প্রকাশিত: : এপ্রিল ২৩, ২০২৫, ০৪:৩৭ পিএম
রাজধানী ঢাকা যেন এক ধুলার নগরী। সঙ্গে যানবাহন ও শিল্প-কারখানার কালো ধোঁয়া তিলোত্তমা এ নগরীর বায়ুদূষণের মাত্রা ছাড়িয়েছে বিপৎসীমা। তাই ঢাকায় নির্মল বাতাস প্রত্যাশা এখন কেবলই বিলাসিতা।
রাজধানী ঢাকা গত ৯ বছরে মাত্র ৩১ দিন নির্মল বাতাস পেয়েছে। বাকি সময়জুড়ে এই শহরের আকাশে ছিল ধুলা, ধোঁয়া আর বিষাক্ত কণার আধিপত্য। যানবাহন, শিল্প-কারখানা, নির্মাণকাজ ও বর্জ্য পোড়ানোর কারণে ঢাকার বায়ুদূষণ বিপজ্জনক মাত্রায় পৌঁছেছে। বায়ুমণ্ডলীয় দূষণ অধ্যয়ন কেন্দ্র (ক্যাপস) জানিয়েছে, ২০১৬ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত ৯ বছরে ঢাকায় ‘ভালো’ বায়ুর দিন ছিল মাত্র ৩১ দিন। একই সময় ‘খুবই অস্বাস্থ্যকর’ এবং ‘দুর্যোগপূর্ণ’ বায়ুর দিন ছিল যথাক্রমে ৬৩৫ ও ৯৩ দিন। ‘অস্বাস্থ্যকর’ হিসেবে চিহ্নিত দিন ছিল ৮৫৩ দিন।
ঢাকার মার্কিন দূতাবাস থেকে পাওয়া একিউআই (Air Quality Index) তথ্য বিশ্লেষণ করে এ চিত্র তুলে ধরেছে ক্যাপস। গতকাল ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে ‘বিশ্ব ধরিত্রী দিবস ২০২৫: বায়ুদূষণ নিয়ন্ত্রণে করণীয়’ শীর্ষক সংবাদ সম্মেলনে গবেষণার ফল তুলে ধরা হয়। ক্যাপসের চেয়ারম্যান আহমেদ কামরুজ্জামান বলেন, ১০৮ মাসের মধ্যে সবচেয়ে দূষিত মাস ছিল ২০২৪ সালের জানুয়ারি। ওই মাসে গড় একিউআই স্কোর ছিল ৩০০। সবচেয়ে ভালো পরিস্থিতি ছিল ২০২১ সালের জুলাইয়ে, যার একিউআই ছিল ৯৭।
একিউআই স্কোর অনুযায়ী, ৫০-এর নিচে স্কোর ‘ভালো’ হিসেবে ধরা হয়। ১০১ থেকে ২০০ পর্যন্ত ‘অস্বাস্থ্যকর’, ২০১ থেকে ৩০০ ‘খুবই অস্বাস্থ্যকর’ এবং ৩০০-এর বেশি স্কোরকে ‘বিপজ্জনক’ বলা হয়। এ অবস্থায় শিশু, প্রবীণ ও অসুস্থ ব্যক্তিদের ঘরের বাইরে বের না হওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়।
আইকিউএয়ারের সাম্প্রতিক প্রতিবেদনে দেখা গেছে, বাংলাদেশ একাধিক বছর বিশ্বের সবচেয়ে দূষিত দেশের তালিকায় শীর্ষস্থান ধরে রেখেছে। ২০২১ ও ২০২৩ সালে প্রথম এবং ২০২৪ সালে দ্বিতীয় অবস্থানে ছিল বাংলাদেশ। শহরের মধ্যে ঢাকার অবস্থান ছিল ৩ নম্বরে। জেলার দিক থেকে সবচেয়ে দূষিত জেলা গাজীপুর, যেখানে বাতাসে পিএম ২.৫ এর মাত্রা বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নির্ধারিত সীমার ১৮ গুণ বেশি। তুলনামূলক কম দূষণের জেলা সিলেটেও এই মাত্রা ৯.৭ গুণ বেশি।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বায়ুদূষণের জন্য মূলত দায়ী উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের সময় সঠিক নিয়ম না মানা, ইটভাটা, মেয়াদোত্তীর্ণ যানবাহন ও বর্জ্য পোড়ানো। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. মো. মনিরুজ্জামান বলেন, উন্নয়নের সঙ্গে বায়ুদূষণ বাড়ে ঠিকই, তবে তা নিয়ন্ত্রণের একটি সীমা থাকা জরুরি। মেট্রোরেলের মতো প্রকল্পে কিছুটা মান বজায় রাখা হলেও অন্যান্য জায়গায় তা হয় না।
সংবাদ সম্মেলনে বায়ুদূষণ নিয়ন্ত্রণে বেশকিছু সুপারিশ তুলে ধরা হয়। এর মধ্যে রয়েছে মেয়াদোত্তীর্ণ ও ফিটনেসবিহীন যানবাহন তুলে নিয়ে বৈদ্যুতিক ও হাইব্রিড যানবাহনের ব্যবহার বৃদ্ধি, ব্লক ইট উৎপাদন ও ব্যবহার নিশ্চিত করা, বর্জ্য পোড়ানো বন্ধ করে তা থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদন, জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার কমিয়ে আনা এবং নির্মল বায়ু আইন প্রণয়ন ও কঠোর প্রয়োগ।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগের চেয়ারম্যান শহীদুল ইসলাম বলেন, বায়ুদূষণ প্রতিরোধে সরকারকে এখনই কঠোর পদক্ষেপ নিতে হবে। শুধু জনগণের সচেতনতার ওপর ভরসা করলে চলবে না। সংবাদ সম্মেলনে বাপার সভাপতি নূর মোহাম্মদ তালুকদার, সাধারণ সম্পাদক আলমগীর কবির, সহসভাপতি এম ফিরোজ আহমেদসহ অন্যান্য নেতারা বক্তব্য দেন।