প্রকাশিত: : জুন ৮, ২০২৫, ০৪:৪৩ পিএম
ছবি: এআই জেনারেটেড
চট্টগ্রাম শহরের প্রতিদিনের প্লাস্টিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় মুখ্য ভূমিকা পালন করছে অবহেলিত শিশু-কিশোররা, যাদের সমাজে ‘টোকাই’ নামে ডাকা হয়। তারা না থাকলে এই নগর অনেক আগেই প্লাস্টিক বর্জ্যের বিশাল ভাগাড়ে পরিণত হতো।
এক গবেষণায় উঠে এসেছে, চট্টগ্রামের ৪১টি ওয়ার্ডে বছরে প্রায় ২ লাখ ৫৮ হাজার মেট্রিক টন প্লাস্টিক বর্জ্য উৎপন্ন হয়। এর মধ্যে ২০ হাজারেরও বেশি সংগ্রাহক ও উদ্যোক্তা প্রায় ১ লাখ ৮৮ হাজার মেট্রিক টন প্লাস্টিক পুনঃব্যবহারযোগ্য হিসেবে সংগ্রহ করে পুনরায় পণ্য উৎপাদনে যুক্ত করছেন। যা মোট বর্জ্যের প্রায় ৭৩ শতাংশ। এই কাজের বড় অংশটিই করে থাকে সুবিধাবঞ্চিত পথশিশুরা, যারা স্বাস্থ্যঝুঁকি নিয়ে প্রতিদিন কাজ করছে।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) সমুদ্রবিজ্ঞান ইনস্টিটিউটের নেতৃত্বে পরিচালিত এক গবেষণা প্রকল্পের আওতায় প্লাস্টিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় প্রশিক্ষণ, সচেতনতামূলক কার্যক্রম এবং বিকল্প পণ্যের ব্যবহার শুরু হয়েছে। এর অংশ হিসেবে টোকাই ও ভাঙারিদের দেওয়া হয়েছে পিপিই, হ্যান্ডগ্লাভস, মাস্ক ও বুট জুতা। একইসাথে তাদের শেখানো হচ্ছে কোন কোন প্লাস্টিক রিসাইকেলযোগ্য, যাতে তারা ভালো দাম পায় এবং পরিবেশের ক্ষতিও কমে।
বিশ্বব্যাংক পৃষ্ঠপোষিত ‘প্লাস্টিক ফ্রি রিভারস অ্যান্ড সিজ ফর সাউথ এশিয়া (প্লিজ)’ প্রকল্পের আওতায় শুরু হওয়া এই গবেষণায় অংশ নিয়েছেন চবির বিভিন্ন অনুষদের ৮ জন গবেষক ও শিক্ষার্থী। তারা শুধু গবেষণাই করেননি, বরং শিক্ষার্থীদের মাধ্যমে পরিবেশবান্ধব পণ্য যেমন সুপারি পাতার বাটি, চামচ, কলম, ফুডগ্রেড কাগজের কাপ তৈরির উদ্যোগ নিয়েছেন এবং চট্টগ্রামের সুপারশপ ও খাবারের দোকানগুলোতে প্রায় ২০ হাজার পরিবেশবান্ধব কাটলারি বিতরণ করেছেন।
এছাড়া স্কুলভিত্তিক সচেতনতামূলক কার্যক্রমে অংশ নেয় ২ হাজারের বেশি শিক্ষার্থী, যারা ‘অডিট বিন’ ও ‘লিটার কালেকশন’ প্রোগ্রামের মাধ্যমে নিজেদের স্কুলকে প্লাস্টিকমুক্ত করতে এগিয়ে এসেছে।
গবেষকরা বলছেন, এই উদ্যোগ শুধু শহরের বর্জ্য সমস্যা সমাধান নয়, বরং প্লাস্টিকের বিকল্প পণ্যের মাধ্যমে নতুন কর্মসংস্থানেরও পথ খুলে দিচ্ছে।