সোমবার, ২৮ এপ্রিল, ২০২৫

রানা প্লাজা ধসের এক যুগ: আজও শেষ হয়নি বিচার, সাক্ষ্য দিয়েছেন মাত্র ৯৩ জন

টিএনসি ডেস্ক

প্রকাশিত: : এপ্রিল ২৪, ২০২৫, ০৪:৩৭ পিএম

রানা প্লাজা ধসের এক যুগ: আজও শেষ হয়নি বিচার, সাক্ষ্য দিয়েছেন মাত্র ৯৩ জন

ঢাকার সাভারে রানা প্লাজা ধসের এক যুগ পেরিয়ে গেলেও শেষ হয়নি বিচারপ্রক্রিয়া। ২০১৩ সালের ২৪ এপ্রিলের সেই ভয়াবহ দুর্ঘটনায় প্রাণ হারান ১,১৩৫ জন পোশাকশ্রমিক, পঙ্গু হন আরও ১,১৬৯ জন। কিন্তু দীর্ঘ ১২ বছর পরও হত্যামামলায় মাত্র ৯৩ জন সাক্ষীর জবানবন্দি গ্রহণ করা সম্ভব হয়েছে, যেখানে মোট সাক্ষীর সংখ্যা ৫৯৪ জন।

আজ বৃহস্পতিবার রানা প্লাজা ধসের ১২ বছর পূর্ণ হলো। এ উপলক্ষে নিহত শ্রমিকদের স্মরণে নানা কর্মসূচি পালন করছেন শ্রমিক সংগঠন ও ভুক্তভোগীরা। তবে বিচার না পাওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করছেন অনেকে।

দুর্ঘটনায় আহত মাসুদা খাতুন বলেন, “বিচার পাওয়ার আশায় এক যুগ অপেক্ষা করেছি, কিন্তু এখনো কারও শাস্তি হয়নি। বিচার পেতে আমাদের হয়তো পুরো জীবনটাই কেটে যাবে।”

ঢাকা জেলা জজ আদালতের প্রধান সরকারি কৌঁসুলি (পিপি) মো. ইকবাল হোসেন জানান, মামলাটি দ্রুত নিষ্পত্তির জন্য রাষ্ট্রপক্ষ সচেষ্ট রয়েছে। তবে নিহত ও আহতের সংখ্যা বেশি হওয়ায় সাক্ষ্যগ্রহণে সময় লাগছে।

রানা প্লাজা ধসকে কেন্দ্র করে মোট ২০টি মামলা দায়ের হয়, যার মধ্যে তিনটি ফৌজদারি মামলা। একটি হত্যা মামলা করে পুলিশ, অন্য দুটি দায়ের করে রাজউক এবং দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। বর্তমানে হত্যামামলায় ৩৮ জন আসামি রয়েছেন। তাদের মধ্যে শুধু ভবনের মালিক সোহেল রানা কারাগারে রয়েছেন, আর তিন আসামি ইতোমধ্যে মারা গেছেন।

বিচারকাজে দীর্ঘ বিলম্বের অন্যতম কারণ ছিল তদন্তে সময়ক্ষেপণ, উচ্চ আদালতের স্থগিতাদেশ এবং ছয়জন সরকারি কর্মকর্তার বিরুদ্ধে চার্জশিট দিতে মন্ত্রণালয়ের অনুমতি না পাওয়া। ২০১৬ সালে অভিযোগ গঠনের পর সাত আসামি উচ্চ আদালতে আবেদন করলে পাঁচ বছর ধরে বিচারকাজ স্থগিত ছিল। অবশেষে ২০২২ সালের জানুয়ারিতে ফের সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু হয়।

এছাড়া, ভবন নির্মাণে ত্রুটি ও দুর্নীতির অভিযোগে পৃথক মামলাগুলো এখনো বিচারাধীন রয়েছে। এর মধ্যে ইমারত নির্মাণ আইনভিত্তিক মামলার কার্যক্রম উচ্চ আদালতের স্থগিতাদেশে আটকে আছে। দুর্নীতির মামলাটি বিচারিক পর্যায়ের শেষ ধাপে রয়েছে।

শ্রমিকনেত্রী কল্পনা আক্তার বলেন, “এই বিচারে বিলম্বে সরকার ও প্রশাসনের আন্তরিকতার অভাব স্পষ্ট। দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি না হওয়ায় অন্য অনেক গার্মেন্টস কর্তৃপক্ষও শ্রমিকদের নিরাপত্তা নিয়ে উদাসীন থেকেছে।” তিনি আশা প্রকাশ করেন, বর্তমান সরকার অবিলম্বে বিচারপ্রক্রিয়া শেষ করতে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।

Link copied!