শনিবার, ০৮ নভেম্বর, ২০২৫

ব্র‍্যাক মাইক্রোফাইন্যান্সের ‍‍`সিপিসি গোল্ড‍‍` অর্জন

টিএনসি ডেস্ক

প্রকাশিত: : নভেম্বর ৬, ২০২৫, ০৯:১৬ পিএম

ব্র্যাক মাইক্রোফাইন্যান্স কর্মসূচি গ্রাহক সুরক্ষা ও দায়িত্বশীল আর্থিক সেবায় আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি পেয়েছে। বাংলাদেশে একমাত্র প্রতিষ্ঠান হিসেবে ব্র্যাক অর্জন করেছে মর্যাদাপূর্ণ ‘ক্লায়েন্ট প্রটেকশন সার্টিফিকেশন (সিপিসি) গোল্ড’ সম্মান, যা প্রদান করেছে আন্তর্জাতিক সংস্থা মাইক্রোফাইনানজা রেটিং (এমএফআর)।

ব্র‍্যাক মাইক্রোফাইন্যান্সের ‍‍`সিপিসি গোল্ড‍‍` অর্জন

গ্রাহকদের সর্বোচ্চ সুরক্ষা নিশ্চিতের স্বীকৃতি হিসেবে বাংলাদেশে একমাত্র সংস্থা হিসেবে আন্তর্জাতিক মর্যাদাপূর্ণ ‍‍`ক্লায়েন্ট প্রটেকশন সার্টিফিকেশন (সিপিসি) গোল্ড‍‍` অর্জন করেছে ব্র্যাক। আন্তর্জাতিক সংস্থা ‍‍`মাইক্রোফাইনানজা রেটিং (এমএফআর)‍‍` এর পক্ষ থেকে সম্প্রতি ব্র্যাকের মাইক্রোফাইন্যান্স কর্মসূচিকে এই স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে, যা গ্রাহকদের সুরক্ষা ও দায়িত্বশীল আর্থিক সেবায় সর্বোচ্চ বৈশ্বিক স্বীকৃতি।
এ উপলক্ষ্যে রাজধানীর মহাখালীর ব্র্যাক সেন্টারে বৃহস্পতিবার, ৬ই নভেম্বের, ২০২৫ তারিখে এক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।
অনুষ্ঠানে জানানো হয়, নির্ধারিত আটটি আন্তর্জাতিক নীতিমালার ভিত্তিতে সিপিসি গোল্ড সার্টিফিকেশনটি প্রদান করা হয়। গ্রাহকবান্ধব পণ্য সেবা, অতিরিক্ত ঋণ প্রতিরোধ, স্বচ্ছতা, ন্যায্য মূল্য নির্ধারণ, গ্রাহকের তথ্যের গোপনীয়তা রক্ষা এবং অভিযোগ নিষ্পত্তির মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলোকে মানদণ্ড হিসেবে ধরা হয়।
ব্র্যাকের মাইক্রোফাইন্যান্স কর্মসূচি গত পাঁচ দশক ধরে বাংলাদেশের আর্থিক অন্তর্ভুক্তির অগ্রযাত্রায় অগ্রণী ভূমিকা পালন করছে। এই কর্মসূচি দেশের ৪ কোটিরও বেশি মানুষের কাছে পৌঁছেছে, যার মধ্যে ৯০ শতাংশই নারী। মাইক্রোফাইন্যান্স কর্মসূচির অর্থায়নে লাখো ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা, কৃষক ও নারীর ক্ষমতায়নের মাধ্যমে তাদের জীবনে এসেছে ইতিবাচক পরিবর্তন।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে মাইক্রোক্রেডিট রেগুলেটরি অথরিটির (এমআরএ) নির্বাহী ভাইস চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ হেলাল উদ্দিন বলেন, সারা বিশ্বে বৈদেশিক সহায়তা কমছে। এই প্রেক্ষাপটে স্থানীয় উদ্যোগগুলোর সম্প্রসারণ অপরিহার্য হয়ে পড়েছে। প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর অফুরন্ত সম্ভাবনাকে বাস্তবে রূপ দিতে আর্থিক খাতে তাদের অন্তর্ভুক্তির সুযোগ সৃষ্টি করা জরুরি। বিশেষ করে ক্ষুদ্র ঋণগ্রহীতারা প্রায়ই উপেক্ষিত হন। একটি আদর্শ প্রতিষ্ঠান হিসেবে ব্র্যাক তার কার্যক্রমগুলো পরিচালনা করছে বলে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ব্র্যাকের কর্মসূচিগুলো আরো বিস্তৃত পরিসরে নিয়ে যাওয়ার সুযোগ রয়েছে।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের অতিরিক্ত সচিব মোঃ সাঈদ কুতুব বলেন, এ ধরনের একটি আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি শুধু ব্র্যাকের জন্যই নয়, পুরো দেশের জন্য গৌরবের বিষয়। তিনি বলেন, মাইক্রোফাইন্যান্স খাতের নানা চ্যালেঞ্জের মধ্যেও ব্র্যাক সাধারণ মানুষকে সেবা দিয়ে আসছে। ব্র্যাকের এই অর্জন সেই গুরুত্বপূর্ণ অবদানেরই স্বীকৃতি।
