সোমবার, ০৮ ডিসেম্বর, ২০২৫

নির্বাচনে সাংবাদিকদের নিরাপত্তা ঝুঁকি আগের তুলনায় বাড়বে, মোকাবিলার প্রস্তুতি অপ্রতুল

টিএনসি ডেস্ক

প্রকাশিত: : ডিসেম্বর ৭, ২০২৫, ০৩:৩১ পিএম

আগামী জাতীয় নির্বাচনে সাংবাদিকদের শারীরিক ও ডিজিটাল ঝুঁকি উল্লেখযোগ্যভাবে বাড়তে পারে বলে সতর্ক করেছে ডিজিটালি রাইটের গবেষণা। ২০১ জন সাংবাদিকের ওপর পরিচালিত জরিপে অধিকাংশই হামলা, হয়রানি, অপতথ্য ও হ্যাকিংয়ের আশঙ্কা প্রকাশ করেন, বিশেষ করে নারী সাংবাদিকদের ঝুঁকি আরও তীব্র বলে গবেষণায় উঠে এসেছে।

নির্বাচনে সাংবাদিকদের নিরাপত্তা ঝুঁকি আগের তুলনায় বাড়বে, মোকাবিলার প্রস্তুতি অপ্রতুল

আগের নির্বাচনগুলোর চেয়ে আসন্ন জাতীয় নির্বাচনে সাংবাদিকদের জন্য শারীরিক ও নিরাপত্তা ঝুঁকি বাড়বে। গবেষণা প্রতিষ্ঠান ডিজিটালি রাইট পরিচালিত এক গবেষণায় এ আশঙ্কা করা হয়েছে।

শনিবার (৬ ডিসেম্বর) ঢাকার দ্য ডেইলি স্টার সেন্টারে আয়োজিত এক গোলটেবিল বৈঠকে গণমাধ্যমের সম্পাদক ও জ্যেষ্ঠ সাংবাদিকদের উপস্থিতিতে গবেষণার মূল ফলাফল উপস্থাপন করেন ডিজিটালি রাইটের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মিরাজ আহমেদ চৌধুরী।

‘হাই রিস্ক, লো প্রিপেয়ার্ডনেস: জার্নালিস্ট সেফটি ইন ২০২৬ ইলেকশন’ শিরোনামের গবেষণায় ১৯টি জেলার ২০১ জন সাংবাদিকের ওপর জরিপ চালানো হয় এবং ১০টি নিবিড় সাক্ষাৎকার নেওয়া হয়। জরিপে অংশ নেওয়া সাংবাদিকদের ৮৯ শতাংশ আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন, নির্বাচনের সংবাদ সংগ্রহের সময় তারা শারীরিক আক্রমণ বা মারধরের শিকার হতে পারেন। ৭৬ শতাংশ সাংবাদিক মৌখিক হয়রানি এবং ৭১ শতাংশ ভীতি প্রদর্শনকে প্রধান ঝুঁকি বলে মনে করেন। নারী সাংবাদিকদের জন্য এ ঝুঁকি আরও বেশি তীব্র। তাদের ৫০ শতাংশ যৌন হয়রানি এবং ৪০ শতাংশ যৌন আক্রমণ হবে বলে আশঙ্কা করেছেন।

নির্বাচন কাভার করার সময় শারীরিক হুমকির পাশাপাশি ডিজিটাল হয়রানিও বাড়ার আশঙ্কা করেন জরিপে অংশ নেয়া সাংবাদিকেরা। ৭৫ শতাংশ সাংবাদিক বলেছেন, তাদের বা তাদের সংবাদমাধ্যমের বিরুদ্ধে অপতথ্য বা ডিসইনফরমেশন ছড়ানোর আশঙ্কা বেশি। ৬৫ শতাংশের কাছে হ্যাকিং একটি বড় ঝুঁকি। নারী সাংবাদিকেরা অনলাইনে হয়রানি ও নজরদারি নিয়ে বেশি উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন।

