প্রকাশিত: : জুলাই ৭, ২০২৫, ১১:০৮ পিএম
ছবি: জয়দীপ্ত দেব চৌধুরী
উপজেলা পর্যায়ে অধস্তন আদালত সম্প্রসারণে দেশের সব রাজনৈতিক দল একমত হয়েছে বলে জানিয়েছেন জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহ-সভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ। নাগরিকদের ন্যায়বিচার নিশ্চিত করতে উপজেলা পর্যায়ে আদালত প্রতিষ্ঠার বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে ঐকমত্য তৈরি হয়েছে বলে জানান তিনি।
সোমবার রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে রাজনৈতিক দলগুলোর দশম দিনের বৈঠক শেষে এই তথ্য জানান তিনি।
আলী রীয়াজ বলেন, "উপজেলা পর্যায়ে অধস্তন আদালত সম্প্রসারণে দলগুলোর মধ্যে জাতীয় ঐকমত্য তৈরি হয়েছে। তবে কোন উপজেলায় আদালত স্থাপন উপযোগী হবে, সেটি নির্ধারণে জনসংখ্যার ঘনত্ব, জেলা সদর থেকে দূরত্ব, যাতায়াত ব্যবস্থা এবং মামলার চাপ বিবেচনায় জরিপের প্রয়োজন রয়েছে।"
তিনি আরও বলেন, "চৌকি আদালত বহাল রেখে কিছু উপজেলায় স্থায়ী আদালত স্থাপনের সুপারিশ এসেছে। পাশাপাশি আদালত পরিচালনার জন্য প্রয়োজনীয় অবকাঠামো ও আর্থিক সহায়তা নিশ্চিত করার প্রস্তাবও উঠেছে।"
এছাড়া বিচারকদের পর্যায়, মামলা গ্রহণের আর্থিক এখতিয়ার ও উপজেলা পর্যায়ে আইনগত সহায়তা কার্যক্রম জোরদারে সুপারিশ করা হয়েছে। কত বছরের মধ্যে এই সম্প্রসারণ বাস্তবায়িত হবে, সেটিও নির্ধারণের পক্ষে মত দিয়েছে কয়েকটি দল।
১৯৯১ সালে উপজেলা আদালত বাতিল করলেও এবার সেই সিদ্ধান্ত থেকে সরে এসে আদালত পুনঃস্থাপনে সম্মতি জানিয়েছে বিএনপি। দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, “জেলা আদালতের বিকেন্দ্রীকরণ নিয়ে আজ আলোচনা হয়েছে। জেলা সদরের কাছাকাছি উপজেলায় আদালতের প্রয়োজন নেই, তবে দূরবর্তী ও জনবহুল উপজেলায় তা স্থাপন করা যেতে পারে।”
এছাড়া জামায়াতে ইসলামীও উপজেলার বিদ্যমান ৪০টি চৌকি আদালতকে স্থায়ী রূপ দেওয়ার পক্ষে মত দিয়েছে। দলটির সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল হামিদুর রহমান আযাদ বলেন, “জনগণের দোরগোড়ায় বিচার পৌঁছাতে হলে আদালত সম্প্রসারণ জরুরি। দুর্নীতির শঙ্কা থাকলেও তা জনসচেতনতা ও মূল্যবোধ বৃদ্ধির মাধ্যমে প্রতিরোধ করা সম্ভব।”
আলোচনায় সংবিধানের ১৪১ অনুচ্ছেদ সংশোধন নিয়েও ঐকমত্য তৈরি হয়েছে বলে জানান আলী রীয়াজ। তিনি বলেন, “১৪১ অনুচ্ছেদের বিভিন্ন ধারা নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলো একমত হয়েছে যে, জরুরি অবস্থার বিধান রাজনৈতিকভাবে ব্যবহার হওয়া উচিত নয়। এই বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা আগামী বৃহস্পতিবার হবে।”
বিএনপি নেতাও একই মত পোষণ করে বলেন, “জরুরি অবস্থার বিধান যেন রাজনৈতিক স্বার্থে ব্যবহৃত না হয়, সেই লক্ষ্যে সংশোধনের প্রয়োজনীয়তা আমরা স্বীকার করেছি।”
এদিনের বৈঠকে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি), ইসলামী আন্দোলন, সিপিবি, এবি পার্টিসহ ৩০টি রাজনৈতিক দল অংশ নেয়। সভায় সভাপতিত্ব করেন অধ্যাপক আলী রীয়াজ এবং পরিচালনা করেন মনির হায়দার। উপস্থিত ছিলেন কমিশনের সদস্য বদিউল আলম মজুমদার, ইফতেখারুজ্জামান ও মো. আইয়ুব মিয়া।