প্রকাশিত: : জুন ২৬, ২০২৫, ০৩:৪৯ পিএম
মৌলভীবাজারের কুলাউড়া উপজেলার বরমচাল চা-বাগান থেকে এই প্রথম কোনো শিক্ষার্থী হিসেবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সুযোগ পেয়েছেন ইতি গৌড়। চা-শ্রমিক পরিবারের মেয়ে ইতি এবার ঢাবির ফিন্যান্স বিভাগে ভর্তি হচ্ছেন। এর আগে তিনি শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের বিবিএ বিভাগেও সুযোগ পেয়েছিলেন, তবে শেষ পর্যন্ত ঢাবিকেই বেছে নিয়েছেন।
বরমচাল চা-বাগানের ডিপো লাইনে ইতির বাড়ি। তাঁদের পরিবারে তিন বোনের মধ্যে ইতি সবচেয়ে ছোট। মা সুমিত্রা গৌড় ছিলেন চা-শ্রমিক, যিনি দুই বছর আগে মারা যান। বাবা শংকর গৌড় বাপেক্সে নিরাপত্তাকর্মী হিসেবে কর্মরত থাকলেও ২০১৮ সালে অসুস্থতার কারণে চাকরি ছাড়তে বাধ্য হন। বর্তমানে তিনিও অসুস্থ।
ইতি তার প্রাথমিক শিক্ষা নেন বরমচাল মিশন স্কুল থেকে এবং পরে বরমচাল উচ্চবিদ্যালয় ও কলেজে পড়েন। ২০২২ সালে এসএসসিতে জিপিএ ৪.৬৭ এবং ২০২৪ সালে ইউছুফ-গণি কলেজ থেকে এইচএসসিতে জিপিএ ৪.৮৩ অর্জন করেন।
বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির প্রসঙ্গে ইতি বলেন, ঢাবির পাশাপাশি তিনি শাহজালাল, জাহাঙ্গীরনগর ও জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নিয়েছিলেন। শাহজালালে চান্স পেয়ে ভর্তি হয়ে গিয়েছিলেন, তবে ঢাবির ফল প্রকাশের পর সিদ্ধান্ত পাল্টে ঢাবিকেই বেছে নেন।
বড় বোন স্মৃতি গৌড় ঢাকায় শিক্ষক স্বামীর সঙ্গে সংসার করছেন। মেজ বোন সুইটি গৌড় নার্সিং কোর্সে অধ্যয়নরত। মা সুমিত্রার নামে থাকা জমি বিক্রি করে বাবার চিকিৎসা, সুইটির পড়াশোনা ও ইতির শিক্ষাব্যয় মেটানো হয়।
ইতির ভর্তির খবর ছড়িয়ে পড়ার পর স্থানীয় কিছু শিক্ষানুরাগী ও সংগঠন তার পাশে দাঁড়িয়েছে। কেউ কেউ ভর্তির খরচ দিয়েছেন, অনেকে দিয়েছেন সহায়তার আশ্বাস।
ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা প্রসঙ্গে ইতি জানান, ফিন্যান্সে স্নাতক শেষ করে চাটার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্ট হওয়ার ইচ্ছা রয়েছে তাঁর। ভালো রেজাল্টের মাধ্যমে কর্মজীবন গড়তে চান তিনি।
মেয়ের সাফল্যে আবেগাপ্লুত বাবা শংকর গৌড় বলেন, “যখন চাকরিতে ছিলাম, বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়া বড় বড় স্যারদের দেখতাম। মনে হতো, আমাদের ঘর থেকেও যদি কেউ ওখানে যেতে পারত! আজ সেই স্বপ্ন সত্যি হলো। সুমিত্রা নিশ্চয়ই ওপার থেকে আশীর্বাদ করছেন।”
স্থানীয় শিক্ষার্থী নিত্যানন্দ দাস বলেন, “এই বাগান থেকে কেউ আগে কোনো পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে যেতে পারেনি। ইতি সেই ইতিহাস ভেঙেছে। আমরা গর্বিত।”
বরমচাল চা-বাগানের ব্যবস্থাপক শাহরিয়ার পারভেজ জানান, এখনও ইতির বিষয়ে তাঁকে কেউ জানায়নি, তবে খোঁজখবর নেবেন বলে জানিয়েছেন।