ব্র্যাকের কার্নিভাল অফ চেঞ্জ: তারুণ্যের মিলনমেলায় দেখা মিলল উদ্ভাবন ও সৃজনশীলতার

দেশকে এগিয়ে নিয়ে যেতে তরুণ প্রজন্মের ভাবনা, তাদের উদ্ভাবন আর নানা উদ্যোগের প্রদর্শনীর মাধ্যমে শুরু হলো ‘কার্নিভাল অফ চেঞ্জ ২০২৫’। তরুণ প্রজন্মের নেতৃত্ব, সৃজনশীলতা ও ইতিবাচক পরিবর্তনের যাত্রাকে এগিয়ে নিতে বর্ণাঢ্য এই আয়োজনে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা ২৫০জনেরও বেশি তরুণ-তরুণী অংশ নেন। ২৯ ও ৩০ নভেম্বর সাভারে ব্র্যাক সিডিএমএ প্রাঙ্গণে আয়োজিত এই অনুষ্ঠানে তরুণ উদ্যোক্তা ও উদ্ভাবকদের সামাজিক উদ্যোগ ও উদ্ভাবন প্রদর্শনের পাশাপাশি ছিল মতবিনিময়, আলোচনা ও কর্মশালাসহ নানা আয়োজন। 
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সাহিত্যিক, শিক্ষাবিদ এবং বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা অধ্যাপক আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ। ব্র্যাকের নির্বাহী পরিচালক আসিফ সালেহ্ এ সময় বক্তব্য রাখেন। 
প্রথম দিনের আয়োজন শুরু হয় অনুপ্রেরণাদায়ক সেশন “ইউথ ভয়েসেস একোয়িং দ্য এসেন্স অব চেঞ্জমেকিং” দিয়ে। এরপর অনুষ্ঠিত “দ্য ওয়ে টু সাকসেস” বা ‘সাফল্যের পথ’ শীর্ষক বক্তৃতা করেন ব্র্যাকের হিউম্যান ক্যাপিটাল ডেভেলপমেন্ট ক্লাস্টারের পরিচালক সাফি রহমান খান। অনুষ্ঠানের অন্যতম আকর্ষণ ‘আমরা নতুন ইয়াং চেঞ্জমেকার্স অ্যাওয়ার্ড ২০২৫’ -এর আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন ব্র্যাকের মাইগ্রেশন প্রোগ্রাম ও ইউথ প্ল্যাটফর্মের সহযোগী পরিচালক মো. শরিফুল ইসলাম হাসান।

চূড়ান্ত পর্বে মনোনীত ১২টি প্রকল্পের মধ্য থেকে সৃজনশীলতা, সমাজে ইতিবাচক পরিবর্তন ও স্থানীয় জনগোষ্ঠীর উন্নয়নে ভূমিকা রাখার সম্ভাবনা ও স্বীকৃতি হিসেবে তিনটি অসাধারণ উদ্যোগকে পুরষ্কারের জন্য মনোনিত করা হয়।  এই স্বীকৃতি তরুণ চেঞ্জমেকারদের উদ্ভাবনী চিন্তাভাবনা, উদ্যোক্তা মনোভাব এবং দায়িত্বশীলতার সঙ্গে সামাজিক চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার সক্ষমতার স্বীকৃতি। এই প্রকল্প ও উদ্যোগকে আরও টেকসইভাবে গড়ে তুলে আরো বড় পরিসরে নিয়ে যেতে তারা ব্র্যাকের ‘সোশ্যাল আন্ত্রেপ্রেনার্স ফেলোশিপ’-এর সুযোগ পবেন। 

অনুষ্ঠানের শেষ পর্বে ছিল মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে। এএনএন-এর তরুণ সদস্যদের পাশাপাশি দেশের জনপ্রিয় মিউজিক ব্যান্ড ওয়ারফেজ ও সভ্যতার মনোমুগ্ধকর সংগীত উপভোগ করেন তরুণ-তরুণীসহ অনুষ্ঠানে আমন্ত্রিত অতিথিরা। 
কার্নিভাল অব চেঞ্জ ২০২৫-এর প্রথম দিনটি ছিল স্বীকৃতি, সংলাপ ও উদযাপনের এক প্ল্যাটফর্ম, যা বাংলাদেশের পরবর্তী প্রজন্মের চেঞ্জমেকারদের ক্ষমতায়ন ও তাদের কণ্ঠস্বরকে জোরালো করতে ব্র্যাকের প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করেছে।
কার্নিভালের দ্বিতীয় দিনে ছিলো অংশগ্রহণকারী তরুণ-তরুণীদের আত্মউন্নয়ন, ক্যারিয়ার নির্দেশনা ও দেশ গঠনে ইতিবাচক ভূমিকা রাখার বিষয়ে মতবিনিময়, আলোচনা, সংলাপ এবং কর্মশালাসহ নানা আয়োজন।
এ দিন ব্যক্তিগত সুস্থতা বিষয়ক একটি পর্ব পরিচালনা করবেন ব্র্যাকের লার্নিং অ্যান্ড লিডারশিপ ডেভেলপমেন্ট-এর অ্যাসিস্ট্যান্ট জেনারেল ম্যানেজার মিফতাহ জামান। দিনের অন্যতম আকর্ষণ “বিল্ডিং আ বেটার ওয়ার্ল্ড” শীর্ষক আন্তঃপ্রজন্মীয় সংলাপ পরিচালনা করবেন ব্র্যাক মাইগ্রেশন প্রোগ্রাম ও ইয়ুথ ইনিশিয়েটিভস-এর সহযোগী পরিচালক মো. শরিফুল ইসলাম হাসান। প্যানেল আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন লেখক ও গবেষক আফসান চৌধুরী, বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের সিনিয়র অ্যাডভোকেট এবং ব্লাস্ট-এর নির্বাহী পরিচালক সারা হোসেন, ট্রায়াথলেট ও আয়রনম্যান মোহাম্মদ শামছুজ্জামান আরাফাত, ভ্রমণকন্যা: ট্রাভেলেটস অব বাংলাদেশের সহ-প্রতিষ্ঠাতা ডা. মনসী সাহা এবং জুলাই ২০২৪ ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম অংশগ্রহণকারী কাজী আব্দুল্লাহ। 

প্রসঙ্গত,  ব্র্যাকের ‘আমরা নতুন নেটওয়ার্ক’ কাজ করে বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া তরুণ এ শিক্ষার্থীদের নিয়েই। জীবনদক্ষতামূলক প্রশিক্ষণ, পরামর্শ এবং নানাবিধ কার্যক্রমের মাধ্যমে তাদেরকে ভবিষ্যৎ নেতৃত্বদানের উপযোগী করে গড়ে তোলাই এর লক্ষ্য। ২০১৮ সালে প্রতিষ্ঠিত এএনএন এখন দেশের ১৭টি জেলায় বিস্তৃত। এই উদ্যোগের মাধ্যমে ২ হাজার ৬০০জনের বেশি তরুণ প্রশিক্ষণ পেয়েছেন। এই তরুণ চেঞ্জমেকারদের মধ্যে অনেকে পেয়েছে গেটস ফাউন্ডেশন, নাসা এবং জাতিসংঘ থেকে নানা পুরস্কার ও সম্মাননা। ‘আমরা নতুন নেটওয়ার্ক’-এর অ্যালামনাইরা এখনও যুক্ত আছে এই প্ল্যাটফর্মে। তারা অনুজদের দিচ্ছে প্রয়োজনীয় পরামর্শ, দিকনির্দেশনা এবং মেন্টরশিপ।