বৃহস্পতিবার, ০৩ জুলাই, ২০২৫

রোহিঙ্গাদের জীবনমান উন্নয়নে ৬৫২ কোটি টাকার প্রকল্প

টিএনসি ডেস্ক

প্রকাশিত: : জুন ২৫, ২০২৫, ১০:০১ পিএম

রোহিঙ্গাদের জীবনমান উন্নয়নে ৬৫২ কোটি টাকার প্রকল্প

বাংলাদেশে অবস্থানরত রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী ও স্থানীয় সম্প্রদায়ের জন্য পানি সরবরাহ, স্যানিটেশন এবং কঠিন বর্জ্য ব্যবস্থাপনা নিশ্চিতে ৬৫২ কোটি ৫৫ লাখ টাকার প্রকল্প অনুমোদন দিয়েছে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি (একনেক)।
মঙ্গলবার চলতি অর্থবছরের শেষ একনেক সভায় অন্য ১৬টি প্রকল্পের সঙ্গে অনুমোদন পায় এ প্রকল্পও। অনুমোদিত এসব প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছে ৮ হাজার ৯৭৪ কোটি টাকা।

প্রকল্প সূত্রে জানা যায়, ‘বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী এবং স্থানীয় জনসমাজের সমন্বিত সেবা ও জীবন-জীবিকা উন্নয়ন’ নামের প্রকল্পটির বড় অংশ ঋণ ও অনুদানের অর্থায়নে কক্সবাজার ও নোয়াখালীর ১১ উপজেলায় বাস্তবায়ন হবে। এর মধ্যে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি) ২৩২ কোটি ২৮ লাখ টাকা ঋণ দেবে। এছাড়া ৩০৭ কোটি ৪৮ লাখ টাকা অনুদান এবং ১১২ কোটি ৭৮ লাখ টাকা সরকার (জিওবি) জোগান দেবে। স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর এটি বাস্তবায়ন করবেন। প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হলে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর পাশাপাশি টেকনাফ-উখিয়ার স্থানীয় জনসমাজের পানি, স্যানিটেশন ও বর্জ্য ব্যবস্থাপনা পরিষেবা উন্নয়ন হবে।

প্রকল্পের কার্যক্রমে বলা হয়েছে, রোহিঙ্গা অধ্যুষিত কক্সবাজারের উখিয়া থেকে টেকনাফ পর্যন্ত পানি সঞ্চালন লাইন, বিতরণ নেটওয়ার্ক এবং গৃহসংযোগ বাস্তবায়ন হবে ১২৫ কোটি টাকার। কক্সবাজারের নয়টি উপজেলায় ২০টি মিনি পাইপ পানি সরবরাহ সিস্টেম নির্মাণে ১২১ কোটি টাকা ব্যয় হবে। এছাড়া পানি শোধনাগার ও রোহিঙ্গা ক্যাম্পের জন্য সেকেন্ডারি লাইন নির্মাণ, বিদ্যমান মিনি পাইপ ওয়াটার স্কিম ও স্যানিটেশন সুবিধা পরিচালন, ভাসানচরে ফিজিক্যাল স্লাজ ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম উন্নয়ন এবং সমন্বিত বর্জ্য ব্যবস্থাপনা সুবিধার সংস্কার ও পুনর্বাসন করবে প্রকল্পটি। আগামী জুলাই থেকে শুরু হয়ে প্রকল্পটি শেষ হবে ২০২৮ সালের জুনে। এর আগে এ প্রকল্প থেকে অপ্রয়োজনীয় ও অযৌক্তিক ১৫টি খাত বাতিল করে প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটি (পিইসি)।

উখিয়া, টেকনাফ ও ভাসানচরে রোহিঙ্গাদের বসবাস থাকলেও কক্সবাজারের বাকি সাত এবং নোয়াখালীর সুবর্ণচর ও হাতিয়া উপজেলায় প্রকল্প বাস্তবায়ন নিয়ে উঠেছে প্রশ্ন। তবে প্রকল্পের আওতায় সব উপজেলাকে সমান গুরুত্ব দেয়া হবে না বলে জানিয়েছেন জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী (পরিকল্পনা) এহতেশামুল রাসেল খান। বণিক বার্তাকে তিনি বলেন, ‘‌প্রকল্পটি উখিয়া, টেকনাফ এবং ভাসানচরের রোহিঙ্গা ও স্থানীয় জনগোষ্ঠীর জন্য নেয়া। এখানে মূল কাজটি হচ্ছে মিনি ওয়াটার পাইপ সাপ্লাই সিস্টেম উন্নয়ন করা। উখিয়া, টেকনাফের পাশাপাশি কক্সবাজারের অন্যান্য উপজেলার স্থানীয়রাও রোহিঙ্গা সংকটে অর্থনৈতিকভাবে প্রভাবিত। তাই সেখানে কয়েকটি স্থানে আমরা ওয়াটার পাইপ সিস্টেম চালু করব। এছাড়া নোয়াখালীর সুবর্ণচর ও হাতিয়ায় মূলত ফিক্যাল স্লেজ সিস্টেমের কাজ করা হবে। সেজন্য বাজেট খুবই সীমিত। প্রকল্পের আরেকটি প্রধান কাজ হচ্ছে উখিয়ায় যে পানির সঞ্চালন লাইন আছে সেখান থেকে টেকনাফের রোহিঙ্গা ক্যাম্পে লাইনটি সম্প্রসারণ করা হবে। এছাড়া বর্জ্য ব্যবস্থাপনা সংস্কারের উদ্যোগ নেয়া হবে। প্রকল্পটি মূলত এডিবির অর্থায়নে হচ্ছে। যার কারণে তাদের কিছু নির্দেশনা থাকে, সেটাও অনুসরণ করতে হয়।’