ব্র্যাকের নির্বাহী পরিচালক আসিফ সালেহ বলেন, ‍‍`একটা বড় অর্জনের সাথে সাথে দায়-দায়িত্বও বেড়ে যায়। দেশের শীর্ষস্থানীয় প্রতিষ্ঠান হিসেবে ব্র্যাক মাইক্রোফাইন্যান্সের অনেক দায়িত্ব রয়েছে এবং সেগুলো পালনে আমরা প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। ব্র্যাক মাইক্রোফাইন্যান্স দীর্ঘদিন ধরে প্রচলিত ব্যাংকিং সেবার বাইরে থাকা মানুষদের সেবা দিয়ে আসছে। আর্থিক পরিসেবা সবার জন্যই অত্যন্ত প্রয়োজনীয় বিষয়। আমাদের লক্ষ্য এই সেবাকে আরও বিস্তৃত করা-বিশেষত দুর্গম এলাকায় এবং যাদের পক্ষে কথা বলার বা কাজ করার কেউ নেই সেইসব মানুষকে সহায়তা করা। আমরা সততা এবং জবাবদিহিতার সর্বোচ্চ মান বজায় রেখে আর্থিক অন্তর্ভুক্তির এই প্রচেষ্টাকে এগিয়ে নিতে চাই।"
তিনি আরও যোগ করেন, ‍‍`আর্থিক অন্তর্ভুক্তির পাশাপাশি ব্র্যাক সারা দেশে সামাজিক উন্নয়নের ক্ষেত্রেও ব্যাপকভাবে কাজ করছে-স্বাস্থ্য, শিক্ষা, যুবদের দক্ষতা উন্নয়ন এবং চরম দারিদ্র্য দূরীকরণের মতো গুরুত্বপূর্ণ খাতগুলোতে। আমাদের লক্ষ্য হলো মানুষকে শুধু আর্থিকভাবে নয়, সামগ্রিকভাবে সক্ষম করে তোলা, যাতে তারা নিজেদের জীবনমান উন্নত করতে পারে এবং একটি মর্যাদাপূর্ণ জীবনযাপন করতে পারে।‍‍`
অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্যে ব্র্যাক মাইক্রোফাইন্যান্স কর্মসূচির ঊর্ধ্বতন পরিচালক অরিঞ্জয় ধর বলেন, ২০২৫ সালে সারা বিশ্বে মাত্র আটটি সংস্থা এই স্বীকৃতি অর্জন করেছে। এই অর্জনের নেপথ্যে ছিলেন ব্র্যাকের মাঠকর্মীরা। তাদের পরিশ্রম, সততা ও অক্লান্ত পরিশ্রম ছাড়া এই সফলতা অর্জন করা সম্ভব হতো না। এই অর্জনের জন্য তিনি ব্র্যাক মাইক্রোফাইন্যান্সের মাঠকর্মীদের ধন্যবাদ জানান।
উন্মুক্ত আলোচনা পর্বে অনুষ্ঠানে আগত অতিথি এবং ব্র্যাকের কর্মকর্তারা আমন্ত্রিত সাংবাদিকদের নানা প্রশ্নের উত্তর দেন। এ সময় দেশের মাইক্রোফাইন্যান্স খাত নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়।
অনুষ্ঠানে ব্র্যাকের পক্ষ থেকে ঊর্ধ্বতন পরিচালক কেএএম মোর্শেদ, চিফ ফাইনানসিয়াল অফিসার সাব্বির আহমেদ, পরিচালক এএফএম শহীদুর রহমান, মাফরুজা খান ও অবসরপ্রাপ্ত ব্রিগেডিয়ার জেনারেল রাকিব উদ্দিন আহমেদ এবং সহযোগী পরিচালক নাফিউল হাসান, শরিফুল ইসলাম হাসান, শাশ্বতী বিপ্লব, মোঃ বেলায়েত হোসেন, অমিত কান্তি সরকার এবং মাইক্রোফাইন্যান্স-এর চিফ অপারেটিং অফিসার মোঃ রিয়াজ উদ্দিনসহ অন্য কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
উল্লেখ্য, ব্র্যাক মাইক্রোফাইন্যান্স কর্মসূচি দ্বিতীয়বারের মতো এই স্বীকৃতি লাভ করলো। এর আগে ২০১৬ সালে ব্র্যাক প্রথমবারের মতো সিপিসি গোল্ড সার্টিফিকেশন লাভ করে। বাংলাদেশে একমাত্র প্রতিষ্ঠান হিসেবে ব্র্যাকের এই স্বীকৃতি পুরো দেশের মাইক্রোফাইন্যান্স খাতের জন্য একটি গৌরবময় অর্জন।
এই অর্জন ব্র্যাক মাইক্রোফাইন্যান্স কর্মসূচির আওতায় ১ কোটি ৪০ লাখেরও বেশি গ্রাহককে নিরাপদ, ন্যায্য এবং সম্মানজনক সেবা প্রাপ্তির নিশ্চয়তা দেয়। এটি প্রমাণ করে যে দায়িত্বশীল মাইক্রোফাইন্যান্সে ব্র্যাক এখন বিশ্বমানের নেতৃত্বের আসনে রয়েছে। গোল্ড লেভেল সিপিসি ব্র্যাকের নেতৃত্বের জন্য একটি আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি।
ধন্যবাদসহ,
গোলাম কিবরিয়া
লিড, মিডিয়া রিলেশনস কমিউনিকেশনস, ব্র্যাক
মোবাইল: +৮৮০১৩১৩৪০৭২৮৪, হোয়াটসঅ্যাপ: +৮৮০১৫৫৩৩০১১৮৮
ই-মেইল: kibria.golam@brac.net

Link copied!