সোমবার, ০১ ডিসেম্বর, ২০২৫

গত এক দশকে শিল্প খাতে কর্মসংস্থান কমেছে ১৪ লাখ

টিএনসি ডেস্ক

প্রকাশিত: : ডিসেম্বর ১, ২০২৫, ১১:১৮ এএম

গত এক দশকে বাংলাদেশের শিল্পে উৎপাদন বৃদ্ধি হলেও কর্মসংস্থান কমেছে ১৪ লাখ, নারী শ্রমিকের অংশীদারত্বও নেমে এসেছে প্রায় অর্ধেকে—প্রবৃদ্ধি শ্রমনির্ভর থেকে অটোমেশননির্ভর হয়ে উঠছে, বাড়ছে বেকারত্বের ঝুঁকি।

গত এক দশকে শিল্প খাতে কর্মসংস্থান কমেছে ১৪ লাখ

গত এক দশকে শিল্প খাতের গড় উৎপাদন বৃদ্ধি ছিল প্রায় ১০ শতাংশ। কিন্তু একই সময়ে শিল্প খাতে মোট কর্মসংস্থান ৯৫ লাখ থেকে কমে ৮১ লাখে এসেছে, অর্থাৎ কমেছে ১৪ লাখ। এতে প্রবৃদ্ধি শ্রমনির্ভর না থেকে পুঁজিনির্ভর ও অটোমেশনভিত্তিক হয়ে ওঠার বিষয়টি পরিষ্কার। তৈরি পোশাক খাতে ২০১০ থেকে ২০২৩ সময়ে রফতানি ১২ দশমিক ৫ বিলিয়ন ডলার থেকে বাড়তে বাড়তে ৪০ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছেছে। কিন্তু প্রায় ৪০ লাখ কর্মসংস্থান স্থির রয়েছে। আর প্রতি ১ মিলিয়ন ডলার রফতানিতে আগে ৫৪৫ জন শ্রমিক লাগত, এখন তা নেমে এসেছে ৯০-এর নিচে।

গতকাল রাজধানীর একটি হোটেলে র‍্যাপিড ও এফইএস বাংলাদেশের যৌথ গবেষণা উপস্থাপন অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধে এ চিত্র তুলে ধরেন র‍্যাপিডের চেয়ারম্যান ড. এমএ রাজ্জাক। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের সচিব ড. মো. সানওয়ার জাহান ভূঁইয়া। প্রধান অতিথি ছিলেন পিপিআরসির নির্বাহী চেয়ারম্যান ও সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ড. হোসেন জিল্লুর রহমান। বিশেষ অতিথি ছিলেন আইএলও বাংলাদেশের কান্ট্রি ডিরেক্টর ম্যাক্স তুনিয়ন।

গবেষণায় দেখা যায়, ২০১৩ থেকে ২০২৪ সালের মধ্যে উৎপাদন শিল্পে নারী কর্মীর সংখ্যা ৩৭ লাখ ৫০ হাজারের বেশি থেকে কমে প্রায় ২০ লাখে এসেছে। ফলে ১৮ লাখ নারী শ্রমিক শ্রমবাজার থেকে সরে গেছেন। এতে এ খাতে নারীদের অংশীদারত্ব ৪০ থেকে কমে ২৪ শতাংশে দাঁড়িয়েছে।

২০২৪ সালে সামগ্রিক বেকারত্বের হার ছিল ৩ দশমিক ৬৬ শতাংশ। এর বিপরীতে যুব বেকারত্বের হার দ্বিগুণেরও বেশি, প্রায় ৮ দশমিক শূন্য ৭ শতাংশ। এর মাধ্যমে দেখা যায়, বাংলাদেশের তরুণ জনগোষ্ঠী কর্মসংস্থান সংকটে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত।

গেস্ট অব অনার ড. সায়েমা হক বিদিশা বলেন, ‘উৎপাদনশীলতা, অন্তর্ভুক্তিমূলক অংশগ্রহণ ও বেসরকারি খাতের চাহিদার সঙ্গে দক্ষতার সঠিক সমন্বয় কর্মসংস্থান বাড়াতে পারে। লক্ষ্যভিত্তিক প্রণোদনা, গ্রামীণ বিনিয়োগ, শ্রমিক অধিকার সুরক্ষা ও ফ্রিল্যান্সিং সহায়তা তরুণদের বেকারত্ব কমাতে ভূমিকা রাখতে পারে।’

ম্যাক্স তুনিয়ন বলেন, ‘শ্রমকেন্দ্রিক নীতিতে গুরুত্ব দিতে হবে।’ তিনি শ্রম অধিকার জোরদার করা, আঞ্চলিক কর্মসংস্থান কৌশল সমন্বয়ের পদক্ষেপ নেয়া, শিশুযত্ন নীতিমালা উন্নত করা ও মূল খাতগুলোতে উৎপাদনশীলতা বাড়ানোর পরামর্শ দেন।

ড. হোসেন জিল্লুর রহমান বলেন, ‘গত ১৫-২০ বছর প্রবৃদ্ধি ও দারিদ্র্য কমার সাফল্যে নীতিনির্ধারকদের মধ্যে আত্মতুষ্টি দেখা গেছে। কর্মসংস্থান খাত উল্টো পথে হাঁটছে, কারণ উৎপাদন বাড়লেও চাকরি কমছে। কৃষি খাতে ৪৫ শতাংশ শ্রমিক কাজ করলেও জিডিপিতে অবদান মাত্র ১১ শতাংশ।’

Link copied!