বছরের ঊর্ধ্বে—যা ভবিষ্যতে শ্রমশক্তি সংকোচন এবং বৃদ্ধ জনগোষ্ঠীর জন্য স্বাস্থ্য ও সামাজিক সুরক্ষা খাতে ব্যয় বৃদ্ধির ইঙ্গিত দেয়।

ইউএনএফপিএর প্রতিনিধি ক্যাথরিন ব্রিন কামকং বলেন, “আসল সংকট জন্মহারে নয়, সংকটটি হলো নারীদের এবং তরুণদের প্রজননস্বাস্থ্য বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার স্বাধীনতার অভাবে।” যদিও বাংলাদেশে মোট প্রজনন হার (TFR) এখন ২.১, তারপরও বহু পরিবার সামাজিক, অর্থনৈতিক ও প্রাতিষ্ঠানিক প্রতিবন্ধকতার কারণে ইচ্ছামতো সন্তান নিতে পারছে না।

তিনি বলেন, "স্বাস্থ্যসেবার উচ্চ খরচ, অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তা ও শিশু পরিচর্যার সীমিত সুযোগের কারণে অনেক পরিবার সন্তান নেওয়া বিলম্বিত করছে বা পুরোপুরি পরিহার করছে। পাশাপাশি মেয়েদের ওপর কম বয়সে বিয়ে ও মাতৃত্বের সামাজিক চাপ, অবৈতনিক গৃহকর্ম, লিঙ্গভিত্তিক সহিংসতা এবং জলবায়ু পরিবর্তনও নারীদের সিদ্ধান্তকে প্রভাবিত করছে।"

প্রতিবেদনে বেশ কিছু সুপারিশও তুলে ধরা হয়েছে: স্বাস্থ্য খাতে জিডিপির ৫% এবং জাতীয় বাজেটের ১৫% বরাদ্দ নিশ্চিত করা, মাতৃস্বাস্থ্যসেবা ও পরিবার পরিকল্পনার সহজলভ্যতা বাড়ানো, দক্ষ স্বাস্থ্যকর্মী ধরে রাখা ও প্রশিক্ষণ বৃদ্ধি, যৌন ও প্রজননস্বাস্থ্য বিষয়ে সমন্বিত শিক্ষার প্রসার, সাশ্রয়ী আবাসন ও মাতৃত্ব-পিতৃত্বকালীন ছুটির ব্যবস্থা, এবং নারীর অবৈতনিক কাজকে রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি দেওয়া।

ইউএনএফপিএ মনে করে, এসব উদ্যোগ বাস্তবায়ন হলে দেশের ডেমোগ্রাফিক ডিভিডেন্ড সর্বোচ্চভাবে কাজে লাগানো সম্ভব হবে।

অনুষ্ঠানে ইউএনএফপিএর ডেমোগ্রাফিক ডেটা অ্যান্ড ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের প্রধান মোহাম্মদ শহিদুল ইসলাম বলেন, “৬৫ বছরের বেশি বয়সীদের অনুপাতে বৃদ্ধির এই ধারা অব্যাহত থাকলে ভবিষ্যতে শ্রমবাজার সংকুচিত হবে এবং রাষ্ট্রের ওপর বার্ধক্যজনিত ব্যয় চাপ বাড়বে।”

Link copied!