প্রকাশিত: : মে ৩১, ২০২৫, ০৩:২৩ পিএম
ছবি: অবজারভার বিডি
জুলাই ২০২৪-এর অভ্যুত্থানে আহতদের একটি বড় অংশ ভয়াবহ মানসিক সংকটে ভুগছেন। নতুন এক গবেষণায় উঠে এসেছে, আহতদের ৮২ দশমিক ৫ শতাংশ বিষণ্নতায় আক্রান্ত, আর ৬৪ দশমিক ১ শতাংশ ভুগছেন আঘাতজনিত মানসিক ব্যাধি (পিটিএসডি)-তে। মানসিক স্বাস্থ্যের এই সংকট রুয়ান্ডার গণহত্যার বেঁচে যাওয়া ব্যক্তিদের চেয়েও গুরুতর।
প্রতিষ্ঠিত মেডিকেল জার্নাল কিউরিয়াস-এ ১৮ মে প্রকাশিত এ গবেষণা পরিচালনা করেছে বাংলাদেশ মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএমইউ), ঢাকা মেডিকেল কলেজ ও পাবনা মানসিক হাসপাতালের গবেষক দল। গবেষণাটি সেপ্টেম্বর ২০২৪ থেকে ফেব্রুয়ারি ২০২৫ পর্যন্ত তিনটি সরকারি হাসপাতালের ২১৭ জন আহতকে নিয়ে পরিচালিত হয়।
গবেষণায় অংশগ্রহণকারীদের ৯৭.২ শতাংশ ছিলেন পুরুষ এবং ৮৯.৪ শতাংশ গুলিবিদ্ধ। অংশগ্রহণকারীদের প্রায় অর্ধেকের বয়স ২০ থেকে ২৯ বছরের মধ্যে, এবং প্রায় ৩৯ শতাংশ ছিলেন শিক্ষার্থী। মাত্র ১.৪ শতাংশ ব্যক্তি আগেই কোনো মানসিক সেবার আওতায় ছিলেন।
গবেষণায় দেখা যায়:
১৯.৮% গুরুতর বিষণ্নতায়
৩৬.৪% মাঝারি মাত্রার বিষণ্নতায়
২০% মাঝারি গুরুতর পিটিএসডি-তে
৪.১% গুরুতর পিটিএসডি-তে আক্রান্ত
বলা হয়েছে, পিটিএসডি-তে আক্রান্ত ৯৯.৩ শতাংশ ব্যক্তিই বিষণ্নতায়ও আক্রান্ত। যারা গুরুতর শারীরিক ক্ষতির শিকার হয়েছেন, দ্রুত চিকিৎসা পেলেও তারা পিটিএসডি থেকে রেহাই পাননি। ট্রমার তীব্রতা, সামাজিক সহায়তার অভাব এবং অনিশ্চিত ভবিষ্যৎ তাদের মানসিক অবস্থা আরও দুর্বল করে তুলেছে।
গ্রামীণ অংশগ্রহণকারীদের মানসিক স্বাস্থ্য পরিস্থিতি ছিল শহরবাসীদের তুলনায় বেশি উদ্বেগজনক। গবেষকদের মতে, গ্রামাঞ্চলে মানসিক স্বাস্থ্যসেবা, সামাজিক নিরাপত্তা এবং আর্থিক স্থিতিশীলতা কম থাকায় দীর্ঘমেয়াদি মানসিক জটিলতা তৈরি হচ্ছে।
গবেষক দলের প্রধান, বিএমইউ-এর মনোরোগবিদ্যা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ শামসুল আহসান বলেন, “দীর্ঘ মেয়াদে বিষণ্নতায় আক্রান্ত ব্যক্তিদের আত্মহত্যার ঝুঁকি অনেক বেড়ে যায়। তারা জীবনের অর্থ হারিয়ে ফেলে, এবং বেঁচে থাকা ও মৃত্যুর মধ্যে পার্থক্য করতে পারে না।”
তিনি আরও বলেন, “এই মানসিক সংকট যদি এখনই সঠিকভাবে মোকাবিলা না করা হয়, তাহলে তা পরিবার ও সমাজজুড়ে দীর্ঘমেয়াদি অসুস্থতা তৈরি করতে পারে। এমনকি এক প্রজন্মের মধ্যেও ট্রমা ছড়িয়ে পড়তে পারে।”
গবেষকরা জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য পুনর্বাসন কর্মসূচি, ভুক্তভোগীদের নিবন্ধনব্যবস্থা চালু এবং সচেতনতামূলক প্রচার চালানোর আহ্বান জানিয়েছেন। একইসঙ্গে ভবিষ্যতের গবেষণায় দীর্ঘমেয়াদি তথ্য সংরক্ষণ ও সংস্কৃতিনির্ভর মানসিক স্বাস্থ্য হস্তক্ষেপ চালুর সুপারিশ করেছেন।