প্রকাশিত: : ডিসেম্বর ১৮, ২০২৫, ১১:৪৬ এএম
অন্তর্বর্তী সরকারের অধীনে অবাধ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন আয়োজনের অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন বলেছেন, বাংলাদেশের নির্বাচন প্রক্রিয়া নিয়ে ভারতের কোনো পরামর্শ ঢাকা গ্রহণযোগ্য মনে করে না।
বাংলাদেশের নির্বাচন প্রক্রিয়া নিয়ে ভারতের কোনো পরামর্শ ঢাকা প্রত্যাশা করে না বলে জানিয়েছেন পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন। তিনি বলেন, ‘এ বিষয়ে ভারতের সাম্প্রতিক মন্তব্য গ্রহণযোগ্য নয়; তবে অন্তর্বর্তী সরকার একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।’
গতকাল বিকালে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা বলেন। তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশে নির্বাচন কীভাবে হবে—এ বিষয়ে প্রতিবেশী কোনো দেশের পরামর্শ আমরা চাই না।’ খবর বাসস।
গতকাল দিল্লিতে বাংলাদেশের হাইকমিশনার এম রিয়াজ হামিদুল্লাহকে তলব করে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। সেখানে কী কথা হয়েছে—সে বিষয়ে জানতে চাইলে ভারতের বক্তব্য নিয়ে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা এ কথা বলেন।
পররাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, ‘ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে যেসব প্রশ্নবিদ্ধ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে, সে সময় ভারত নীরব ছিল।’
তিনি উল্লেখ করেন, সম্প্রতি ভারত থেকে বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে কিছু বক্তব্য এসেছে, যা অন্তর্বর্তী সরকার প্রয়োজনীয় মনে করে না। তিনি বলেন, ‘এখন আমরা একটি ভালো নির্বাচনের দিকে এগোচ্ছি, আর হঠাৎ করে পরামর্শ আসছে—আমি এটিকে পুরোপুরি অগ্রহণযোগ্য মনে করি।’
তৌহিদ হোসেন বলেন, ‘অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেয়ার প্রথম দিন থেকেই এমন একটি পরিবেশ তৈরির কথা বলে আসছে, যেখানে নাগরিকরা মর্যাদার সঙ্গে স্বাধীনভাবে ভোট দিতে পারবেন, যে পরিবেশ গত ১৫ বছরে অনুপস্থিত ছিল।’
তিনি বলেন, ‘ওই সময়ে ভারত ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক বজায় রাখলেও নির্বাচন প্রক্রিয়া নিয়ে ব্যাপক সমালোচনার পরও কোনো উদ্বেগ প্রকাশ করেনি।’
পররাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, ‘একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচন নিশ্চিত করতে কী কী পদক্ষেপ প্রয়োজন, সে বিষয়ে বাংলাদেশ সম্পূর্ণ সচেতন। মানুষ স্বাধীনভাবে ভোট দিতে পারবে এবং যাদের ভোট দেবে তারাই নির্বাচিত হবে, এটাই আমাদের অঙ্গীকার।’
ঢাকা ও নয়াদিল্লির সাম্প্রতিক কূটনৈতিক যোগাযোগ প্রসঙ্গে তৌহিদ হোসেন বলেন, ‘গত রোববার ঢাকায় নিযুক্ত ভারতীয় হাইকমিশনারকে তলব করা হয় এবং তিনদিন পর আজ (বুধবার) নয়াদিল্লিতে বাংলাদেশের হাইকমিশনারকে তলব করা হয়েছে। এটি অস্বাভাবিক কিছু নয়। মতপার্থক্য থাকলে এ ধরনের তলব ও পাল্টা তলব হয়ে থাকে।’
পররাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, ‘ক্ষমতাচ্যুত শেখ হাসিনা ভারতে অবস্থান করে আগে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বক্তব্য দিতেন, যা এখন মূলধারার গণমাধ্যমেও নিয়মিত প্রকাশিত হচ্ছে এবং সেগুলোতে উসকানিমূলক উপাদান থাকছে। আদালতে দণ্ডিত একজন ব্যক্তি প্রতিবেশী দেশে অবস্থান করে অস্থিতিশীলতা সৃষ্টির চেষ্টা করলে তার বক্তব্য বন্ধের অনুরোধ বা তাকে ফেরত চাওয়া অস্বাভাবিক নয়।’
তৌহিদ হোসেন বলেন, ‘অন্তর্বর্তী সরকার গঠনের পর থেকেই বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্কে কিছুটা টানাপড়েন রয়েছে। তবে ঢাকা নয়াদিল্লির সঙ্গে কার্যকর ও সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্ক চায়। সম্পর্ক এগিয়ে নিতে হলে দুই পক্ষকেই চেষ্টা করতে হবে। কিছু বিষয়ে আমাদের নিজস্ব অবস্থান ও আপত্তিও রয়েছে।’
ঢাকায় ভারতীয় হাইকমিশনের নিরাপত্তা নিয়ে নয়াদিল্লির উদ্বেগ প্রসঙ্গে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, ‘আজ (গতকাল) মিশন ঘেরাও কর্মসূচির ঘোষণা থাকায় নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। আমরা প্রয়োজনীয় নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়েছি এবং নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পেরেছি।’
তিনি স্মরণ করিয়ে দেন, এর আগে কলকাতা ও আগরতলায় বাংলাদেশের মিশনের সামনে অনুরূপ কর্মসূচি অনুষ্ঠিত হয় এবং আগরতলায় বাংলাদেশের মিশনে হামলার ঘটনাও ঘটেছিল।