উত্তরদাতাদের অর্ধেকেরও বেশি মনে করেন, তাদের বিশ্বাসযোগ্যতা নষ্ট করার উদ্দেশ্যে মানহানিকর প্রচারণাও চালানো হতে পারে।

বেশিরভাগ সংবাদমাধ্যমেরই এ ঝুঁকি মোকাবেলার জন্য যথেষ্ট প্রস্তুতি নেই। জরিপের ফল বলছে, নিরাপত্তা হুমকি মোকাবিলার জন্য সুনির্দিষ্ট কোনো ব্যক্তি বা কাঠামো তাদের প্রতিষ্ঠানে নেই। মাত্র ২৪ শতাংশ উত্তরদাতা তাদের নিয়োগকর্তার কাছ থেকে নিরাপত্তা সরঞ্জাম বা প্রশিক্ষণ পেয়েছেন। ৭৭ শতাংশ জানিয়েছেন তাদের সংবাদমাধ্যমে ডিজিটাল নিরাপত্তা নীতিমালা নেই।

৯০ শতাংশের বেশি উত্তরদাতা বলেছেন, শারীরিক নিরাপত্তার ক্ষেত্রে রাজনৈতিক দল ও কর্মীরাই ঝুঁকির প্রধান উৎস। নারী ও আঞ্চলিক সাংবাদিকেরা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী সংস্থা এবং উগ্র ধর্মীয় গোষ্ঠীগুলোকেও উল্লেখযোগ্য হুমকি হিসেবে উল্লেখ করেছেন।

সাংবাদিকেরা মনে করছেন, রাজনৈতিক লেবেলিং (পরিচয় আরোপ করা), গণমাধ্যমের ওপর আস্থার অভাব, উগ্রবাদ, গণপিটুনি, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর দুর্বলতা এবং সাংবাদিকদের লক্ষ্য করে ছড়ানো অপতথ্য- এবারের নির্বাচনে ঝুঁকি বাড়ার মূল কারণ।

গবেষণাটিতে নির্বাচনে সাংবাদিকদের নিরাপত্তা জোরদার করার জন্য বেশ কয়েকটি পদক্ষেপের কথা বলা হয়েছে, যেমন- দীর্ঘমেয়াদী শারীরিক ও ডিজিটাল নিরাপত্তা প্রশিক্ষণ, সংবাদমাধ্যমে সুস্পষ্ট নিরাপত্তা প্রোটোকল প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন, জেন্ডার-সংবেদনশীল সুরক্ষা ব্যবস্থা এবং জরুরি ও আইনি সহায়তা পাওয়ার উন্নত সুযোগ।

আলোচনায় অংশ নেন ঢাকা ট্রিবিউনের সম্পাদক রিয়াজ আহমেদ, টাইমস অব বাংলাদেশের সম্পাদক এম আবুল কালাম আজাদ, বার্তাসংস্থা এএফপির ব্যুরো প্রধান শেখ সাবিহা আলম, সমকালের সহযোগী সম্পাদক জাকির হোসেন, যমুনা টেলিভিশনের অ্যাসাইনমেন্ট এডিটর রোকসানা আঞ্জুমান নিকোল, নিউ এজের প্রধান প্রতিবেদক মুস্তাফিজুর রহমান, বিডি নিউজের প্রধান প্রতিবেদক জাহিদুল কবির, আরটিভির প্রধান বার্তা সম্পাদক ইলিয়াস হোসেন, একাত্তর টেলিভিশনের বিশেষ সংবাদদাতা শাহনাজ শারমিন প্রমুখ। ফোয়ো মিডিয়া ইনস্টিটিউটের প্রকল্প সমন্বয়ক (এশিয়া) মারিয়া পিটারসন অনলাইনে গোলটেবিল আলোচনায় যুক্ত হন।

Link copied!