প্রকাশিত: : ডিসেম্বর ১, ২০২৫, ১২:৪৪ পিএম
মানুষের অব্যবস্থাপনা, বন দখল, চোরা শিকার ও ম্যানগ্রোভ ধ্বংসে দেশের জীববৈচিত্র্য ও ইকোসিস্টেম মারাত্মক হুমকিতে। প্রয়োজনীয় অক্সিজেন সরবরাহে যেখানে তিনটি পূর্ণবয়স্ক গাছ লাগে, সেখানে ঢাকায় ২৮ জনের জন্য একটি গাছ রয়েছে মাত্র। আন্তর্জাতিক সম্মেলনে উপস্থাপিত প্রবন্ধে উঠে আসে—বনভূমি হ্রাস, জলবায়ু পরিবর্তন ও দুর্বল শাসনব্যবস্থা বাংলাদেশের পরিবেশ সংকটকে আরও জটিল করে তুলছে।
মানবসৃষ্ট কর্মকাণ্ডে জীববৈচিত্র্য ও ইকোসিস্টেম মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। চোরা শিকার, বনভূমি দখল, আগুন, অবৈধভাবে নির্মাণ, ম্যানগ্রোভ বিনষ্টকরণ ও অনিয়ন্ত্রিত নৌযান চলাচলের কারণে বন ও বন্যপ্রাণী ক্রমাগত হুমকির মুখে। জলবায়ু পরিবর্তনের চাপও এসব বনকে নাজুক করে তুলছে।
প্রতিদিন একজন মানুষের কমপক্ষে ৫৫০ লিটার অক্সিজেন প্রয়োজন। আর এ অক্সিজেন সরবরাহ করতে কমপক্ষে তিনটি পূর্ণবয়স্ক গাছের প্রয়োজন। কিন্তু ঢাকার বাস্তবতায় দেখা যাচ্ছে ২৮ জন মানুষের জন্য মাত্র একটি গাছ রয়েছে। আমরা ভয়াবহ সংকটের মধ্যে বসবাস করছি। দেশে আড়াই লাখ একর বন দখল হয়ে গেছে। ২০১৫ সালের তুলনায় বনায়ন কমেছে এক লাখ একর।
রোববার (৩০ নভেম্বর) রাজধানীর তুলা উন্নয়ন বোর্ডের মিলনায়তনে বাংলাদেশ কৃষি সাংবাদিক ফোরাম (বিএজেএফ) আয়োজিত ৪ দিনব্যাপি ‘কৃষি ও খাদ্যে রাজনৈতিক অঙ্গীকার’ শীর্ষক আন্তর্জাতিক সম্মেলন ও কর্মশালার সমাপনী অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপনের সময় বন অধিদপ্তরের উপপ্রধান বন সংরক্ষক মো. জাহিদুল কবির এসব তথ্য জানিয়েছেন।
জাহিদুল কবির বলেন, মানবসৃষ্ট কর্মকাণ্ডে জীববৈচিত্র্য ও ইকোসিস্টেম মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। চোরা শিকার, বনভূমি দখল, আগুন, অবৈধ স্থাপনা নির্মাণ, ম্যানগ্রোভ বিনষ্টকরণ ও অনিয়ন্ত্রিত নৌযান চলাচলের কারণে বন ও বন্যপ্রাণী ক্রমাগত হুমকির মুখে। জলবায়ু পরিবর্তনের চাপও এসব বনকে নাজুক করে তুলছে।
বন সম্প্রসারণ কার্যক্রমের অংশ হিসেবে ব্যক্তি পর্যায়ে চারা বিতরণ নিয়ে তিনি বলেন, আমরা এখন পর্যন্ত ৪ লাখ ১৯ হাজার চারা বিনামূল্যে বিতরণ করেছি। এ উদ্যোগ মানুষকে বৃক্ষরোপণে উৎসাহিত করবে এবং দীর্ঘমেয়াদে দেশের কার্বন ধারণক্ষমতা বাড়াবে।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে বন অধিদপ্তরের প্রধান বন সংরক্ষক মো. আমীর হোসাইন চৌধুরী বলেন, জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলায় বনায়নই সবচেয়ে কার্যকর ও স্বল্পব্যয়ী প্রাকৃতিক সমাধান। মানুষের আরাম–আয়েশ যত বাড়ছে, ততই বাড়ছে জ্বালানি ব্যবহার ও কার্বন নিঃসরণ। উন্নত বিশ্বের মতো বাংলাদেশও ভবিষ্যতে শিল্পঘন দেশে পরিণত হলে কার্বন নিঃসরণ আরো বাড়বে। যদিও এখন পর্যন্ত বাংলাদেশ দূষণকারী শীর্ষ দেশের তালিকায় নেই।
তিনি বলেন, পৃথিবীতে এমন অনেক দেশ রয়েছে যাদের বনায়ন ছাড়াও টিকে থাকা সম্ভব। কিন্তু বাংলাদেশ বিশ্বের অন্যতম ঘনবসতিপূর্ণ দেশ—প্রতি বর্গকিলোমিটারে প্রায় ১২০০ মানুষ বাস করে। অন্যদিকে বিশ্বের মোট বনভূমির প্রায় ২০ শতাংশ রয়েছে রাশিয়ার মতো দেশে, যেখানে জনসংখ্যার ঘনত্ব মাত্র ৯ জন। ফলে বাংলাদেশে বনভূমির চাপ বেশি এবং বননির্ভরতা আরো বেশি।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্লান্টার স্কিল ডেভেলপমেন্টের প্রধান নির্বাহী ও গবেষক আবুল কালাম আজাদ বলেন, দেশের উর্বর পরিবেশ ও কৃষিতে ব্যাপক সম্ভাবনা থাকা সত্ত্বেও রাজনৈতিক অসহযোগিতা, মূল্যবোধের সংকট, বণ্টননীতির অভাব ও সঠিক নেতৃত্বের ঘাটতির কারণে উন্নয়ন ব্যাহত হচ্ছে। মাঠ পর্যায়ে সিন্ডিকেট, রাজনৈতিক প্রতিহিংসা, চাঁদাবাজি ও দুর্বল বাস্তবায়ন ব্যবস্থা কৃষি, বনায়ন ও পরিবেশ উন্নয়নে বড় চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখা দিয়েছে। মূল্যবোধসম্পন্ন মানুষ তৈরি এবং সুশাসন নিশ্চিত হলে খাদ্যনিরাপত্তা ও পরিবেশ সুরক্ষায় কাঙ্ক্ষিত পরিবর্তন আনা সম্ভব।
বাংলাদেশ কৃষি সাংবাদিক ফোরামের সাধারণ সম্পাদক আবু খালিদের সঞ্চালনায় সম্মেলনে সাহানোয়ার সাইদ শাহীন সভাপতিত্ব করেন।