রবিবার, ২৭ এপ্রিল, ২০২৫

৬৫ দিনের আন্দোলন আর ৫৮ ঘন্টার অনশনের পর বিজয় কুয়েট শিক্ষার্থীদের

টিএনসি ডেস্ক

প্রকাশিত: : এপ্রিল ২৪, ২০২৫, ০৪:৫৭ পিএম

৬৫ দিনের আন্দোলন আর ৫৮ ঘন্টার অনশনের পর বিজয় কুয়েট শিক্ষার্থীদের

খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (কুয়েট)-এর শিক্ষার্থীরা দীর্ঘ ৬৫ দিন আন্দোলন চালিয়ে ও টানা ৫৮ ঘণ্টা অনশন করে অবশেষে বিজয় ছিনিয়ে এনেছেন। বুধবার দিবাগত রাতেই শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে জানানো হয়, কুয়েটের উপাচার্য ও উপ-উপাচার্যকে দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে।

এই খবর ক্যাম্পাসে পৌঁছানোর সঙ্গে সঙ্গে শিক্ষার্থীদের মধ্যে আনন্দের জোয়ার বয়ে যায়। অনশনরত সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের শিক্ষার্থী রাহাতুল ইসলাম জানান, রাত ১টা পেরোনোর পর তানজিম স্যার শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে পাঠানো একটি চিঠি পড়ে শোনান, যেখানে উপাচার্য অপসারণের সিদ্ধান্তের কথা বলা হয়। তিনি বলেন, “সারা দেশের শিক্ষার্থীরা আমাদের পাশে ছিলেন, এই কারণেই আমরা জয়ী হতে পেরেছি।”

১৮ ফেব্রুয়ারি কুয়েট শিক্ষার্থীদের সঙ্গে ছাত্রদল ও বহিরাগত বিএনপি নেতাকর্মীদের সংঘর্ষের ঘটনায় শতাধিক শিক্ষার্থী আহত হন। এরপর থেকেই শিক্ষার্থীরা উপাচার্যের অপসারণসহ নিরাপত্তার দাবিতে আন্দোলনে নামেন।

বুধবার সকালে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সি আর আবরার ক্যাম্পাসে এসে শিক্ষার্থীদের অনশন প্রত্যাহারের অনুরোধ করেন। কিন্তু শিক্ষার্থীরা হলের পানি ও ইন্টারনেট সংযোগ বন্ধ, বহিষ্কারাদেশ এবং মামলার বিষয়ে অভিযোগ করে অনশন চালিয়ে যান। পরে সাড়ে ১২টার দিকে অনুষ্ঠিত জরুরি সিন্ডিকেট সভায় ৩৭ শিক্ষার্থীর সাময়িক বহিষ্কার প্রত্যাহার ও ৭টি আবাসিক হল খুলে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

এরই মধ্যে শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে জানানো হয়, উপাচার্য এবং উপ-উপাচার্যকে দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দেওয়া হবে এবং শিগগিরই একটি সার্চ কমিটি গঠন করে নতুন নিয়োগ দেওয়া হবে। ততদিন পর্যন্ত একজন জ্যেষ্ঠ অধ্যাপককে সাময়িক উপাচার্যের দায়িত্ব দেওয়া হবে।

গত ১৪ এপ্রিল বিশ্ববিদ্যালয়ের ১০১তম জরুরি সিন্ডিকেট সভায় ৩৭ জন শিক্ষার্থীকে সাময়িক বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল। এর আগে ১৯ ফেব্রুয়ারির সংঘর্ষের পর ৯৮তম সিন্ডিকেট সভায় তদন্ত কমিটি গঠন করা হয় এবং তাদের দেওয়া সিলগালা প্রতিবেদন অনুযায়ী বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত হয়।

এছাড়া ১০ এপ্রিল কুয়েটের ২২ শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে একটি মামলা দায়ের করা হয়, যেখানে অভিযোগ করা হয় যে, তারা রড ও লাঠি দিয়ে এক ব্যক্তিকে মারধর ও তার স্বর্ণের চেইন ছিনিয়ে নিয়েছে। তবে শিক্ষার্থীদের দাবি, এই মামলা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের প্ররোচনায় দায়ের করা হয়েছে।

১৮ ফেব্রুয়ারির ঘটনায় ছাত্ররাজনীতির বিরুদ্ধে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের সঙ্গে সংঘর্ষে ক্যাম্পাসে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। এরপর শিক্ষার্থীরা প্রশাসনিক ভবনসহ একাডেমিক ভবনে তালা লাগিয়ে দেন এবং সব ধরনের রাজনৈতিক কার্যক্রম নিষিদ্ধ করার দাবি জানান। প্রশাসনও ওইদিন রাতে এক সিন্ডিকেট সভায় বিশ্ববিদ্যালয়ে রাজনীতি নিষিদ্ধ ঘোষণা করে।

এই দীর্ঘ আন্দোলনের ধারাবাহিকতায় শিক্ষার্থীরা ঢাকায় গিয়েও দাবি উপস্থাপন করেন এবং শেষ পর্যন্ত উপাচার্য অপসারণের প্রক্রিয়া শুরু হওয়ার মাধ্যমে তাদের দাবি পূরণ হতে যাচ্ছে।

Link copied!