প্রকাশিত: : জুন ১২, ২০২৫, ০২:২০ পিএম
লন্ডন সফরকালে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে রাজি হননি যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমার। যুক্তরাজ্যের সংবাদমাধ্যম ফিন্যান্সিয়াল টাইমসের খবরে বলা হয়েছে, শেখ হাসিনার শাসনামলে বাংলাদেশ থেকে পাচার হওয়া বিপুল পরিমাণ অর্থ—যার বড় একটি অংশ যুক্তরাজ্যে আছে বলে অভিযোগ—ফিরিয়ে আনতে আন্তর্জাতিক সহযোগিতা চাইতে লন্ডন সফরে রয়েছেন ড. ইউনূস। তবে তার অনুরোধ সত্ত্বেও এখন পর্যন্ত স্টারমারের পক্ষ থেকে কোনো বৈঠকের সময় নির্ধারিত হয়নি।
ফিন্যান্সিয়াল টাইমসকে ড. ইউনূস বলেন, বিগত শাসনামলে `চুরি` হওয়া অর্থ খুঁজে বের করতে বাংলাদেশের নতুন সরকারকে সহায়তা করতে যুক্তরাজ্যের নৈতিকভাবে `বাধ্যবাধকতা` উপলব্ধি করা উচিত। চুরি হওয়া এই অর্থের একটি বড় অংশ এখন যুক্তরাজ্যে আছে বলে অভিযোগ রয়েছে।
তবে ড. ইউনূস জানান, স্টারমার এখনও তার সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে রাজি হননি।
`তার সঙ্গে আমার সরাসরি কথা হয়নি,` বলেন ড. ইউনূস। তবে প্রধান উপদেষ্টা এ-ও বলেন, স্টারমার যে বাংলাদেশের এই প্রচেষ্টায় সহায়তা করবেন, এ বিষয়ে তার `কোনো সন্দেহ নেই`।
এর আগে গতকাল প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম দাবি করেন, স্টারমার যুক্তরাজ্যে না থাকায় তারা তার সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে পারেননি। তার এ বক্তব্য সমালোচনার মুখে পড়ে। সোশ্যাল মিডিয়ায় অনেকেই বলেন, এ দাবি সম্পূর্ণ অসত্য।
এদিকে ড. ইউনূস এফটিকে বলেন, তার লক্ষ্য শুধু বাংলাদেশের চুরি হওয়া অর্থ উদ্ধার করা।
যুক্তরাজ্য সরকারের কর্মকর্তারা এফটিকে নিশ্চিত করেছেন, আপাতত ড. ইউনূসের সঙ্গে সাক্ষাৎ করার কোনো পরিকল্পনা নেই স্টারমারের। এর বাইরে তারা আর কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।
ড. ইউনূস বলেন, যুক্তরাজ্য সরকার ইতিমধ্যে পাচার হওয়া অর্থ উদ্ধারে সহায়তা করছে; এ সহায়তার বিষয়ে যুক্তরাজ্যের `আইনি ও...নৈতিকভাবে` বাধ্যবাধকতা অনুভব করা উচিত।
তিনি বলেন, এই সফরের লক্ষ্য ছিল যুক্তরাজ্যের কাছ থেকে `আরও উদ্যমী` সহায়তা আদায় করা।
স্টারমারের জন্য ড. ইউনূসের দুর্নীতিবিরোধী অভিযান কেন অস্বস্তিকর
ফিন্যান্সিয়াল টাইমসের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশে শেখ হাসিনা ও আওয়ামী লীগের আর্থিক লেনদেন তদন্তের ফলে বেশ কয়েকবার যুক্তরাজ্যে কিয়ার স্টারমারের দল লেবার পার্টির ওপর নেতিবাচক প্রভাব পড়ার হুমকি তৈরি হয়েছে।
দুর্নীতির অভিযোগে চলতি বছরের জানুয়ারিতে যুক্তরাজ্যের তৎকালীন দুর্নীতিবিরোধী মন্ত্রীর পদ থেকে ইস্তফা দিতে বাধ্য হন স্টারমারের ঘনিষ্ঠ মিত্র টিউলিপ সিদ্দিক।
এসব অভিযোগের মধ্যে ছিল, টিউলিপ আওয়ামী লীগ ঘনিষ্ঠ ব্যক্তিদের কাছ থেকে আর্থিক ও সম্পত্তিগত সহায়তা পেয়েছেন। শেখ হাসিনা তার খালা।
এখনও এমপি পদে বহাল থাকা টিউলিপ অবশ্য তার বিরুদ্ধে ওঠা সব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন, মন্ত্রিত্ব ছেড়ে দিয়েছেন।
চলতি সপ্তাহেই তিনি চিঠি পাঠিয়ে ড. ইউনূসের সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে চেয়েছেন।
চিঠিতে টিউলিপ বলেছেন, তিনি `ভুল বোঝাবুঝি` দূর করতে চান।
তবে ড. ইউনূস বলে দিয়েছেন, তিনি টিউলিপের সঙ্গে সাক্ষাৎ করবেন না।
টিউলিপের বিরুদ্ধের দুর্নীতির অভিযোগের তদন্তের বিষয়ে তিনি বলেন, `এটা একটা আইনি বিষয়...একটা আইনি প্রক্রিয়া। এটা আমার ব্যক্তিগতভাবে যুক্ত হওয়ার বিষয় নয়।`
ড. ইউনূস আরও বলেন, ১৬ বছরের শাসনকালে শেখ হাসিনা `ক্ষমতাকে নিজের আত্মীয়স্বজন ও সহযোগীদের অর্থ লুটের সুযোগে পরিণত করেছেন`। একে `বিশাল লুটপাটের প্রক্রিয়া` বলে অভিহিত করেন প্রধান উপদেষ্টা।
বাংলাদেশি কর্তৃপক্ষের হিসাব অনুসারে, শেখ হাসিনার শাসনামলে প্রায় ২৩৪ বিলিয়ন ডলার বিদেশে পাচার হয়েছে, এবং এর বড় অংশের গন্তব্য ছিল যুক্তরাজ্য।
এদিকে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস জানিয়েছেন, যুক্তরাজ্য ছাড়াও কানাডা, সিঙ্গাপুর, ক্যারিবীয় অঞ্চল ও মধ্যপ্রাচ্যেও বিপুল পরিমাণ অর্থ পাচার হয়েছে বলে তারা মনে করেন।
তিনি বলেন, যুক্তরাজ্য সফর `কেবল শুরু`, আরও অনেক দেশ সফর করার পরিকল্পনা রয়েছে তার।
যুক্তরাজ্যের ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান, আর্থিক প্রতিষ্ঠান, পুলিশ ও গোয়েন্দা সংস্থাসহ `সবদিক থেকেই` সহায়তা পেতে চায় তার প্রশাসন।
`গ্রেট ব্রিটেনের জনগণের সহায়তা দরকার আমাদের,` বলেন তিনি।
তার দল এখনও আশা করছে, যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করা সম্ভব হবে।