প্রকাশিত: : মে ১৩, ২০২৫, ০৩:৪৮ পিএম
বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিডা) ও অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষের (বেজা) নির্বাহী চেয়ারম্যান চৌধুরী আশিক মাহমুদ বিন হারুন গত কয়েক মাসে দেশি ও বিদেশি বিনিয়োগ বাড়াতে নানা উদ্যোগ নিয়েছেন। তাঁর নেতৃত্বে বিডা মহাকাশ গবেষণা থেকে শুরু করে আন্তর্জাতিক বিনিয়োগ সম্মেলন, এফডিআই হিটম্যাপ তৈরি, স্টারলিংক সেবা নিবন্ধন, এবং চট্টগ্রাম বন্দরে ডেনমার্কভিত্তিক মায়ের্স্কের বিনিয়োগসহ একাধিক উচ্চাভিলাষী পরিকল্পনা হাতে নেয়। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তাঁর কার্যক্রম ব্যাপক প্রশংসা কুড়িয়েছে, তাঁকে নিয়ে আলোচনাও হয়েছে বেশ।
তবে বিনিয়োগের বাস্তব চিত্র সেই উচ্ছ্বাসের বিপরীত। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রথম নয় মাসে বিদেশি বিনিয়োগ (এফডিআই) ২৬ শতাংশ কমেছে। একই সময়ের মধ্যে মূলধনি যন্ত্রপাতির আমদানিও প্রায় ২৯ শতাংশ হ্রাস পেয়েছে। বিডার তথ্যে দেখা যাচ্ছে, চলতি অর্থবছরের ১০ মাসে নিবন্ধিত বিনিয়োগ প্রকল্প ও প্রস্তাবিত বিনিয়োগের পরিমাণ গত অর্থবছরের তুলনায় অনেক কম।
বিনিয়োগ পরিস্থিতির এই স্থবিরতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে—বিনিয়োগ সম্মেলনে হাজার কোটি টাকার প্রস্তাব এলেও তা কতটা বাস্তবায়িত হবে। বিনিয়োগকারীদের অনাগ্রহের মূল কারণ হিসেবে উঠে এসেছে রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা, আইনি কাঠামোর দুর্বলতা, আমলাতান্ত্রিক জটিলতা, করনীতির অনিশ্চয়তা, উচ্চ সুদের হার এবং লজিস্টিক খাতের দুর্বলতা। বিদেশি দূতদের প্রতিক্রিয়াও বিনিয়োগবান্ধব নয়; তারা রাজনৈতিক স্থিতিশীলতার অভাবকে বড় বাধা হিসেবে দেখছেন।
বিনিয়োগ বিশ্লেষকরা বলছেন, চৌধুরী আশিকের প্রচেষ্টা দৃশ্যমান হলেও বাস্তব অগ্রগতি সময়সাপেক্ষ। একার প্রচেষ্টায় পরিবর্তন সম্ভব নয়, দরকার প্রাতিষ্ঠানিক সমন্বয়। একজন উদ্যোক্তার যতই উদ্যোগ থাকুক না কেন, তা বাস্তব রূপ পেতে হলে সরকার, প্রশাসন ও সংশ্লিষ্ট সংস্থার সম্মিলিত পদক্ষেপ প্রয়োজন।
অর্থনীতিবিদরা বলছেন, বাংলাদেশে বিদেশি বিনিয়োগ দীর্ঘদিন ধরেই স্থবির, তাই রাতারাতি পরিবর্তনের আশা করা অবাস্তব। এখন প্রয়োজন একটি রাজনৈতিকভাবে স্থিতিশীল ও নীতিনির্ধারণে ধারাবাহিকতা নিশ্চিত করা, যেন বিনিয়োগকারীরা আস্থা ফিরে পান। একই সঙ্গে স্থানীয় বিনিয়োগকারীদের অনুপ্রাণিত না করতে পারলে বিদেশিরাও এগিয়ে আসবেন না।
সব মিলিয়ে, আশিক চৌধুরীর গতিশীলতা ও প্রচারণা প্রশংসনীয় হলেও তার উদ্যোগ বাস্তব বিনিয়োগে কতটা রূপ নিচ্ছে, তা দেখতে সময় লাগবে। সরকার যদি রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক পরিবেশে স্থিতিশীলতা আনতে পারে, তাহলে হয়তো এই ‘আশিক ম্যাজিক’ একদিন বাস্তব অর্থেই বিনিয়োগ বাড়ানোর রূপকথা লিখবে।