প্রকাশিত: : মে ২৯, ২০২৫, ০৬:২২ পিএম
রাজনৈতিক অস্থিরতা, পারস্পরিক নিষেধাজ্ঞা এবং বয়কটের আহ্বান সত্ত্বেও বাংলাদেশে ভারতের পণ্য আমদানি কমেনি-বরং সাম্প্রতিক পরিসংখ্যান বলছে, চলতি অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকে ভারতের রফতানি সামান্য বেড়েছে। ভারতীয় বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্যমতে, ২০২৪-২৫ অর্থবছরের (এপ্রিল-মার্চ) প্রথম অংশে বাংলাদেশে ভারতের পণ্য রফতানির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ১৪৫ কোটি ৫৯ লাখ ডলার, যা আগের বছরের তুলনায় ৩.৫৩ শতাংশ বেশি।
এ অবস্থায় দুই দেশের রাজনৈতিক ও কূটনৈতিক টানাপড়েন সত্ত্বেও বাণিজ্যিক সম্পর্ক যে এখনও শক্ত ভিত্তিতে দাঁড়িয়ে আছে, তা স্পষ্ট। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বৈশ্বিক আন্তঃনির্ভরশীলতার যুগে রাজনৈতিক উত্তাপ স্বল্পমেয়াদে কিছু প্রভাব ফেললেও অর্থনৈতিক বাস্তবতা অনেকটাই ভিন্ন এবং তা দীর্ঘস্থায়ী সম্পর্কের ভিত গড়ে তোলে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক ড. দেলোয়ার হোসেন মনে করেন, দুই দেশের মধ্যে পারস্পরিক নির্ভরশীলতা এতটাই গভীর যে রাজনৈতিক দ্বন্দ্ব তা সহজে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে না। একইভাবে সাউথ এশিয়ান নেটওয়ার্ক ফর ইকোনমিক মডেলিং (সানেম)-এর নির্বাহী পরিচালক ড. সেলিম রায়হান জানান, দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্য গত এক দশকে অনেকটাই বাস্তব নির্ভরতায় রূপ নিয়েছে-যার ভিত্তি হলো পণ্যের চাহিদা, বাজারের সামর্থ্য এবং সরবরাহ ব্যবস্থাপনা।
বাংলাদেশের ক্ষেত্রে ভারত এখন চীনের পর দ্বিতীয় বৃহত্তম আমদানি উৎস দেশ। সবচেয়ে বেশি আমদানি হয় তুলা ও খাদ্যশস্য, পাশাপাশি খনিজ, জ্বালানি ও ভোগ্যপণ্যও আসে বিপুল পরিমাণে। অপরদিকে, বাংলাদেশ থেকে ভারতে রফতানির প্রধান অংশ গঠন করে তৈরি পোশাক, যার পরিমাণ কিছুটা বাড়লেও এখনও তুলনায় অনেক কম।
তবে ব্যবসায়ীরা আশঙ্কা প্রকাশ করছেন, বর্তমান অস্থায়ী সরকারের সময়ে দীর্ঘ মেয়াদে এই টানাপড়েন অর্থনৈতিক সম্পর্কেও প্রভাব ফেলতে পারে। ভারত থেকে ট্রানজিট সুবিধা প্রত্যাহার এবং বাংলাদেশে সুতা আমদানিতে সীমাবদ্ধতা এসব সংকটের ইঙ্গিত দেয়। বিশেষ করে বেনাপোল সীমান্ত দিয়ে বাণিজ্য বন্ধ থাকা ও নিষেধাজ্ঞার পাল্টা প্রতিক্রিয়া ব্যবসায়িক পরিবেশকে অনিশ্চয়তার মুখে ঠেলে দিচ্ছে।
ভারতের পরিসংখ্যান বলছে, ২০২১-২২ অর্থবছরে বাংলাদেশে তাদের রফতানি ছিল ১৬ বিলিয়ন ডলার, যা ২০২৩-২৪ এ কমে আসে ১১ বিলিয়নে। তবে চলতি বছর আবার তা বেড়ে ১১.৪৫ বিলিয়নে পৌঁছেছে। একই সময়ে বাংলাদেশ থেকেও ভারতের আমদানি বেড়ে ২ বিলিয়ন ডলারের কিছু বেশি হয়েছে, যা বাণিজ্য ভারসাম্যে ছোট কিন্তু ইতিবাচক পরিবর্তন।
বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, এই আন্তঃনির্ভরশীলতা বজায় রাখা দুই দেশের জন্যই কৌশলগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ। ভবিষ্যতে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা ও পরিপক্ব কূটনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গি থাকলে এ সম্পর্ক আরও ভারসাম্যপূর্ণ ও টেকসই হবে।