প্রকাশিত: : নভেম্বর ২১, ২০২৫, ১২:১৫ এএম
কলম্বো সিকিউরিটি কনক্লেভকে (সিএসসি) ‘উন্মুক্ত আঞ্চলিকতাবাদের’ ভিত্তিতে একটি উন্মুক্ত, অন্তর্ভুক্তিমূলক ও বহুপক্ষীয় আঞ্চলিক নিরাপত্তা সংস্থা হিসেবে গড়ে উঠতে দেখতে চায় বাংলাদেশ। পারস্পরিক আস্থা, সুবিধা ভাগাভাগি এবং অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ না করার নীতিকে সামনে রেখে এই নিরাপত্তা ফোরামকে এগিয়ে নেওয়ার প্রত্যাশা ব্যক্ত করেছেন বাংলাদেশের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা খলিলুর রহমান।
আজ বৃহস্পতিবার দিল্লিতে অনুষ্ঠিত সিএসসির জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টাদের সপ্তম সম্মেলনে বক্তৃতাকালে তিনি এ মন্তব্য করেন। ভারতের ফরেন সার্ভিস একাডেমি সুষমা স্বরাজ ইনস্টিটিউটের সম্মেলনকক্ষে এ আয়োজন হয়। স্বাগতিক দেশের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত দোভাল বক্তব্যের মাধ্যমে সম্মেলন উদ্বোধন করেন।
দিল্লিতে সিএসসিতে বাংলাদেশের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা খলিলুর রহমান ও ভারতের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত দোভালের মধ্যে করমর্দনের একটি ছবি প্রকাশ করেছে বাংলাদেশ হাইকমিশন।
অজিত দোভাল বলেন, মহাসাগর এই অঞ্চলের সবচেয়ে বড় ঐতিহ্য এবং অর্থনীতির চালিকাশক্তি। সদস্যরাষ্ট্রগুলো অভিন্ন সামুদ্রিক মানচিত্র ভাগাভাগি করে বলেই আঞ্চলিক শান্তি, নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতা রক্ষার দায়িত্ব সবার। একটি উন্মুক্ত ও অন্তর্ভুক্তিমূলক সামুদ্রিক এলাকা সৃষ্টির স্বার্থে সহায়ক পরিবেশ গড়ে তোলার ওপর গুরুত্ব দেন তিনি। একই সঙ্গে তিনি পরিবর্তনশীল বৈশ্বিক পরিস্থিতি ও ভবিষ্যৎ ঝুঁকি মোকাবিলায় সিএসসির সদস্যদেশগুলোর সঙ্গে একযোগে কাজ করার অঙ্গীকার ব্যক্ত করেন।
বাংলাদেশের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা খলিলুর রহমান বলেন, বঙ্গোপসাগরীয় উপকূলীয় রাষ্ট্র হিসেবে ভারত মহাসাগর অঞ্চলের স্থিতিশীলতা ও সমৃদ্ধি বাংলাদেশের পারস্পরিক স্বার্থের বিষয়। বৈশ্বিক জিডিপি, আন্তর্জাতিক বাণিজ্য, জলবায়ু পরিবর্তন, প্রযুক্তিগত অগ্রগতি ও কৌশলগত বাস্তবতায় ভারত মহাসাগরীয় অঞ্চলের সম্মিলিত অংশীদারত্বকে তিনি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বলে উল্লেখ করেন।
তিনি বলেন, বাংলাদেশ ধারাবাহিকভাবে এমন মূল্যবোধ ও নীতি অনুসরণ করে যা যৌথ সমৃদ্ধির জন্য একটি স্বাধীন, উন্মুক্ত, শান্তিপূর্ণ, নিরাপদ ও অন্তর্ভুক্তিমূলক ভারত মহাসাগর নিশ্চিতে সহায়ক। জাতীয় সার্বভৌমত্ব, সমতা, রাজনৈতিক স্বাধীনতা, অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ না করা, আন্তর্জাতিক বিরোধের শান্তিপূর্ণ সমাধান, আন্তর্জাতিক আইন এবং জাতিসংঘ সনদের নীতিমালা—এসবকে তিনি অবশ্য-পালনীয় ভিত্তি হিসেবে উল্লেখ করেন। পাশাপাশি টেকসই উন্নয়ন, আন্তর্জাতিক শান্তি ও নিরাপত্তা, মানবিক সহায়তা এবং মৌলিক অধিকার রক্ষায় আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক সহযোগিতার ওপর জোর দেন।
বাংলাদেশ সিএসসির পাঁচটি মূল স্তম্ভের গুরুত্ব স্বীকার করে এবং এসব অগ্রাধিকারের মাধ্যমে সম্মিলিত নিরাপত্তা, আঞ্চলিক স্থিতিশীলতা ও যৌথ সমৃদ্ধি বাড়ানোর প্রত্যাশা ব্যক্ত করে নিরাপত্তা উপদেষ্টা।
তিনি আরও বলেন, অঞ্চলের সামুদ্রিক ক্ষেত্র আন্তর্জাতিক বাণিজ্য ও স্থিতিশীলতার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। জলদস্যুতা, অবৈধ মাছ ধরা, সামুদ্রিক সন্ত্রাসবাদ ও অপরাধ মোকাবিলায় বাংলাদেশ মিত্র দেশগুলোর সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করছে। অতীতে সন্ত্রাসবাদ ও উগ্রবাদের বড় ধরনের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করায় বাংলাদেশের দৃঢ় অবস্থান হলো—যেকোনো পরিস্থিতিতেই সন্ত্রাসবাদের প্রতি ‘জিরো টলারেন্স’।
সম্প্রতি বাংলাদেশ ভুয়া তথ্য ও বিভ্রান্তিমূলক তথ্যের হুমকির মুখোমুখি হয়েছে উল্লেখ করে খলিলুর রহমান বলেন, সাইবার স্পেস, গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামো ও প্রযুক্তি সুরক্ষিত রাখা বাংলাদেশের অঙ্গীকার—শুধু নাগরিকদের সুরক্ষা নয়, বরং নিশ্চিত করা যে বাংলাদেশ থেকে কোনো কর্মকাণ্ড আঞ্চলিক বা বৈশ্বিক সম্প্রদায়ের জন্য হুমকি হয়ে না ওঠে।
তিনি বলেন, আঞ্চলিক নিরাপত্তার জটিলতা মোকাবিলায় পারস্পরিক বিশ্বাস, অভিন্ন স্বার্থ ও সুবিধা ভাগাভাগির নীতিতে বাংলাদেশ অঙ্গীকারবদ্ধ। একটি নিরাপদ, স্থিতিশীল ও সমৃদ্ধ অঞ্চল গঠনে বাংলাদেশ হাতে হাত মিলিয়ে এগিয়ে যেতে প্রস্তুত। কোনো বাইরের বা অভ্যন্তরীণ কারণ যেন কোনো রাষ্ট্র বা জনগোষ্ঠীর জন্য হুমকিতে পরিণত না হয়—এ বিষয়ে তিনি সতর্ক করেন।
সবশেষে তিনি বলেন, কলম্বো সিকিউরিটি কনক্লেভকে উন্মুক্ত আঞ্চলিকতাবাদের ভিত্তিতে একটি উন্মুক্ত ও অন্তর্ভুক্তিমূলক বহুপক্ষীয় সংস্থা হিসেবে গড়ে ওঠার প্রত্যাশা করে বাংলাদেশ।