প্রকাশিত: : জুন ১, ২০২৫, ০৭:১৬ পিএম
রিকতা আক্তার বানু পেশায় একজন নার্স। কিন্তু তার সবচেয়ে বড় পরিচয় তিনি একজন মা ও অদম্য নারী। যিনি সন্তানের জন্য বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চলের একটি প্রত্যন্ত এলাকায় ব্যাপক পরিবর্তন এনেছেন। কুড়িগ্রামের চিলমারী উপজেলার ব্রহ্মপুত্র নদের কোলঘেঁষা ছোট্ট গ্রাম রমনা সরকারপাড়া।
রিকতার অসাধারণ যাত্রা শুরু এই গ্রামেই।
রিকতার ছোট মেয়ে অটিজম ও সেরিব্রাল পালসিতে আক্রান্ত। মেয়েকে স্থানীয় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ভর্তি করাতে চেয়েছিলেন তিনি। কিন্তু কর্তৃপক্ষ তাকে ফিরিয়ে দেয়।
এ ঘটনার পর তিনি ভেঙে পড়েছিলেন। কিন্তু অদম্য মানসিকতার রিকতা সে সময় নিয়েছিলেন এক সাহসী সিদ্ধান্ত।
২০০৯ সালে তিনি প্রতিষ্ঠা করেন ‘রিকতা আক্তার বানু- (লুৎফা) বুদ্ধি প্রতিবন্ধী বিদ্যালয়’। শুধু নিজের মেয়েকে পড়াবেন বলে নয়; বরং তার মেয়ের মতো সমাজে অবহেলিত বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিশুদের কথা ভেবেছিলেন তিনি।
ভাগ্যিস, তিনি হাল ছাড়েননি— আজ সেই সাহসই আলো ছড়াচ্ছে তিন শতাধিক বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিশুর জীবনে। এটি এমন একটি স্কুল, যেখানে সব শিশুদের জন্য সমান ভালোবাসা ও যত্ন আছে। আর আছে শেখার সুযোগ।
রিকতার বেশি কিছু ছিল না। কিন্তু যা ছিল তিনি স্কুলের জন্য উজাড় করে দিয়েছেন।
আর তা হলো: একজন মায়ের নিঃস্বার্থ ভালোবাসা, একজন পেশাদার নার্সের প্রত্যয়, আর এক বুক আশা। তিনি চেয়েছিলেন, বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিশুরা যেন কারও বোঝা না হয়, কেউ যেন তাদের উপেক্ষা না করে এবং তারা যেন দেশের সম্পদ হিসেবে গড়ে ওঠে।
প্রতিবন্ধী শিশুদের নিয়ে তার এই অনন্য যাত্রা বিশ্বজুড়ে মানুষের মনে দাগ কেটেছে। এমন উদ্যোগের জন্যে ২০২৪ সালে বিজ্ঞান, স্বাস্থ্য ও প্রযুক্তি বিভাগে বিবিসির ১০০ জন প্রেরণাদায়ী ও প্রভাবশালী নারীর তালিকায় জায়গা করে নেন রিকতা, যা তার অদম্য প্রচেষ্টার আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি।
এবারের মা দিবসে রিকতা ও তার স্কুলের পাশে দাঁড়িয়েছে জনপ্রিয় ব্র্যান্ড ডেটল। একজন মা যেভাবে তার সন্তানকে যত্ন ও ভালোবাসায় আগলে রাখেন ঠিক তেমনই রিকতার স্কুলের বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিশুদের সুরক্ষায় এগিয়ে এসেছে ডেটল। এর মাধ্যমে স্কুলটিতে এক বছরের জন্য হাইজিন পণ্য সরবরাহ করা হয়েছে, যা সেখানে পরিচ্ছন্ন ও স্বাস্থ্যসম্মত পরিবেশ বজায় রাখতে ভূমিকা পালন করবে। এছাড়াও টয়লেট নির্মাণে ও সার্বিক হাইজিন ব্যবস্থাপনার জন্য ৫০ হাজার টাকা অনুদানও দিয়েছে ডেটল।
রেকিট বেনকিজার (বাংলাদেশ) পিএলসির ব্র্যান্ড ম্যানেজার মো. আমিন-উল-বশির আলভী বলেন, ‘রিকতা আক্তার বানুর পথচলা ও একজন মায়ের অটল সংকল্প থেকেই সত্যিকারের পরিবর্তন শুরু হয়। এমন মহৎ উদ্যোগের অংশ হতে পেরে আমরা গর্বিত। আমরা চাই, এই স্কুলের শিশুরা যেন নিরাপদ ও স্বাস্থ্যসম্মত পরিবেশে শেখার ও বেড়ে ওঠার সুযোগ পায়।’
রেকিট বেনকিজার (বাংলাদেশ) পিএলসি’র সিনিয়র মার্কেটিং ম্যানেজার সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘ডেটল সবসময় সুরক্ষার কথা বলে। আর সুরক্ষার বিষয়টি মায়ের চেয়ে ভালো আর কে-ই বা বোঝেন? এবারের মা দিবসে, রিকতা আক্তার বানুর পাশে থাকতে পেরে আমরা গর্বিত। তিনি এমন একজন মা যিনি অসংখ্য শিশুর কথা ভেবেছেন। তাদের জন্য নিরাপদ আশ্রয় তৈরি করেছেন। এই উদ্যোগটি রিকতার মতো প্রতিটি মায়ের অদম্য মানসিকতা ও নিঃস্বার্থ মমতার প্রতি আমাদের সম্মান জানানোর ক্ষুদ্র প্রয়াস।’
বাংলাদেশে ৭৫ বছর ধরে ডেটল আমাদের প্রিয়জনদের জীবাণুজনিত অসুস্থতা থেকে সুরক্ষা দিয়ে আসছে এবং আমাদের জীবনকে সম্ভাবনার পথে এগিয়ে যেতে সহায়তা করছে। ডেটল বাংলাদেশে ৭৫ বছরে পদার্পণ করেছে। রিকতা আক্তার বানুর মতো মানুষের অবদানকে সম্মান জানাতে পারছি—যিনি শুধু নিজের সন্তানকেই নয়, তার স্বপ্ন ও সমাজের অনেক বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিশুকেও সুরক্ষা দিয়েছেন তার অদম্য উৎসাহ ও নিবেদন দিয়ে- বিষয়টা আমাদের জন্য অনেক গর্বের। এই বছরের শুরুতে বই প্রেমী জিয়াউল হকের গল্প তুলে ধরা হয়েছিল ও ডেটল এর পক্ষ থেকে তাকে সহযোগিতা করা হয়েছিল।