রোহিঙ্গা ও স্থানীয় জনসমাজের জীবনমান উন্নয়ন প্রকল্প ছাড়া আরো ১৬টি প্রকল্প অনুমোদন দিয়েছে একনেক। অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূসের সভাপতিত্বে একনেক সভায় বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ও বিশেষ সহকারীরা উপস্থিত ছিলেন। এতে স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের ২ হাজার ৫৪৯ কোটি টাকার উপজেলা কমপ্লেক্স সম্প্রসারণ প্রকল্প, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ১ হাজার ৪১৩ কোটি টাকার সাতটি বিভাগীয় শহরে ২০০ শয্যাবিশিষ্ট মাদকাসক্তি নিরাময় ও পুনর্বাসন কেন্দ্র নির্মাণ প্রকল্প, নৌ-পরিবহন মন্ত্রণালয়ের ২৪৮ কোটি টাকার চারটি মেরিন একাডেমিতে সিমুলেটর ও সংশ্লিষ্ট সুবিধাদি স্থাপনের মাধ্যমে সক্ষমতা বৃদ্ধি প্রকল্প, আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের ১৮৪ কোটি ব্যয়ে নারীর জন্য ন্যায়বিচারের সুযোগ: সম্প্রদায়কে শক্তিশালী করা বিরোধ নিষ্পত্তি এবং মামলা ব্যবস্থাপনা উন্নত করা প্রকল্প, ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের ১ হাজার ২৮৬ কোটি টাকার"বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক টেলিযোগাযোগ ব্যবস্থা সম্প্রসারণের লক্ষ্যে তৃতীয় সাবমেরিন কেবল স্থাপনের সংশোধিত প্রকল্প, শিল্প মন্ত্রণালয়ের সার সংরক্ষণ ও বিতরণ সুবিধার জন্য দেশের বিভিন্ন জেলায় ১৩টি নতুন বাফার গোডাউন নির্মাণে সংশোধিত প্রকল্প, মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রায় ৬৬৬ কোটি টাকার"কিশোর-কিশোরী ক্লাব স্থাপন এবং ৩০৯ কোটি টাকার"নারী ও শিশু নির্যাতন প্রতিকার ও প্রতিরোধে সমন্বিত সেবা জোরদারকরণ এবং কুইক রেসপন্স টিমের কার্যক্রম প্রকল্প। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের ২ হাজার ৯ কোটি টাকার টিটিএফ প্রোগ্রাম"প্রকল্প, সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের ১৫০ কোটি টাকার" দেশব্যাপী ভ্রাম্যমাণ লাইব্রেরি স্থাপনের সংশোধিত"প্রকল্প অনুমোদিত হয়েছে। এছাড়া পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের"৪০ কোটি টাকার কার্যক্রম বিভাগে একটি নতুন ডিজিটাল ডাটাবেজ সিস্টেম স্থাপনের মাধ্যমে উন্নয়ন বাজেট ব্যবস্থাপনা পদ্ধতি শক্তিশালীকরণ প্রকল্প, ৩১৫ কোটি টাকার পাবলিক ইনভেস্টমেন্ট ম্যানেজমেন্ট সিস্টেমের উন্নতি প্রকল্প, ৫৫২ কোটি টাকার"জনসেবা প্রদান উন্নত করার জন্য ক্রয় আধুনিকীকরণ প্রকল্প, পরিসংখ্যানগত সক্ষমতা বৃদ্ধি এবং আধুনিকীকরণ প্রকল্প, অর্থ মন্ত্রণালয়ের প্রায় ৩১৫ কোটি টাকার ডিজিটাল রূপান্তর এবং সক্ষমতা বৃদ্ধির মাধ্যমে পাবলিক অডিট শক্তিশালীকরণ ও অভ্যন্তরীণ রাজস্ব আহরণ শক্তিশালীকরণ প্রকল্প অনুমোদন দিয়েছে একনেক। এছাড়া সভায় পরিকল্পনা উপদেষ্টা অনুমোদিত ১৫টি প্রকল্প সম্পর্কে একনেক সদস্যদের অবহিত করা হয়।

Link copied!