প্রকাশিত: : জুন ৮, ২০২৫, ০৬:৫২ পিএম
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও ইলন মাস্কের দ্বন্দ্বের জেরে যুক্তরাষ্ট্রের মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসা বড় ধরনের সংকটে পড়েছে। হোয়াইট হাউস থেকে প্রস্তাবিত বাজেটে নাসার বিজ্ঞানভিত্তিক প্রকল্পগুলোর জন্য বরাদ্দ অর্ধেকে নামিয়ে আনার পরিকল্পনা রয়েছে, যার ফলে সংস্থাটির অন্তত ৪০টি চলমান মহাকাশ অভিযান বন্ধ হয়ে যাওয়ার ঝুঁকিতে পড়েছে। সবচেয়ে বেশি হুমকির মুখে রয়েছে পৃথিবী ও অন্যান্য গ্রহ নিয়ে পরিচালিত গবেষণা প্রকল্পগুলো। এমনকি প্লুটোর বিখ্যাত হৃদয় আকৃতির ছবি তুলে আলোচিত হওয়া মহাকাশযানটির কার্যক্রমও মাঝপথে বন্ধ হয়ে যেতে পারে। নাসা জানিয়েছে, তারা চাঁদ ও মঙ্গলে অভিযান পরিচালনার লক্ষ্যে তাদের বৈজ্ঞানিক ও প্রযুক্তিগত অগ্রাধিকার নতুন করে নির্ধারণ করছে।
এই বাজেট সংকটের পাশাপাশি স্পেসএক্স ও নাসার সম্পর্ক নিয়েও দেখা দিয়েছে অনিশ্চয়তা। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প হুমকি দিয়েছেন, ইলন মাস্কের কোম্পানি স্পেসএক্সের সঙ্গে করা সব ফেডারেল চুক্তি বাতিল করা হতে পারে। অথচ বর্তমানে নাসা আন্তর্জাতিক মহাকাশ কেন্দ্রে নভোচারী ও সরবরাহ পাঠাতে স্পেসএক্সের ফ্যালকন-৯ রকেটের ওপর নির্ভর করে। ভবিষ্যতে চাঁদ ও মঙ্গলে মানুষ পাঠানোর জন্যও স্পেসএক্সের স্টারশিপ রকেট ব্যবহার করার পরিকল্পনা রয়েছে। পাল্টা প্রতিক্রিয়ায় ইলন মাস্ক এক্স-এ লিখেছেন, স্পেসএক্স ধীরে ধীরে তাদের ‘ড্রাগন’ মহাকাশযান কার্যক্রম বন্ধ করে দেবে, যা যুক্তরাষ্ট্রের মহাকাশ কার্যক্রমের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
বিবিসির এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, যেসব প্রকল্প এখন ঝুঁকির মুখে রয়েছে, তার মধ্যে রয়েছে মার্স স্যাম্পল রিটার্ন, ল্যান্ডস্যাট নেক্সট, ইনভিশন, ভ্যারিটাস, দ্য ভিঞ্চি, মার্স ওডিসি, মাভেন ও জুনো। এসব প্রকল্পের মূল উন্নয়ন ও উৎক্ষেপণ ব্যয় ইতিমধ্যে সম্পন্ন হয়েছে, এখন প্রয়োজন কেবল পরিচালন ব্যয়। বাজেট কাটছাঁটের ফলে সেগুলো থেমে যেতে পারে।
ট্রাম্প প্রশাসন নাসার অগ্রাধিকারে বড় পরিবর্তন এনেছে। বর্তমান নীতির অধীনে চীনের আগেই চাঁদে মার্কিন নভোচারী পাঠানো এবং মঙ্গলে যুক্তরাষ্ট্রের পতাকা স্থাপন করাকে প্রধান লক্ষ্য হিসেবে দেখা হচ্ছে। এই উদ্দেশ্যে মঙ্গল অভিযানে অতিরিক্ত ১০ কোটি ডলার বরাদ্দের প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে।
নাসার চাঁদে অভিযান পরিচালনার মূল রকেট স্পেস লঞ্চ সিস্টেম (এসএলএস) নিয়ে ব্যয়বহুলতা ও বিলম্ব নিয়ে নানা সমালোচনা রয়েছে। প্রতিটি উৎক্ষেপণে এই রকেটের খরচ ৪ দশমিক ১ বিলিয়ন ডলার। অন্যদিকে স্পেসএক্সের স্টারশিপ বা ব্লু অরিজিনের নিউ গ্লেন রকেটের উৎক্ষেপণ খরচ প্রায় ১০ কোটি ডলার, কারণ এগুলো পুনর্ব্যবহারযোগ্য। হোয়াইট হাউসের প্রস্তাবে এসএলএস প্রকল্প ধীরে ধীরে বন্ধ করে দেওয়ার চিন্তাভাবনা করা হচ্ছে।
বাজেট সংকটের প্রভাব আন্তর্জাতিক অংশীদারত্বেও পড়তে পারে। ইউরোপীয় মহাকাশ সংস্থা ইএসএর সঙ্গে নাসার যৌথ উদ্যোগে থাকা রোজালিন্ড ফ্র্যাঙ্কলিন রোভার মিশন ও পারসিভিয়ারেন্স রোভারের মঙ্গল থেকে নমুনা সংগ্রহ করে পৃথিবীতে ফেরত পাঠানোর পরিকল্পনাও অনিশ্চয়তার মুখে পড়েছে। আন্তর্জাতিক মহাকাশ কেন্দ্র ও চাঁদের কক্ষপথে নির্মাণাধীন লুনার গেটওয়ে প্রকল্পেও নাসার অবদান কমে গেলে ইউরোপের অংশগ্রহণ বাধাগ্রস্ত হতে পারে।
নাসার জলবায়ু গবেষণা ও পৃথিবী পর্যবেক্ষণ সম্পর্কিত একাধিক প্রকল্পও হুমকির মুখে রয়েছে। এসব প্রকল্প জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব পর্যবেক্ষণ ও আগাম সতর্কবার্তা দেওয়ার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। বাজেট প্রস্তাব এখনো কংগ্রেসে অনুমোদিত হয়নি, তবে রাজনৈতিক অচলাবস্থার কারণে প্রস্তাবিত এই বাজেটই অস্থায়ীভাবে কার্যকর হয়ে যেতে পারে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, একবার কোনো মহাকাশ মিশন বন্ধ হয়ে গেলে তা পুনরায় চালু করা প্রায় অসম্ভব।